শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ , ১০ জিলকদ ১৪৪৫

শিক্ষা

শিক্ষার্থীদের নিয়ে মন্তব্যের জন্য উপাচার্যকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান শিক্ষার্থীদের

কুবি প্রতিনিধি ৫ মে , ২০২৪, ১৭:২৬:২৫

203
  • ছবি : সংগৃহীত

কুবি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আবাসিক হল নিয়ে ‘উস্কানিমূলক ও মানহানিকর' মন্তব্যের প্রতিবাদে উপাচার্যকে ক্ষমা চাওয়া এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়ার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রশাসন বরাবর চিঠি দিয়েছে ৫ শিক্ষার্থী।

রোববার (৫ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিরুল হক চৌধুরী বরাবর এই চিঠি দেয়া হয়।

পাঁচ হলের পক্ষ থেকে চিঠি প্রদানকারী শিক্ষার্থীরা হলেন- শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী রবি চন্দ্র দাস, শেখ হাসিনা হলের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী লাবিবা ইসলাম, নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী তানজিনা আক্তার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী উজ্জ্বল হক ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাছুম।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৩তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একই সাথে আবাসিক হলগুলো বন্ধের ঘোষণা করা হয়। আবাসিক হল বন্ধের কারণ হিসবে উল্লেখ করেন যে, "আবাসিক হলগুলোতে প্রচুর অস্ত্র ঢুকতেছে এবং শিক্ষার্থীদেরকে টাকা দেয়া হচ্ছে।" আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা এতে বিস্মিত ও হতভম্ব হয়ে পড়ে। উপাচার্যের এ দাবি আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য সামাজিকভাবে অপমানজনক। আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষগণও এ ধরণের মন্তব্যকে অনৈতিক বলে মনে করেন। হলসমূহে অস্ত্র কিংবা টাকা ঢুকছে না। এ ধরণের মন্তব্যের কারণে সারাদেশে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষগণও শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা  প্রকাশ করেছেন।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উপাচার্যকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং ৯৩তম সিন্ডিকেটের দাবি প্রত্যাহার করতে হবে। দ্রুতই প্রজ্ঞাপণ জারি করে আবাসিক হলগুলো খুলে শিক্ষার পরিবেশ ও মান সমুন্নত করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি দেয়া শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রবিন দাস বলেন, উপাচার্য স্যার দাবি করেছেন, আবাসিক হলগুলোতে প্রচুর অস্ত্র ও টাকা দেয়া হচ্ছে।  উপাচার্য স্যারের এই দাবি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের জন্য লজ্জার ও অপমানজনক। এই বক্তব্য আমাদের নৈতিকতা বিরোধী ও আমাদের স্বাভাবিক জীবন প্রক্রিয়া ব্যহত করে। উপাচার্যের এই উদ্দেশ্য প্রণোদিত বক্তব্যের মাধ্যমে সারা দেশে তিনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ক্ষুন্ন করেছেন। তাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের স্বাভাবিক পরিবেশ ও শিক্ষার মান সমুন্নত রাখতে উপাচার্যকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং আমাদের হলসমূহ খুলে দিতে হবে। এই সময়ের মধ্যে তিনি আমাদের দাবি না মানলে আমরা আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপে যাবো।

শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী লাবিবা ইসলাম বলেন, গত ৩০ এপ্রিল জরুরি সিন্ডিকেট সভায় উপাচার্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল সমূহ বন্ধের নির্দেশ দেন। তার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, হলে প্রচুর পরিমাণে অবৈধ অস্ত্র এবং অর্থ ঢুকছে। এ মন্তব্য দ্বারা তিনি কি বুঝিয়েছেন? আমরা আবাসিক শিক্ষার্থীরা টাকার কাছে বিক্রি হয়েছি! আমাদের হাতে যে কেউ টাকা, অস্ত্র ধরিয়ে দিলে আমরা বিক্রি হয়ে যাবো? এ হল সমূহে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা থাকে। এখানে অনেকেই আছে যারা টিউশন করে পরিবারের খরচ চালায়। অনেক কষ্টে তারা পড়াশোনা করে। এ ধরণের মন্তব্য তাদের পরিশ্রমকে ছোট করে। কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়া এমন ভিত্তিহীন মন্তব্য একজন উপাচার্যের মুখে মানায় না। তিনি তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের হেয় করেছেন, আমাদের অপমান করেছেন, আমাদের মনঃক্ষুণ্ন করেছেন। উপাচার্যের উচিততার এমন ভিত্তিহীন মন্তব্যের জন্য সকল সাধারণ এবং ৫ হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া। সেই সাথে সিন্ডিকেট সভায় আবাসিক হল সমূহ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে তা অবিলম্বে আনুষ্ঠানিকভাবে উঠিয়ে নিতে হবে। এর জন্য উপাচার্য মহোদয়কে ৪৮ ঘণ্টার সময় দেয়া হয়েছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, সিন্ডিকেটের সভায় অনেকে ধরনের কথা বলেন। যেখানে ফর্মাল-ইনফর্মাল অনেক কথাই থাকে৷ যে সিন্ডিকেট সদস্য এ কথা সিন্ডিকেটের বাইরে বলে বেড়াচ্ছেন তিনি সিন্ডিকেটের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছেন। এছাড়া সিন্ডিকেটের অফিসিয়াল বক্তব্যে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের কারণ হিসেবে একথা উল্লেখ করা হয়নি। বরং উদ্ভুত সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।

 

নিউজজি/এসএম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন