শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ , ৯ জিলকদ ১৪৪৫

ফিচার

বাংলাদেশে ‘বিচারপতি’ পদ নেই, আছে ‘বিচারক’

শহীদুল্লাহ ফরায়জী মে ২, ২০২৪, ১২:১৮:০৮

96
  • বাংলাদেশে ‘বিচারপতি’ পদ নেই, আছে ‘বিচারক’

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে ‘বিচারপতি’ নামে কোনো পদ নেই, আছে ‘বিচারক’। একটি মাত্র পদ আছে ‘প্রধান বিচারপতি’র  যিনি ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ নামে অভিহিত হবেন। এটি আমাদের সংবিধান নিশ্চিত করেছে।

কিন্তু আইন ও বিচার বিভাগের একটি প্রজ্ঞাপনে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর দ্বারা আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্টের বিচারকের মাঝে পার্থক্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নতুন তিন বিচারক নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে ২৪ এপ্রিল। খবর বাসসের।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে ৯৫ ( ১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারককে তাঁদের শপথ গ্রহণের তারিখ হইতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করেছেন।

উল্লেখ্য, প্রজ্ঞাপনে যা বলা হয়েছে-  ‘হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারককে তাঁদের শপথ গ্রহণের তারিখ হইতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ করেছেন।’ আপিল বিভাগে ‘বিচারপতি’ নামে কোনো পদ নেই।

প্রশ্ন উত্তাপিত হচ্ছে, সংবিধান মোতাবেক  তিনজন বিচারক নিয়োগ করা যায়, কোনোক্রমেই ‘বিচারপতি’ নিয়োগ করা যায় না।

আমাদের সংবিধান বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে ‘প্রধান বিচারপতি’ ও ‘বিচারক’ নামে পদ সংরক্ষণ করেছে। সংবিধানের ৯৪ (১)-এ বলা হয়েছে- ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট” নামে একটি সর্বোচ্চ আদালত থাকবে এবং আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ লইয়া তাহা গঠিত হইবে।’ আর ৯৪ (২)-এ বলা হয়েছে- ‘প্রধান বিচারপতি যিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নামে অভিহিত হইবেন এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যেরূপ সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজন বোধ করবেন, সেইরূপ সংখ্যক অন্যান্য বিচারক লইয়া সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হইবে।’  এবং ৯৪ (৩)- এ বলা হয়েছে- ‘প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগে নিযুক্ত বিচারকগণ কেবল উক্ত বিভাগে এবং অন্যান্য বিচারক কেবল হাইকোর্ট বিভাগে আসন গ্রহণ করিবেন।’

সুতরাং প্রধান বিচারপতি ছাড়া আপিল বিভাগে বিচারক নিযুক্ত হন, বিচারপতি নয়। এমনকি সংবিধানের ৯৪ (৪)-এ বলা হয়েছে- ‘এই সংবিধানের বিধানাবলী- সাপেক্ষে প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারক বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন।’ এখানে ‘প্রধান বিচারপতি’ এবং ‘বিচারক’ সুনির্দিষ্ট ক’রে দেওয়া হয়েছে । 

সংবিধানে প্রধান বিচারপতির পদ ছাড়া কোথাও বিচারপতি শব্দটি প্রয়োগ করা হয় নি, বিচারক শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে। সংবিধানে ইংরেজিতে Chief Justice এবং judge উল্লেখ করা হয়েছে। 

সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে- ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগ দান করিবেন। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন এককভাবে রাষ্ট্রপতি আর বিচারক নিয়োগ করবেন প্রধান বিচারপতির পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি।’

‘প্রধান বিচারপতির শপথের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক এবং সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিভাগের যে কোনো বিচারকের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি কর্তৃক শপথ পাঠ পরিচালিত হইবে।’ যা ১৪৮ অনুচ্ছেদে শপথ ও ঘোষণায় নিশ্চিত করা করেছে।

প্রধান বিচারপতি আর বিচারক নিযুক্ত হইয়া শপথ নিবেন। সুতরাং শুধুমাত্র সংবিধান নির্ধারিত যে পদের বিপরীতে সুনির্দিষ্ট ফরমে শপথ গ্রহণ, ঘোষণা এবং স্বাক্ষর দান করিবেন সেই পদকেই উল্লেখ করিত হইবে; এটাই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। 

উল্লেখ করা যায়, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকিবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশে একটা মন্ত্রিসভা থাকিবে। কোনোক্রমেই সাংবিধানিক এই পদসমূহকে যেমন পরিবর্তন করা যায় না বা অন্য কোনো নামে উল্লেখ বা চিহ্নিত করা যায় না, তেমনি বিচার বিভাগের কোনো সাংবিধানিক পদ-পদবীকেও পরিবর্তন করা যাবে না। সংবিধান সর্বোচ্চ আইন। এটা কোনো বিধিবিধান বা প্রথা দিয়ে প্রতিস্থাপনযোগ্য নয়। 

সরকারের বা আইন ও বিচার বিভাগের প্রজ্ঞাপনে সংবিধানকে সুরক্ষা দেওয়া হয়নি। ‘প্রধান বিচারপতি’ এবং ‘বিচারক’ প্রশ্নে সংবিধানের নির্দেশনা প্রতিপালন করাই হবে প্রজাতন্ত্রের সকলের কর্তব্য।

লেখক: গীতিকবি ও সংবিধান বিশ্লেষক 

faraizees@gmail.com 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন