রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ , ১১ জিলকদ ১৪৪৫

খেলা
  >
ক্রিকেট

সিটি ক্লাবের অভিযোগের তির সিসিডিএম চেয়ারম্যানের দিকে

স্পোর্টস রিপোর্টার ২৪ এপ্রিল , ২০২৪, ১৬:১৫:১৬

573
  • আউট হয়েও নট আউট! ভিডিও থেকে নেয়া

শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত আইসিসির এলিট প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার মোর্শেদ আলী খান সুমন আইসিসি প্যানেল আম্পায়ার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন।

২৬ দিনের ব্যবধানে দুটি সুসংবাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে এই সুসংবাদ ম্লান হচ্ছে নিম্নমানের আম্পায়ার দিয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশনের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ পরিচালনায়।

জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সিসিডিএম-এর কালো তালিকাভুক্ত ৪ আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে উঠেছে সমালোচনা। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটলে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে মাত্র ৬ দিনের ব্যবধানে একই ভেন্যুতে দু'টি অবিচার হয়েছে।

গত ১৮ এপ্রিল বিকেএসপি থ্রি-তে আইন লঙ্ঘন করে রান আউটে কাটা পড়ে হাঁটুর ব্যথা নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরা শাইনপুকুর লোয়ার অর্ডার রবিউলের পরিবর্তে কনকাশন সাব হিসেবে মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ বোলিং করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল মাশরাফির লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ।

শাইনপুকুরের ফিজিও'র রিপোর্টের পক্ষে ওকালতি করেছেন ফিল্ড আম্পায়ার আসাদুর রহমান ও ইশতিয়াক আহমেদ এবং ম্যাচ রেফারি আসিফ হোসেন। এমন অন্যায় মানতে না পেরে মাথা গরম করে খেলে ম্যাচ হেরে প্রথম পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে লিজেন্ডস। 

সেই একই ভেন্যুতে গত মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রেলিগেশন লিগের ম্যাচে ঘটে গেছে ন্যাক্কারজনক ঘটনা। ৬ দিন আগে কৌশলে লিজেন্ডসের বিপক্ষে শাইনপুকুরের জয়ে শেষ দল হিসেবে গাজী গ্রুপ পেয়েছে সুপার লিগে খেলার সুযোগ।

৬ দিন পর সেই একই ভেন্যু বিকেএসপি-থ্রি-তে গাজী গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত আর একটি ক্লাব গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমীর অবনমন ঠেকানো হয়েছে বিশেষ মিশনে দক্ষ আম্পায়ারদের দিয়ে! 

রেলিগেশন লিগে সিটি ক্লাব-গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমীর প্রথম ম্যাচটি প্রিমিয়ার ডিভিশনে টিকে থাকতে দু'দলের জন্য কঠিন অগ্নি-পরীক্ষার। অথচ এই ম্যাচ পরিচালনায় আইসিসি প্যানেল আম্পায়ার কিংবা বিসিবির ন্যাশনাল পুলের কোনো আম্পায়ারকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। 

সাবেক ক্রিকেটার আলী আরমান রাজনের ছোট ভাই ৩১ বছল বয়সী কামরুজ্জামান লিমনের অভিজ্ঞতা বলতে ১টি প্রথম শ্রেনির এবং ১২টি লিস্ট এ ম্যাচ পরিচালনা। ৩৬ বছর বয়সী অমিত মজুদদার সেখানে একটিও প্রথম শ্রেনির ম্যাচ পরিচালনা করেননি। ৮টি লিস্ট 'এ' ম্যাচ পরিচালনা তার সম্বল।  

আশ্চর্য হলেও সত্য, বোল্ড আউট হয়ে গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমীর ব্যাটার যখন ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা শুরু করেছেন,  তখন আম্পায়ারের সিগন্যাল নো ‍! শর্ট মিড উইকেটে পরিষ্কার ক্যাচ দেখে সিটি ক্লাবের বোলার ফিল্ডাররা যখন উল্লাস করছেন, তখন লেগ আম্পায়ারের সিগন্যাল নট আউট! 

সাদেকুরের স্ট্যাম্পিং, শাহরিয়ার ও জয়রাজকে এলবিডাব্লুুউতে ফিরিয়ে দেয়াও ছিল বিতর্কিত।  আম্পায়ারদের অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ম্যাচ বন্ধ হয়েছে বেশ ক'বার। এমন অশান্ত ম্যাচে গাজী টায়ার্সের কাছে ৪১ রানে হেরে (গাজী টায়ার্স ১৭২/১০, সিটি ক্লাব ১৩১/১০) হেরে নিশ্চিত অবনমনের পথে পা বাড়িয়েছে। 

পরের ম্যাচে (২৬ এ্রপ্রিল) রূপগঞ্জ টাইগার্সের বিপক্ষে জিতলেও আশা ভরসা নেই। কারণ, রেলিগেশন লিগের শেষ ম্যাচে একই গ্রুপের পরিচালিত দুই ক্লাব গাজী টায়ার্স-রূপগঞ্জ টাইগার্সের ম্যাচটি যে সমঝোতার ভিত্তিতে সম্পন্ন হবে, তা বলাই বাহুল্য। 

শুধু প্রিমিয়ার ডিভিশন থেকে অবনমনই হয়নি, গোলযোগপূর্ণ ম্যাচে সিটি ক্লাবের ৭ ক্রিকেটারকে অর্থদণ্ড দিয়েছেন ম্যাচ রেফারি শওকতুর রহমান চিনু। একাদশে না থেকেও দণ্ড পেয়েছেন এক ক্রিকেটার!  

এই ম্যাচে পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিংয়ের জন্য সিসিডিএম চেয়ারম্যান সালাউদদ্দিন চৌধুরীকে অভিযুক্ত করেছেন সিটি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং বিসিবির কাউন্সিলর হোসেন মোল্লা-‘রেলিগেশন লিগের ম্যাচ প্রিমিয়ার ডিভিশনে টিকে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা এই লিগে বাংলাদেশের সেরা আম্পায়ারদের দিয়ে আম্পায়ারিংয়ের দাবি জানিয়ে সিসিডিএমকে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু সিসিডিএম চেয়ারম্যান তার নিজের দলকে রক্ষা করতে বিশেষ মিশন দিয়ে দুই বিতর্কিত আম্পায়ারকে পাঠিয়েছেন। সবাই জানেন সিসিডিএম চেয়ারম্যান গাজী গ্রুপের সিইও। উনি ওনার চাকরির স্বার্থে তার ক্লাবকে রক্ষা করেছেন। ম্যাচের আগে যখন শুনতে পেলাম কামরুজ্জামান লিমন এবং অমিত মজুমদারকে দিয়ে এই ম্যাচ পরিচালনা করা হবে, তখন আমরা বিস্মিত হয়েছি। এই দুই আম্পায়ারকে দিয়ে ম্যাচ পরিচালনা করলে আমরা খেলব না, এই প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম ম্যাচের আগে। যার জন্য নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট পর শুরু হয়েছে খেলা। এর পর ম্যাচে যা ঘটেছে তা নিন্দনীয়। আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত দেখে মনে হয়েছে, তারা যে করেই হোক সিটি ক্লাবকে হারানোর জন্য একটা মিশন নিয়ে এসেছেন।’

সিসিডিএম’র এই কমিটি ক্লাবসমূহের দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, তার জন্যও সিসিডিএম চেয়ারম্যানের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন হোসেন মোল্লা- ‘আগে সিসিডিএম-এ যারা লিগ চালাতেন, তারা খেলার মাঠে সময় দিতেন। তাদেরকে সব সময় পেতাম। এখন যিনি আছেন, তিনি কর্পোরেট চাকরির পর সময়ই তো দিতে পারছেন না। তাছাড়া আগে ম্যাচে আম্পায়ারিং চূড়ান্ত করা হতো ক্লাবসমূহের প্রস্তাবের ভিত্তিতে। এখন ক্লাবসমূহের দাবি আর গুরুত্ব পাচ্ছে না।’

প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করছে বলেও অভিযোগ তার-‘এক গ্রুপের মালিকানাধীন ৩টি ক্লাব, আর একটি গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় ২টি ক্লাব খেলছে প্রিমিয়ার ডিভিশনে। কর্পোরেট সিন্ডিকেটের কাছে অন্য ক্লাবগুলো অসহায় হয়ে পড়ছে দিনে দিনে।’ 

সিটি ক্লাব মাঠকে ক্রিকেট বোর্ড ব্যবহার করছে সেই নব্বই দশক থেকে। এই মাঠে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগের খেলা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই ক্লাবের মাঠে সিসিডিএম -এর ক্রিকেট আয়োজনে কৃজ্ঞতাবোধ না দেখে অবাক হয়েছেন সিটি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হোসেন মোল্লা- ‘এই মাঠে ক্রিকেট ম্যাচে যেনো কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়,তার জন্য শুরু থেকে আমি নিজে পাহারাদারের ভুমিকায় আছি। এর জন্য একটা টাকাও নেইনি। অথচ, সিসিডিএম থেকে তার কী প্রতিদান পেলাম।’ 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন