শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১ , ৯ শাবান ১৪৪৬

সাহিত্য
  >
প্রবন্ধ

একুশে বইমেলায় প্রকাশনা বাণিজ্য ও পাঠাভ্যাস

ফকির ইলিয়াস জানুয়ারি ২৩, ২০১৮, ১৪:৪৮:২৫

6K
  • ছবি- মোরসালিন আলিফ জিয়ন

আর ক’দিন পরই ঢাকায় শুরু হচ্ছে ‘অমর একুশে বইমেলা ২০১৮’। বাংলাদেশের একুশের বইমেলা মাসব্যাপী আয়োজনের মধ্য দিয়ে গোটা বিশ্বের সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গনে একটি নিজস্বতা তৈরি করে নিয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশেই বইমেলা হয়। তবে মাসব্যাপী নয়। তিন-চারদিন। কখনো এক সপ্তাহ। আর পাশ্চাত্যে এখন বইক্রেতারা অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন ইন্টারনেটের ওপর। ‘বার্নস এন্ড নবলস’ কিংবা ‘আমাজন ডটকমে’ অর্ডার দিয়ে ঘরে বসে প্রিয় বইটি পেতেই বেশি আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্রের পাঠকরা। বই প্রকাশনার ক্ষেত্রেও ইন্টারনেট একটা বড়ো ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। অনেকগুলো ই-ম্যাগাজিন উদ্যোগী হয়ে বের করছে ই-বুক।

বলে নেয়া দরকার, বাংলাদেশে প্রকাশনা শিল্পটি দাঁড়ায় নি। এমন অনেক প্রকাশক আছেন, যারা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে নিজেদের অবস্থান দাঁড় করাতে চাইছেন। এদের কেউ কেউ কোনোমতে টিকে আছেন। কেউ কেউ এই পেশা থেকে সরে দাঁড়াবার কথাও ভাবছেন। প্রকাশনা জগতে এখন চলছে আরেক ধরনের সন্ত্রাস। কিছু কিছু প্রকাশনী ভারতীয় নামকরা লেখকদের বই তাদের অনুমতি না নিয়েই সস্তা কাগজে ছেপে বাজারে ছেড়ে টাকা কামাচ্ছে।

আবার কিছু প্রকাশক, বিভিন্ন অনুবাদকের বই তাদের অনুমতি না নিয়েই ছেপে টাকা কামাই করছেন। এরা অনুবাদকের অনুমতি নেয়া, কিংবা রয়্যালিটি দেয়া- দুটোর কোনোটাই করছে না। কে রুখবে এদের? প্রকাশনা শিল্পের আরেকটি দুঃখজনক অধ্যায় হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় উদারতার অভাব। দেখা যায় যখন বিএনপি ক্ষমতায় থাকে তখন তারা নিজ দল ও মতের কিছু লেখকের বই কিনে সরকারি উদ্যোগে। আবার আওয়ামী লীগ এলে তারাও নিজ নিজ মতাদর্শের গুরুত্ব দিয়ে কিছু বই কেনে।

প্রকৃতপক্ষে যে পরিমাণ বই সরকারি পর্যায়ে কেনা হয়, তা কোনো মতেই পর্যাপ্ত নয়। বিশ্বের প্রতিটি উন্নত দেশে ‘পাবলিক লাইব্রেরি’ রয়েছে জমজমাট পসরা নিয়ে। যেসব দেশের সরকার এসব লাইব্রেরির জন্য বই কিনে বড় বাজেটের। বাংলাদেশে এই সংস্কৃতি শক্তভাবে গড়ে ওঠেনি। দু-চারটি এনজিও কিছু বই কিনলেও সরকারি উদ্যোগ হতাশাজনক।

সরকার চাইলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বই কেনার একটা বড় বাজেট রাখতে পারতো। বিভিন্ন লাইব্রেরিতে তারা বই কিনে ডোনেট করতে পারতো। যে কাজটি একইভাবে করতে পারেন দেশের চিত্তবান-বিত্তবান ব্যক্তিরাও। তারা নিজ নিজ উদ্যোগে বই কিনে স্থানীয় স্কুল-কলেজ লাইব্রেরিতে উপহার দিতে পারেন। মনে রাখা দরকার সরকার এবং সমাজের বৈভবশালীদের উদার পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া প্রকৃত প্রকাশকদের বেঁচে থাকা কঠিন কাজ।

আমরা দেখছি, প্রকাশনা শিল্পটি বাংলাদেশে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না পাওয়ায়, বাংলাদেশে এখন ফুলে ফেঁপে উঠছে কিছু মৌসুমিদের ‘প্রকাশনা বাণিজ্য’। লিটল ম্যাগের সম্পাদক থেকে শুরু করে মুদি দোকানদার অনেকেই প্রকাশক। বাংলাবাজার-শাহবাগ থেকে কাঁটাবনের কনকর্ড এম্পোরিয়ামে এখন প্রকাশকদের মেলা। টার্গেট কতোটা ‘শিকার’ পাওয়া যায়। এমন অনেক প্রকাশকদের আবার এজেন্ট আছে বিদেশেও।

পাওয়া যায় কমিশন। পাণ্ডুলিপি আর পাউন্ড-ডলার-ইউরো-রিয়াল-দিনার জোগাড় করে দিতে পারলেই কমিশন! এসব প্রকাশকদের কারো কারো আবার ‘লেফাফা দুরস্থ’ আছে। নামকরা দু-একজন লেখকের জন্মদিনে তাদের বই বের করে শান দিয়ে নেয় তারা ছুরি! আসল কথা হচ্ছে, এই যে ‘প্রকাশনা বাণিজ্য’ ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে, তাতে বাংলা সাহিত্যের লাভ হচ্ছে কতোটুকু? আদৌ লাভ হচ্ছে কি? শিল্প-সাহিত্যের চর্চা আসে বিবেক থেকে। বাংলা সাহিত্যের সমাজ ও মানসে এই বিবেকের পরিশুদ্ধ চর্চা চলছে বলে মনে হয় না। না হলে, ‘মোড়ক উন্মোচন’ এর নামে লাখ টাকার বাজেট কেউ রাখতে পারে? প্রকাশনা উৎসবের নামে কেউ পার্টির আয়োজন করে বিলাসবহুল হোটেলে? বিশ্বের বড় বড় লেখকরা কি তা করেছেন কখনো? মুদ্রাবিলাসের দাপট দেখানো ভালো। কিন্তু তা দিয়ে তো সাহিত্য হয় না।

আমরা জানি, কেউ খুব ভালো লিখেন। লিখার প্রস্তুতি নেন কেউ। পড়া-জানা-অধ্যবসায় খুলে দেয় লেখালেখির দরোজা। ফেসবুকে, অনলাইনে, ব্লগে অনেক ভালো লেখক আছেন। অনেক লেখকের লেখা, অনেক পাঠকের ভালো লাগে। আবার অনেক সমোঝদার, হৃদয়বান পাঠক আছেন- যারা লেখার পৃষ্ঠপোষকতা করেন উদারতা দিয়ে। লেখালেখি যারা করেন তারা চান , তাদের লেখা প্রকাশিত হোক। কিন্তু দিনে দিনে প্রকাশনার সংকট যেন বেড়েই চলেছে। প্রকাশকরা প্রথম যে বিষয়টিকে নিরুৎসাহিত করেন তা হচ্ছে কবিতা। কবিতার বই ৫০০ কপি ছাপিয়েও চলে না। এমন একটা অভিযোগ শোনা যায় প্রতিনিয়ত। অনেকে নিজে টাকা খরচ করে বই বের করেন । তারপর তা বিক্রি করে টাকা তোলার চেষ্টা করেন। অনেকের টাকা থাকে না । তাই মেধাবী লেখক-কবি হবার পরও বই বের করা হয় না তাদের। এটা বেদনাদায়ক। আজকালের মুক্তবাজার অর্থনীতির মাঠে বই বের করলেই শুধু নয়, বইয়ের বিজ্ঞাপন ছাপতে খরচ করতে হয় বেশ বড় অংকের টাকা। ৪০- ৫০ হাজার টাকা চলে যায় বিজ্ঞাপনে। এটাই বাস্তবতা। এই সংকটকালীন সময়ে ক্রমশই ছোটো হয়ে আসছে প্রকাশনার ব্যাপৃতি। মেধাবী অনেক লেখকই বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকাশনা থেকে। এ বিষয়ে আমি বলতে চাই, যারা সামর্থবান-সমোঝদার পাঠক, তারা কি তাদের প্রিয় কোনো মেধাবী লেখকের কোনো বইকে একক অথবা যৌথভাবে স্পন্সর করতে পারেন না ? একজন লেখকের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসতে পারেন না ? অথবা যারা সৃজনশীল প্রকাশক , তারা লেখকদের কাছ থেকে টাকা না নিয়ে (রয়ালটি দেয়া তো দূরের কথা !) কি প্রতি বছর অধিক সংখ্যক বই প্রকাশে আগ্রহ বাড়াতে পারেন না ? একটা প্রকাশনা সংস্থা তো মেধাকে প্রথম বিবেচনা দিতে পারে। দেয়া দরকার ও। আর তা না হলে একটা জাতির, ভাষার সাহিত্য এগোবে কিভাবে ?

এখন বলি অনলাইনে সাহিত্য বিষয়ে। আজ থেকে কয়েক বছর আগে পশ্চিম বাংলা এবং ইউরোপ-আমেরিকা-কানাডার জয়েন্ট ভেঞ্চারে পরিচালিত একটি কবিতার ওয়েবসাইট যখন আমাকে, আমার একটি কবিতার বই বের করার আহ্বান জানায়, তখন আমি আশ্চর্যান্বিত না হয়ে পারিনি। পরে তারা যখন আমার বইটি আপলোড করলেন তখন মুগ্ধ হয়েছিলাম মনে প্রাণে। কবিতার প্রতিটি পঙক্তির সঙ্গে চমৎকার চিত্রশিল্পের সমন্বয় করেছেন ডিজাইনাররা। ভাষা, কবিতা এবং শিল্পের প্রতি এই যে দরদ, তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। একটি প্রজন্মের, একটি মানবগোষ্ঠীর সৃষ্টিশীলতা এমনটিই হওয়া উচিত।

কিন্তু আমরা পারছি না অনেক কিছুই। কিংবা আমাদেরকে পারতে দেওয়া হচ্ছে না। গোটা সভ্যতার অগ্রযাত্রাকেই যেন থামিয়ে দেওয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা! বিশ্বব্যাপী দেশে-দেশে। আজ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বরাদ্দের চেয়ে, অস্ত্রের প্রতি বরাদ্দ বেশি। অস্ত্র জীবন হনন করে।

আর সংস্কৃতি গড়ে তোলে চিত্তের বিশালতা। তারপরও কেন এই হনন পর্ব? কেন রক্তের হোলিখেলা? বাংলাদেশের একুশের বইমেলা স্বচক্ষে আমার দেখা হয়নি দীর্ঘদিন। তারপরও প্রতিদিনের জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রতিদিনের বইমেলার রিপোর্ট পড়ে আমিও যেন মিশে যাই বইমেলার লাইন দেওয়া জনতার সঙ্গে। প্রতিদিনের বই প্রকাশের তালিকা পড়ে পড়ে আমিও যেন পাল্টে দেখি নতুন বইগুলোর প্রচ্ছদ। বইমেলার প্রাত্যহিক তালিকা দেখে আমার প্রিয় এবং প্রয়োজনীয় বইগুলোর একটি তালিকা আমি করে রাখি প্রতি বছরই।

এবং সময় সুযোগ মতো বইগুলো সংগ্রহও করি। নিউইয়র্কে কটি বই বিতান গড়ে উঠেছিল জ্যাকসন হাইটস এলাকায়। মুক্তধারা, অবসর, অবকাশ, অনন্যা­ এই চারটি ছিল অন্যতম। এখন বাকি তিনটি নেই। আছে শুধু 'মুক্তধারা'।

বাংলাদেশী টাকায় একশত টাকার বইটির মূল্য এখানে নেওয়া হয় পাঁচ ডলার। অর্থাৎ বিশ টাকার সমানে এক ডলার।

অথচ এক ডলারের ব্যাংকিং মুদ্রামূল্য আশি টাকারও বেশি। যারা বইগুলো বিক্রির জন্য আনেন, তাদের বক্তব্য হচ্ছে আনাতে ওজন খরচ দিতে হয় খুব চড়া। প্রবাসীরা নানা দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট নিউইয়র্ক পর্যন্ত আনার ব্যবস্থা করেছিলেন। বিমান আসার পরও কিন্তু বই আমদানিকারকরা বইয়ের মূল্য কমাননি। এখন বিমান বন্ধ হয়ে গেছে।

আমদানিকারকরা ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, গালফ এয়ার, এমিরেটস, ইতিহাদ, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, থাই এয়ারওয়েজে তাদের মালামালগুলো আনছেন। বইয়ের মূল্য বিমান যখন আসতো­ তখন যেমন ছিল, এখনো তেমনি আছে। তাহলে লাভবান কারা হচ্ছেন? পাঠকরা না বিক্রেতারা? পাঠকতো পড়তে চান। বই বিক্রিতে মুনাফা একটু কম করলে হয় না? বইয়ের সঙ্গে অন্যান্য মালপত্তর তো ব্যবসায়ীরা আনছেন। এ কথা কে কাকে বুঝাবে? বলছিলাম ই-বুকের কথা।

ই-বুকের একটি বিশেষ সুবিধা হচ্ছে ইন্টারনেট এক্সেস থাকলে বইটি বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে বসে পড়তে পারেন পাঠক-পাঠিকা। এক সঙ্গে হাজারো পাঠক-পাঠিকা পড়তে পারেন। ই-বুক প্রকাশনায় ভারতের, বিভিন্ন শিক্ষালয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীরা দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন।

ঢাকা একুশে বইমেলার বাইরে, নিউইয়র্কে তিনদিনের একটি মেলা হচ্ছে নিয়মিত। এই মেলা চলছে ১৯৯২ সাল থেকে। নিউইয়র্কে ১৯৯২ সালে প্রথম বইমেলাটির উদ্বোধক ছিলেন ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত। ১৯৯৩ সালে কবি শহীদ কাদরী মেলা উদ্বোধন করেন। ১৯৯৪ সালে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ১৯৯৫ সালে পুরবী বসু, ১৯৯৬ সালে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, ১৯৯৭ সালে হুমায়ুন আহমেদ, ১৯৯৮ সালে সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, ১৯৯৯ সালে দিলারা হাশেম, ২০০০ সালে ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন, ২০০১ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বইমেলা উদ্বোধন করেন। ২০০১ সালে দশম বইমেলার বর্ণিল আয়োজনে একযোগে এসেছিলেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, হুমায়ুন আহমেদ ও ইমদাদুল হক মিলন। ২০০২ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন ড. হুমায়ুন আজাদ। ২০০৩ সালে কবি জয়গোস্বামী আসেন উদ্বোধক হিসেবে। মুক্তধারার উদ্যোগে ২০০৪ সালে দুটি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ওই বছর নিউইয়র্কর বইমেলা উদ্বোধন করেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও লসএঞ্জেলেসে রাবেয়া খাতুন। ২০০৫ সালের বইমেলার উদ্বোধক ছিলেন ড. আবদুন নূর। ২০০৬ সালে পঞ্চদশ বইমেলা উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন আঙ্গিকে বইমেলা শুরু হয়েছে ২০০৭ সাল থেকে। বইবিপণী ‘মুক্তধারা’র সহযোগী সংগঠন ‘মুক্তধারা ফাউন্ডেশনে’র উদ্যোগে বইমেলা রূপ নিয়েছে আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসবে। এই উৎসবের অংশ হিসেবে চারটি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০০৭ সালে। নিউইয়র্কে ড. গোলাম মুরশিদ, ডালাসে ড. আনিসুজ্জামান, লস এঞ্জেলেসে সমরেশ মজুমদার এবং নিউজার্সিতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এসব বইমেলা উদ্বোধন করেন।

২০০৮ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি রফিক আজাদ। ২০০৯ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন হাসান আজিজুল হক। ২০১০ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি সৈয়দ শামসুল হক। ২০১১ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন তপনরায় চৌধুরী। ২০১২ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন শামসুজ্জামান খান। ২০১৩ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। ২০১৪ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি মহাদেব সাহা। ২০১৫ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। ২০১৬ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন সেলিনা হোসেন। ২০১৭ তে এই মেলা উদ্বোধন করেন পবিত্র সরকার ও শামসুজ্জামান খান।

আমি মনে করি, বিদেশে বাংলা বইয়ের একটি ভাল বাজার আছে। বিদেশে বইমেলা করতে হলে, সরকারি সাবসিডিয়ারি দিয়ে বিদেশে বই পাঠাতে হবে। বই বিপণন এর ব্যবস্থা করতে হবে। এই ব্যবস্থা বিদেশের দূতাবাসের কালচারাল মিনিস্টার'রা করতে পারেন।

বইমেলা এখন একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে। তরুণ প্রজন্মের লেখকরা অংশ নিচ্ছেন তাদের লেখা ইংরেজি ভাষার সাহিত্য নিয়ে। এটা খুবই আনন্দের কথা। তারা আত্মানুসন্ধান করছেন। জানছেন শিকড়। হ্যাঁ- বিদেশে আমরা এটাই চেয়েছিলাম। তা পাচ্ছি। আমাদের আলোর উৎস তো এরাই। এই প্রজন্মই।

আমি মনে করি, বছরজুড়েই বই প্রকাশিত হওয়া দরকার। ইউরোপ আমেরিকায় সেটাই হয়। তাড়াহুড়োর মাঝে ভালো বই পাঠক বাছাই করতে পারেন না। এর জন্য সময় দরকার। আলোচনাবহুল রিভিউ দরকার। মেলার একমাসে কি সেই সুযোগ হয়? না হয় না। হয়তো কিছু ব্যবসা হয়। ব্যবসা আর পরিশুদ্ধ সাহিত্যের প্রসার কিন্তু এক নয়।

বইমেলা কিছু হুজুগে লেখক তৈরি করছে। এটা মারাত্মক দিক। ভালো কিছু বই দিচ্ছে—এটা ভালো দিক। ভালো বইগুলোর লেখকরা তা সময় নিয়ে লেখেন। তা পড়লেই বুঝা যায়। ফেসবুককেন্দ্রিক কবি হয়ে, শত-শত ‘লাইক’ নিয়ে যারা বই বের করেন, ওই লাইক যারা দিয়েছিল, তারাই কিন্তু বইটি কেনে না। সাহিত্যে প্রভাবের বিষয়টি একটি স্থায়ী শক্তি। একমাস, সেই প্রভাব ফেলতে পারে না। যেকোনো সময় বের হওয়া একটি বই-ই কিন্তু একটি ভাষার সাহিত্যে মাইলফলক হয়ে যেতে পারে।

বেদনার কথা হচ্ছে, ফেসবুকে শুরু করেই পরবর্তী বছরে সবাই সস্তা লেখক-কবি হতে চায়। সাধনা ছাড়াই সিদ্ধি লাভ করতে চায়। সাধক হয়ে যেতে চায়। একটি উদাহরণ দিই। একজন তরুণ আমার কাছে প্রশ্ন করলেন—’ভাই ভালো কবিতা পড়তে চাই। কার কার কবিতা পড়ব?’ আমি অনেকের নাম বললাম। এক পর্যায়ে বললাম, শ্রীজাতের কবিতা পড়েছেন? তিনি বললেন, না ভাই। আমি অনেক জাতের কবিতা পড়েছি। কিন্তু শ্রীজাতের কবিতা পড়িনি। দেখুন, উনি কিন্তু এই কবির নামই শোনেননি! একুশের বইমেলা কিছু আবর্জনাও আমাদের জন্য রেখে যায়। লেখালেখির এই আবর্জনা কোনো কোনো সময় ভালো বইকেও ম্লান করে দিতে পারে। দেয়ও।

আমরা জানি, বই প্রকাশের গাইডলাইন বা নীতিমালা করে বাজে বই বের করা বন্ধ করা যাবে না। উপকরণ এখন সহজলভ্য। আর কিছুদিন পর দেখবেন ‘প্রিন্ট অন ডিমান্ড’ চালু হয়ে গেছে। তাই কম খরচেই অনেকে বই করবে। কিন্তু তা কি পাঠযোগ্য হচ্ছে? না হচ্ছে না। পাঠক আগেও বেছে বেছে পড়েছেন। আগামী দিনেও পড়বেন। বাজে বই পড়লে মানুষের মননও বিনষ্ট হয়। তা আমরা সবাই জানি। অন্যদিকে, একটি ভালো বই বদলে দিতে পারে একটি জীবন। সেই সিদ্ধান্ত পাঠককেই নিতে হবে। বাংলাসাহিত্য কালে-কালে ধীশক্তি সম্পন্ন লেখক-কবি তৈরি করে গেছে। আমাদের মূল ভরসা তারাই। তাই আগাছা নিয়ে আমার কোনো ভাবনাই নেই।

 

 

নিউজজি/এসএফ

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন