বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ , ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নিউজজি ডেস্ক এপ্রিল ১৭, ২০২৪, ১১:২৪:১৫

46
  • সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ঢাকা: পূর্ব বাংলার প্রথম উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী। তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ১৮৬৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ীর বিখ্যাত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কীর্তিমান এ ব্যক্তিত্ব ১৯২৯ সালের ১৭ এপ্রিল দার্জিলিংয়ের ইডেন ক্যাসেলে মৃত্যুবরণ করেন। ১৬ শতকের শুরু দিকে তার প্রপিতামহ শাহ সৈয়দ খোদা বক্স টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে বসতি স্থাপন করেন। নওয়াব আলী শৈশবে গৃহশিক্ষকের কাছে আরবি, ফারসি ও বাংলা পড়েন। আনুষ্ঠানিক লেখাপড়ার শুরু রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে। পরে কলকাতার সেন্ট জোভিয়ার্স কলেজ থেকে এফএ পাস করেন।

১৮৯৫ থেকে ১৯০৪ সাল পর্যন্ত নওয়াব আলীর কর্মতৎপরতা ছিল সাহিত্য ও সংস্কৃতিকেন্দ্রিক। ১৮৯৫ সালে তার মালিকানায় মিহির ও সুধাকর পত্রিকা একত্রিত হয়ে সাপ্তাহিক ‘মিহির-সুধাকর’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। এ জন্য কলকাতার বাসভবনে প্রেস স্থাপন করেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, পণ্ডিত রেয়াজউদ্দিন আহমদ আল-মাশহাদী, কবি মোজাম্মেল হকের সাহিত্য প্রকাশনায় তিনি সহযোগিতা করেন।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন থেকে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হলে তিনি একটি সর্বভারতীয় মুসলিম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন। বঙ্গভঙ্গ কার্যকরের দিনে ঢাকার নর্থব্রুক হলে তার ও নবাব স্যার সলিমুল্লাহের উদ্যোগে প্রাদেশিক রাজনৈতিক সংগঠন গঠিত হয়।

মুসলমানদের অনগ্রসরতার জন্য নওয়াব আলী অশিক্ষাকে দায়ী করেন। ১৯১১ সালে ২৯ আগস্ট ঢাকার কার্জন হলে ল্যান্সলট হেয়ারের বিদায় এবং চার্লস বেইলির যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৃথক দুটি মানপত্রে নবাব সলিমুল্লাহ ও নওয়াব আলী চৌধুরী ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। বঙ্গভঙ্গ রদের পর ১৯১২ সালের ৩ ও ৪ মার্চ কলকাতায় সলিমুল্লার সভাপতিত্বে ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’ এর পঞ্চম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নওয়াব আলী চৌধুরীর তিনটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। এর মধ্যে একটি- উচ্চ শিক্ষায় পূর্ববাংলা ও আসামের অধিবাসীদের আপেক্ষিক পশ্চাৎপদতার নিরিখে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ ঢাকায় একটি শিক্ষাদায়ক ও আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের। এর আগে ৩১ জানুয়ারি লর্ড হার্ডিঞ্জের ঢাকায় অবস্থানকালে সলিমুল্লাহ ও নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে মুসলমানদের ক্ষতি হচ্ছে এ কথা তুলে ধরেন। এ লক্ষে ১৩ সদস্যের নাথান কমিটি গঠিত হলে তিনি এর অন্যতম সদস্য হন। এর অধীনে ছয়টি সাব কমিটি গঠিত হলে ৬টি বিভাগের সদস্য হন।

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে আর্থিক সংকটের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ চাপা পড়ে। সে সময় নওয়াব আলী ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সদস্য। বিষয়টি ১৯১৭ সালের ৭ মার্চ ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সভায় উপস্থাপন করেন। ১৯২০ সালের মার্চ ১৮ ভারতীয় আইনসভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল অ্যাক্টে পরিণত হয় এবং ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেলের অনুমোদন পায়। ১৯২১ সালের জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়। ১৯২২ সালে তিনি ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি বাবদ ১৬ হাজার টাকার একটি তহবিল প্রদান করেন। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে অর্থাভাব দেখা গেলে জমিদারির একাংশ বন্ধক রেখে এককালীন ৩৫ হাজার টাকা দেন।

নওয়াব আলী অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান মন্ত্রী। মৃত্যুর আগে তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ১৯০৬ থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভার সদস্য, ১৯১২ থেকে ১৯১৬ সাল পর্যন্ত বাংলা প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থাপক সভার সদস্য, ১৯১৬ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত ভারতীয় আইনসভার সদস্য, ১৯২১ সালে বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য এবং ১৯২৩ ও ১৯২৫ সালে কৃষি ও শিল্প বিভাগের মন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হন। তিনি বাংলাদেশে ৩৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি ও আর্থিক সহায়তা দেন। ১৯১০ সালে ধনবাড়ীতে নওয়াব ইনস্টিটিউট নামে একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া সোনাতলা, কোদালিয়া, গফরগাঁও, পিংনা, জঙ্গলবাড়ি ও হয়বতনগরসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সহায়তা করেন।

১৯১১ সালের রংপুর অধিবেশনে তিনি মাতৃভাষা বাংলার উন্নয়নের পক্ষে অবস্থান নেন। ১৯২১ সালে বাংলাভাষাকে প্রদেশের সরকারি ভাষা করার জন্য লিখিত প্রস্তাব দেন।

নওয়াব আলী অসংখ্য বই রচনা করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ঈদুল আযহা (১৮৯০), মৌলুদ শরীফ (১৯০৩), ভারনাকুলার এডুকেশন ইন বেঙ্গল (১৯০০) ও প্রাইমারি এডুকেশন ইন রুরাল এরিয়াস্ (১৯০৬)। অনেক সম্মাননা ও পদবিতে ভূষিত হয়েছেন তিনি। প্রাপ্ত পদবির মধ্যে রয়েছে- খান বাহাদুর (১৮৯৬), নওয়াব (১৯১১), কমান্ডার অব দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার বা সিআইই (১৯১৮) ও নওয়াব বাহাদুর (১৯২৪)। ২০০৩ সালের ৯ জুন তার নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের নামকরণ করা হয় ‘সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর সিনেট ভবন’।

নওয়াব আলীর নাতি মোহাম্মদ আলী পাকিস্তানের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এ ছাড়া ছেলে সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। সূত্র : উইকিপিডিয়া

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন