মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১ , ২১ রজব ১৪৪৬

সাহিত্য
  >
গল্প

স্বাবলম্বী

রাশেদ সাদী সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩, ১৫:০৪:০৯

930
  • স্বাবলম্বী

—আস্ত একটা শুয়োর।

— কে?

 —আপনি।

 —তুই কি?

 —আমি শুয়োরানি। কারণ এরপরও আপনাকে ছাড়তে পারছি না।

 —চলে যা।

 —কোথায় যাব? কার কাছে?

  —জায়গা দরকার তোর?

 —হ্যাঁ।

 —আমার এক ভাতের হোটেলের মালিকের সঙ্গে চেনাজানা আছে, যবি?

 —হুম।

 —তাহলে আজকেই বিকালে চল। সব গুছিয়ে রাখিস।

 —গোছানোর কি দিয়েছেন আপনি? এভাবেই যাব, এখনই।

বিকেলে ম্লান সূর্যের আলো প্রকৃতির কোলে কেবল মাথা রেখেছে। ডালপালার ফাঁকে এক মায়ালোকের সৃষ্টি হয়েছে। নাসির আলী হাতল ভাঙা চেয়ারে বসে পথের লোকজন দেখছে। রাস্তাটা বাড়ির সামনে থেকে আস্তে আস্তে সরে গিয়ে পড়েছে সামনের ঘোর বনের মধ্যে। সেখানে চোখ রেখে বসে আছে নাসির আলী। গজ কাপড়ের খাকি প্যান্ট, ময়লা সেন্টু গেঞ্জি গতরে। কালচে মুখ অস্তায়মান সূর্যের রেখায় আর্দ্র। ঘরের অন্য কোনে জুবেদা, যাকে সে পথের উপর আহত পড়ে থাকতে দেখে নিয়ে এসেছিল, ছেড়া কাথাটা জড়িয়ে ‘দ’ হয়ে অঘোরে ঘুমাচ্ছে।

 নাসির আলীর যেন কেমন লাগল। জুবেদা কাল থেকে আর এখানে থাকবে না। ওর হাড্ডিসার তুলতুলে আদর প্রিয় নগ্ন শরীরটা চোখে ভেসে উঠল। ‘একটা খানকি’ মনে মনে আওড়াল।

নাসির গায়ের চাদরের একপ্রান্ত কাঁধের উপর দিয়ে পেঁচিয়ে নিয়ে এসে উঠে দাঁড়াল। কাছে গিয়ে জুবেদাকে তুলে দিল।

 — ওঠ। যবি না।

 — চলেন।

 — চুলটা একটু ঠিকঠাক কর। নতুন মালিকের কাছে যবি...

 — করছি। চলেন।

 — এত চলতি হোটেল, তোর ভালো লাগবে।

 — আর কত?

 — এই তো, ওই যে বড় গাছটা, তার আর এক লাখ পা হাটলেই দু’তলা বাড়িটা দেখা যায়, তার তিন ঘর পর।

রান্নার হাতও তোর ভালো, তুই ভালো করবি।

তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। চারদিকে সান্ধ্য আমেজ। তল্পাতল্পি গুটিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিচ্ছে আগত

ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়রা তার চেয়েও ঢিমেতালে নড়ছে, সড়ছে। দেখলে মনে হবে, একটা ভৌতিক কিছু।

 কিছু দূর গিয়ে হাঠাৎ মনে হলো, জুবেদা পাশে নেই। ‘কই, কই?’ পেছনে চেয়ে দেখে একটা লোক জোবেদার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে হাত চেপে ধরে আছে আর কথা বলতে চেষ্টা করছে।

 ‘কী হয়েছে?’ নাসির আলী দুজনের মাঝখানে এমনভাবে অবতীর্ণ হয়, যেন সে শালিসি করতেই এসেছে।

 ‘এই ছেমরিটা আমার কেনা। দশ হাজার টেকা দিয়া কিনছি ওর জামাই থিকা। আমার পাড়া থিকা শালি পালাইছে।’ বলে লোকটা জোবেদার হাত ঝাকাতে থাকে।

 ‘আরে খুব অন্যায়।’ জুবেদা আশ্চর্য হয়ে নাসিরের হাড্ডিসার মুখের দিকে তাকায়। কথা বলতে পারে না। ‘ওর হাতটা ছাড়েন দেখি আগে। ধরেন ও আপনার ডেরায় পৌঁছে গেছে, বস।’

 — দেও তো ভায়া, তুমারে আমি ইনাম মাগব।

 — কিছু আগম...

 — এই নাও।’ বলে লঙ্গির কোচা থেকে একতাড়া নোট বের করে একটা একশ’ টাকার নোট ওর হাতে গুঁজে দেয়। ‘বাকি ডেরায় গিলে...’

ইতোমধ্যে নাসির আলীর চোখের ঈশারা জুবেদা ধরে ফেলে। সে ছুটে যাওয়ার জন্য অভিনয় বাড়িয়ে দেয়।নাসিরকে বুকে-পিঠে কিল-ঘুষি দিতে থাকে, খামচে একাকার করে দেয়। নাসির আলীও দুচারটা চড়থাপর মারে। শিকার হাতে পেয়ে যাওয়ার মতো উচ্ছ্বসিত বেশ্যাবাড়ির মালিক। পাশাপাশি চলতে চলতে একটু আগে চলে যায় বুড়ো। এক পা-দু’পা গিয়েই পেছন ফেরে। বলে, ‘মাগি এইবার যদি তর ‘পাগাল’ না ছুটাইছি কি আমি কাসেম কানা না।

 এভাবে কিছুদূর যাওয়ার পর হাতের চাপে অন্ধকারের ভেতরই নাসির আলী জুবেদার দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। পথে একটা পথরের টুকরো পেয়ে সেটা হাতে নিয়ে নেয়। জারুল গাছের বনে এসে নাসির আলী তার লোহার মতো হাতে ধরা পাথর গায়ের সমস্ত জোর দিয়ে লোকটার মাথায় মারে। ফিনকি দিয়ে মাথা থেকে রক্ত বেরিয়ে আসে।

লোকটা একটা কলার ডোমের মতো থপ করে মাটিতে পড়ে যায়।

ক্ষত জায়গাটায় নাসির আলী আঘাতের পর আঘত করে জায়গাটা থেতলে দেয়। তরল গরল রক্তে অন্ধকার ভিজে যেতে থাকে। শীতে অসার হাতে রক্তের উষ্ণতা বেশ আরামপ্রদ।

আহত বেশ্যাবাড়ির মালিক গোঙাতে থাকে। তার ভাঙা গলায় গোঙানিটা গ্লাসের ভেতরকার পিংপং বলের মতো ছটফট করতে থাকে।

জুবেদা এই ফাঁকে লোকটার কোচরের ভাঁজ খুলে ফেলে। তবনের তলে শিশ্নের তলঘেষা অন্তরবাসের পকেট থেকে যা কিছু অর্থকড়ি সব হাতিয়ে নেয়। রক্তের উষ্ণতার উন্মত্ততায় পাওয়া নাসির আলীকে হাত ধরে টেনে সরিয়ে নিয়ে আসে। মাটি দিয়ে রক্তের দাগগুলো মুছে দেয়।

 — চলেন।

 — চল।

অন্তরবাসের ভেতর টাকার বান্ডেলের জন্য নাসির আলীকে একটু চ্যাগিয়ে রয়ে সয়ে হাঁটতে হয়। দুজনে বাসস্টপেজে এসে দূর শহরের একটা বাসে ওঠে। জুবেদার পাশে বসে চেয়ারে গা ছেড়ে দেয় নাসির আলী। দুই যুগের পরিচিত শহর ছেড়ে নিরুদ্দেশে যাত্রা। কেমন স্বপ্নের মতো মনে হয় তার। দু-চারবার হর্ন দিয়ে জুবেদা আর নাসির আলীকে নিয়ে অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়ে দূরপাল্লার বাস।

নিউজজি/নাসি 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন