মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১ , ২১ রজব ১৪৪৬

সাহিত্য
  >
গল্প

সেই জীবন, এই জীবন

ইব্রাহীম খলিল জুয়েল নভেম্বর ১৫, ২০১৯, ০১:৫৮:০৪

3K
  • সেই জীবন, এই জীবন

এক.

স্যালাইনের ব্যাগ হাতে নিয়ে দিগ্বিদিক ছুটে বেরাচ্ছি। মৃত্যু আমায় তাড়া করে ফিরছে।কিন্তু স্পর্শ করতে পারছে না।শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে থেকেও শান্তি পাচ্ছি না। কোনো স্বস্তি মিলছে না।হলিফ্যামিলি হাসপাতালের আঙিনায় ছোট বাগানের মতো আছে। নানা রকম গাছপালা, নানা রঙের ফুল। সেখানে গিয়ে দাঁড়ালে হয়তো স্বস্তি মিলতে পারে। এক হাতে ক্যানোলা লাগানো। অন্য হাতে স্যালাইনের ব্যাগ। গিয়ে দাঁড়ালাম সেখানে। কি ন্তু না, এখানেও শান্তি নেই। অক্সিজেন নেই! ক্যান্টিনে গিয়ে একটু স্যুপ খেলে কেমন হয়! কাঁচামরিচের সস দিয়ে ঝাল-ঝাল করে। ভালো লাগতে পারে। নাহ্, ক্যান্টিনে ঢোকামাত্র দমবন্ধ হয়ে এলো। বদ্ধ ঘর। খুব দমবন্ধ ভাব লাগছে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।ছুটির দিন। খবর পেয়ে ডাক্তার ছুটে এলেন।সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় নিজের কক্ষে গেলাম। অক্সিজেন দেয়া হলো।কোনো লাভ হচ্ছে না।আবার দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম।স্বজন, পরিবারের খুব কাছের মানুষটি, কাউকেই ভালো লাগছে না। দীর্ঘ পথচলায় দু’য়েকটি প্রিয় মুখ মনে করার চেষ্টা করলাম। যে মুখগুলো এক সময় প্রচণ্ড আবেগ, আগ্রহ, কৌতূহল জাগাতো। প্রচণ্ড মনখারাপ ভালো হয়ে যেতো।হাসি ফুটতো। নাহ্, সে মুখগুলোও ভালো লাগছে না।তবে কি আমি জীবন-মৃত্যুর মাঝে যে সূক্ষ রেখাটি আছে সেখানে দাঁড়িয়ে আছি? পেন্ডোলামের মতো দুলছি! যে কোনো সময় চিকন রেখাটির ওপারে চলে গেলেই মৃত্যু আমায় বরণ করে নেবে..। বিষয়টি কি এমনই! না, এখনই মৃত্যুর কাছে ধরা দেয়া যাবে না। অনেক কাজ এখনো বাকি। আমি আবার দৌড়াতে শুরু করলাম। হাসপাতালের বেডে গেলাম। ডাক্তার স্যালাইনের সাথে ইনজেকশন দিলেন।আমি আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে এলাম। ঘুমিয়ে গেলাম।

পরদিন ডাক্তার এলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি এতো ভয় পেলেন কেন? মৃত্যুকে ভয়?’

আমি বললাম, ‘না। মৃত্যুকে ভয় পাই না। যেটা অনিবার্য, সেটা নিয়ে ভয় পেয়ে লাভ নেই।শুধু একটু সময় চাই। কিছু কাজ বাকি আছে।’

‘সব কাজ করে যেতে হবে এমন কোনো কথা আছে?’

এমন বিভীষিকাময় অবস্থার মধ্যেও ডাক্তারের রসবোধ দেখে ভালো লাগলো।হাসি পেলো। আমি বললাম, ‘সব করে যেতে চাই না। অসমাপ্ত কিছু কাজ আছে।এ টুকু শুধু সমাপ্ত করতে চাই। একবার চলে গেলে আর তো আসবো না..।’

বলছিলাম- এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময় শেষের দিকে একদিনের পরিস্থিতির কথা। মৃত্যুকে খুব কাছে থেকে দেখে এসেছি। কোনো মানুষ মারা যাওয়ার বিশ সেকেন্ড আগে কেমন অনুভূতি হতে পারে তা উপলদ্ধি করতে পেরেছি।এটাও এক বড় অভিজ্ঞতা। হা-হা-হা। যা হোক, অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা, প্রার্থনা আর সৃষ্টিকর্তার কৃপায়, মৃত্যু তাড়া করলেও এ যাত্রায় শেষ পর্যন্ত আর স্পর্শ করতে পারেনি।

দুই.

আমি ধরে নিচ্ছি এটা আমার দ্বিতীয় জনম। আগের জনমে কয়েকটি উপন্যাস লিখেছিলাম। এর মধ্যে দুটি প্রকাশ হয়েছিল। প্রথম সংস্করণ শেষ হয়েছিল। দ্বিতীয় সংস্করণের দিকে আর মনযোগী হইনি।

প্রথমটি “নিশি”। ’৯২-৯৩-এ লেখা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তখন। প্রকাশ ১৯৯৬ সালে। দ্বিতীয়টি “খুঁজে ফিরি”। রচনা ’৯৮ সাল। বইয়ের মলাটে প্রকাশ ২০১১ সালে।

বই দুটির পরিমার্জিত দ্বিতীয় সংস্করণ নিয়ে ঘষামাজা করেছি।ঘষামাজার পর মনে হলো কিছুই করি নি। গল্প, চরিত্র, সংলাপ সব হুবহু আগের মতোই আছে। আগে যারা পড়েছেন, তারা হয়তো বলবেন কিছুই তো পরিবর্তন নেই।সে যা হোক, ওই উপন্যাস দুটিসহ আরো নতুন দু’একটি উপন্যাস আগামী একুশে বই মেলায় আসবে বলে আশা করছি।

প্রথম জীবনের উপন্যাস দুটি বন্ধু ও শুভাকাঙ্খীদের জন্য ফেসবুকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে চাই।

মাদকের ভয়াবহতা অনেক আগে থেকেই এ সমাজে বিরাজমান।মাদকের ছোবল ধ্বংস করে দিয়েছে অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ, তরুণীকে।দিন যতো যাচ্ছে মাদক পণ্যে বৈচিত্র্য এসেছে।কিন্তু উদ্দেশ্য একটাই। তা হলো নেশা।নেশায় বুঁদ হয়ে থেকে নিজেকে ধ্বংস করে দেয়া।

তিন.

“নিশি” উপন্যাসটি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কয়েকজন তরুণ কিভাবে মাদকাসক্ত হয়ে যায়! এবং তারা কি পরে ফিরে আসতে পারে সেই নীল নেশার জগৎ থেকে? নিশি কি পারবে শোভন কে ফিরিয়ে আনতে সেই আত্মহননের খেলা থেকে?

“খুঁজে ফিরি” উপন্যাসে দেখবো- মফস্বল শহর থেকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে এক তরুণী ঢাকায় আসে টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করতে। শেষ পর্যন্ত নাটক করা হয়, নাকি ফাঁদে পড়ে জড়িয়ে যায় অন্য কোনো জগতে?

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন