শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ , ১২ জুমাদাউস সানি ১৪৪৬

সাহিত্য
  >
প্রবন্ধ

বেগম সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ফারুক হোসেন শিহাব নভেম্বর ২০, ২০১৭, ১১:৫৭:০৫

9K
  • বেগম সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বাংলাদেশের প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং নারীমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন কবি বেগম সুফিয়া কামাল। তিনি ছিলেন নারীবাদী ও নারী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। গণতান্ত্রিক এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনেরও অনন্য পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন বেগম সুফিয়া কামাল।

বাংলাদেশের নারী জাগরণের এই জননী সাহসিকা কবির ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর জাগতিক জীবনের মায়া ছেড়ে পরপারে পাড়ি দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতি-কর্মীদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। তাঁকে ‘জননী সাহসিকা’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে এক অভিজাত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বেগম সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ আবদুল বারী ছিলেন একজন আইনজীবী। তিনি ছিলেন তৎকালীন বৃহত্তর কুমিল্লার (বর্তমানের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার) বাসিন্দা। যে পরিবারে সুফিয়া কামাল জন্মগ্রহণ করেন সেখানে নারীশিক্ষাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করা হত।

স্কুল কলেজে পড়ার কোনো সুযোগ তাঁদের ছিল না। পরিবারে বাংলা ভাষার প্রবেশ এক প্রকার নিষিদ্ধই ছিল। তেমনি বিরুদ্ধ পরিবেশে সুফিয়া কামাল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো সুযোগ পাননি। পারিবারিক নানা উত্থান পতনের মধ্যে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন তিনি। মা সাবেরা বেগমের কাছে পড়তে শেখেন সুফিয়া কামাল। মাত্র বারো বছর বয়সে সৈয়দ নেহাল হোসেনের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁর স্বামী সাহিত্য পাঠে তাঁকে আগ্রহী করে তোলেন, যা তাঁকে পরবর্তীকালে সাহিত্য রচনায় উদ্বুদ্ধ করে।

১৯২৩ সালে তিনি রচনা করেন প্রথম গল্প ‘সৈনিক বধূ’ যা বরিশালের তরুণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯২৬ সালে সওগাত পত্রিকায় তাঁর প্রথম কবিতা বাসন্তী প্রকাশিত হয়। মহাত্মা গান্ধীর সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি কিছুদিন চরকায় সুতা কাটেন। এ সময়ে যোগ দেন নারী কল্যাণমূলক সংগঠন ‘মাতৃমঙ্গল’-এ। ১৯২৯ সালে তিনি বেগম রোকেয়ার ‘আঞ্জুমান-ই-খাওয়াতিন-ই-ইসলাম’-এ যোগ দেন। এ সময় বেগম রোকেয়ার আদর্শ তাঁকে প্রভাবিত করে। 

১৯৩১ সালে সুফিয়া কামাল মুসলিম নারীদের মধ্যে প্রথম ইন্ডিয়ান মহিলা ফেডারেশনের সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে ১৯৩২ থেকে ৪১ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা কর্পোরেশন প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯৩৮ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁঝের মায়া’ প্রকাশিত হয়, যার ভূমিকা লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম, আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর প্রশংসা করেছিলেন। 

১৯৩৯ সালে কামালউদ্দীন আহমেদের সাথে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন বেগম পত্রিকার প্রথম সম্পাদক। সুফিয়া নামের সঙ্গে যুক্ত হয় স্বামী নামের অংশ বিশেষ। তখন থেকে সুফিয়া কামাল নামে তার নতুন পরিচিতি ঘটে।  

১৯৪৭ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সরাসরি যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম পরিষদ (বর্তমানে মহিলা পরিষদ) গঠিত হলে প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছায়ানটের সভাপতি ছিলেন। 

বেগম সুফিয়া কামাল ছিলেন মানবতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অগ্রপথিক। সকল অন্যায়, দুর্নীতি ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার এক সমাজসেবী ও নারীনেত্রী ছিলেন তিনি। শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের এক সৃষ্টিশীল মহীয়সী নারী ছিলেন তিনি। 

তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে- সাঁঝের মায়া, মায়া কাজল, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী, দিওয়ান, মোর জাদুদের সমাধি পরে প্রভৃতি। এছাড়াও রয়েছে গল্পগ্রন্থ ‘কেয়ার কাঁটা’, ভ্রমণকাহিনি ‘সোভিয়েত দিনগুলি’ এবং স্মৃতিকথা ‘একাত্তুরের ডায়েরি’। 

সুফিয়া কামাল ৫০টিরও অধিক পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে বাংলা একাডেমী, সোভিয়েত লেনিন, একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পদক উল্লেখযোগ্য।

সুফিয়া কামালের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও নারীবাদী সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে। ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

নিউজজি/এসএফ

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন