রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ , ১১ জিলকদ ১৪৪৫

দেশ

পুড়ে ছাই ১০ একর এলাকার ছোট গাছ লতাগুল্ম

নিউজজি ডেস্ক ৬ মে, ২০২৪, ০০:২৯:২৯

58
  • পুড়ে ছাই ১০ একর এলাকার ছোট গাছ লতাগুল্ম

ঢাকা: বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন লতিফের ছিলা এলাকায় লাগা আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও এখনও পুড়ছে বিশ্ব ঐহিত্য সুন্দরবন। রোববার (৫ মে) সন্ধ্যা থেকে অগ্নি নির্বাপনের কাজ বন্ধ আছে। তবে সোমবার ভোর ৫টা থেকে আবারও আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা হবে বলে জানান খুলনা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মামুন মাহামুদ।

তিনি জানান, সুন্দরবনে লাগা আগুন একটি নির্দিষ্ট এরিয়ার মধ্যে রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এখনও আগুন জ্বলছে। কারণ সুন্দরবনের শুকনা পাতা পড়ে একটি মোটা আস্তারনের মতো তৈরি হয়েছে। যেটা পানি দিয়ে নিভানোর পরও হঠাৎ করে ধরে উঠছে। সন্ধ্যা থেকে আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি, তবে আমাদের সদস্য ও বন বিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থলে রয়েছে। সোমবার ভোর ৫টা থেকে আবারও আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা হবে। আগুন নেভাতে কতদিন লাগতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সেটা এ মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে আগামীকাল (সোমবার) এ বিষয়ে আপনাদের জানানো হবে।

এদিকে, রোববার সকালে সুন্দরবন বিভাগের চারটি অফিসের কর্মকর্তা ও বনরক্ষীসহ ফায়ার সার্ভিসের খুলনা, বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, শরণখোলা, কচুয়ার পাঁচটি স্টেশনের সদস্য, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, সুন্দরবন সুরক্ষায় টিমের সদস্য ও স্থানীয় সদস্যরা একযোগে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করে। দুপুরে সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে এই প্রথম যুক্ত হয় বিমান বাহিনীর হ্যালিকপ্টার। হ্যালিকপ্টার থেকেও আগুন লাগা স্থানগুলোতে ফেলা হয় পানি। এর আগেই বিশ্ব ঐতিহ্য এই সংরক্ষিত বনের বিভন্ন স্থানের প্রায় ১০ একর এলাকার ছোট-ছোট গাছপালাসহ লতাগুল্ম আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ নিয়ে গত ২০ বছরে সুন্দরবনে ২৬টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৮৬ একর বন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দিনভর এই অগ্নিকাণ্ডের স্থান ঘুরে কোনো বন্যপ্রানী মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ ছাড়া, রোববার সকালে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো’র নেতৃত্বে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মোহম্মদ নুরুল করিম বন কর্মকর্তা, বনরক্ষী ও সুন্দরবন সুরক্ষায় টিমের সদস্যদের দিয়ে প্রথমেই আগুন লাগার স্থানগুলোতে ঘিরে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাইন অফ ফায়ার (নালা) কেটে দেয়। দুই কিলোমিটার দূরে ভোলা নদী থেকে লাইন টেনে লাইন অফ ফায়ার নালায় পানি ভরে দেয়। যাকে আগুন বনের অন্য স্থানগুলোতে ছড়িয়ে পরতে না পারে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের খুলনা, বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, শরণখোলা, কচুয়ার পাঁচটি স্টেশনের সদস্য বনের বিভিন্ন স্থানে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। এ সময়ে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সুন্দরবন সুরক্ষায় টিমের স্থানীয় সদস্যরা একযোগে আগুন নিয়ন্ত্রণে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বেলা ২টার মধ্যে আগুনের তীব্রতা কমতে থাকে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মো. আমির হোসাইন চৌধুরী, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালিদ হোসেন ও পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান।

বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহম্মদ নুরুল করিম জানান, কীভাবে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে চাঁদপার রেঞ্জে কর্মকর্তা (এসিএফ) রানা দেবকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট পাবার পর কীভাবে আগুন লেগেছে এবং সুন্দরবনের বণ্যপ্রাণী ও গাছপালার কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তরিত জানানো হবে।

উল্লেখ্য, সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন লতিফের ছিলা এলাকার শনিবার বেলা ১১টার দিকে লোকলয়ের লোকজন বনের বিভিন্ন স্থানে ধোয়ার কুন্ডলী দেখতে পায়। পরে স্থানীয়রা দুপুরে আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি বন কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের বিষয়টি জানায়। তারা বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে দ্রুত বনের দুই কিলোমিটার গহীনে লতিফের ছিলা এলাকার বিভিন্ন স্থানে দাউ-দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে।

এ সময় আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়িসহ আশপাশের ৪টি বন অফিসের কর্মকর্তা ও বনরক্ষীসহ স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রনের কাজ শুরু করে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে মোরেলগঞ্জ, মোংলা, শরণখোলা ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও আশপাশে পানির উৎস্য না থাকা ও সন্ধ্যা হয়ে আসায় তারা বন কর্মকর্তা ও বনরক্ষীসহ স্থানীয়দের সাথে গহীন অরণ্য থেকে লোকালয়ে ফিরে আসে।

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন