রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ , ২৪ মুহররম ১৪৪৭

সাহিত্য

শিল্পী ঢালী আল মামুনের সাথে এক সকালের আড্ডা (পর্ব -১)

এজাজ ইউসুফী ৬ জুলাই , ২০২৫, ১৮:৪৬:১৯

522
  • ছবি: নিউজজি

ঢালী আল মামুন বাংলাদেশের একজন অন্যতম চিত্রশিল্পী । তার জন্ম ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে চাঁদপুর জেলায়। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অবসর নিয়েছেন। ১৯৮২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলা বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। ১৯৯৩-৯৪ সালে জার্মান সরকারের বৃত্তি নিয়ে চারুশিল্পে উচ্চতর ডিএএডি কোর্স সম্পন্ন করেন। ৮০ দশকে বাংলাদেশের শিল্পীদের একটা দল প্রাচীন পথ পরিহার করে নতুন পথে হাঁটতে শুরু করে ছিলেন।

তারা ‘‘সময়’‘ নামে নিজেদের একটি শিল্পী গ্রুপ গড়ে তোলেন। এই ‘‘সময়’’ দলটির অন্যতম নেতৃত্ব স্থানীয় একজন ছিলেন শিল্পী ঢালী আল মামুন। এ দলে আরও ছিলেন নিসার হোসেন, আজিজ শরাফী, ওয়াকিলুর রহমান, দিলারা বেগম জলি, হাবিবুর রহমান, শিশির ভট্টাচার্য্য, তওফিকুর রহমান এবং লালা রুখ সেলিমের মতো খ্যাতিমান শিল্পীরা। তারা ইউরোপীয় বিমূর্ত চিত্ররীতির জেঁকেবসা আধিপত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে নিজের দেশীয় ঐতিহ্যের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তাদের এই প্রতিবাদ কেবল চিত্ররীতির বিরুদ্ধেই ছিল না। তাদের মনে হয়েছিল, সেই চিত্ররীতি দেশের সমকালীন ইতিহাসের অভিজ্ঞতাকে ধারণ করতে অক্ষম। আর শিল্পকর্ম পর্যবসিত হয়েছে ক্যানভাসের নিছক উপরিতলের বর্ণভঙ্গিমা প্রদর্শনে। তাই তারা বিপ্রতীপ শিল্প-ধারার জন্ম দিয়েছেন।

শিল্পী ঢালী আল মামুন নানা জাতীয় সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০০০ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রধান স্বীকৃতি সমূহের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পদক পান। এছাড়া ২০০৬ সালে ঢাকায় আয়োজিত দ্বাদশ এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে গ্র্যান্ড পুরস্কার পান। তিনি ২০১৩ সালে ইতালির ভেনিসে আয়োজিত ৫৫ তম বিয়েনালে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।

তার উল্লেখযোগ্য প্রদর্শনী হচ্ছে, Diriyah Contemporary Art Biennale 2024, Riyadh. ‘অসম্মতিরমানচিত্র’বেঙ্গল শিল্পালয়, ঢাকা, ২০২৩, Pop South Asia : Artistic Explorations in the popular, Sharjah  Art Foundation,  Sharjah ২০২২, Nadar Museum of Art ,New Delhi, India 2023, ÒHANDSÓ – Akademie der Kunste der Welt , Cologne,Germany, ২০২১, ,মাঝি ইন্টারন্যাশনাল আর্ট রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম, ভেনিস, ইতালি, ২০১৯ , ‘‘ড্রইং এন্ড থিঙ্কিং, থিঙ্কিং এন্ড ড্রইং-১’’ ২০১৮,  কলা কেন্দ্র, মোহাম্মদপুর, ঢাকা,  ‘‘টাইম, কো-ইন্সিডেন্সঅ্যান্ড হিস্টরি’’, ২০১৬ , বেঙ্গল  শিল্পালয় ঢাকা , ‘‘অপনয়ন’’ ২০১২ , বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জ গ্যালারি, ঢাকা।

২০০৯-’’ কাগজের ছায়া’‘ (কোলাবরেশন উইথ ওয়াকিলুর রহমান), জাতীয় জাদুঘর, ২০০৪- ‘‘ওয়াটার ইজ ইনোসেন্ট’’ , অলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, চট্রগ্রাম এবং জাতীয় জাদুঘরসহ  দেশে-বিদেশের জাদুঘর ও গ্যালারিতে তার চিত্রকর্ম সংগৃহীত হয়েছে। এছাড়াও তিনি সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে একটি স্মৃতি স্থাপনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নির্মাণ করেন ২০১৪ সালে।

সম্প্রতি শিল্পীর বাসায় এক সকালে আড্ডায় বসেছিলাম। এখানে তার নির্বাচিত অংশ প্রকাশিত হলো।

এজাজ ইউসুফী : সুপ্রভাত আপনাকে। আমরা সবুজ আড্ডার পক্ষ থেকে আপনার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করব। Informaly আমরা কথা বলব। প্রথমে আমরা জানতে চাই যে—আপনি জানেন, সবুজ আড্ডাটি  দীর্ঘ দিনের। এই আড্ডাটি ৮২ সালে আমরা শুরু করেছিলাম। একটুপরে এসে আপনি আমাদের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। সবুজ আড্ডার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কীভাবে তৈরি হলোমনে পড়ে আপনার?

ঢালী আল মামুন : প্রথমত আমি এখন আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সাথে যুক্ত নেই। অবসর নিয়েছি। দ্বিতীয়ত আপনি শুরুই করেছেন কিন্তু একটা সত্যিকার অর্থে অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা বলবেন বলে। সবুজ আড্ডার সাথে আমার প্রথম পরিচয়, সেটা এখন আর সন-তারিখ নির্ণয় করে বলা এই মুহূর্তে আমার জন্য কঠিন। কারণ, স্মৃতিতে অনেক ধুলো বালি, অনেক কিছু জমে গেছে। তাছাড়া নানা কারণেই আজকাল অনেক কিছু অস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তবে খানিকটা যা মনে পড়ে সেটি হচ্ছে, সম্ভবত আপনি সেই ব্যক্তি যার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঘটেছিল-হয়তো  কোন একটি কাজের সূত্রে। সেটিও এখন আর আমার মনে নেই। তবে এইটা ঠিক কাজের সূত্রেই আপনাদের সাথে আমার সম্পর্ক গভীর হতে থাকে এবং আপনাদের আমন্ত্রণে আমি সবুজ আড্ডায় যাই। পরবর্তীতে আমি সেই আড্ডার অংশীদার হয়ে উঠি।

এজাজ : চট্টগ্রামের অনেকগুলো আড্ডা হয় যেমন চৌরঙ্গীর আড্ডা হতো, তারপরে ফুলকির আড্ডা, তারপরে বোস ব্রাদার্সের আড্ডা হতো। এরকম অনেকগুলো আড্ডা হতো, সবুজ আড্ডাও এরকম একটি আড্ডা। আপনি কী মনে করেন যে সবুজ আড্ডা আসলে ক্রিয়েটিভ ছিল বা এখন কী অবস্থা?

মামুন : মানে, সাম্প্রতিক সময়ের আড্ডা সম্পর্কে আমার তেমন কোনও ধারণা নেই। তবে যে কোন যথার্থ  আড্ডাই তো আসলে মানুষকে প্ররোচিত করে, উসকে দেয়।  চিন্তার সম্প্রসারণ ঘটায় এবং  আদান-প্রদান ঘটে।  কারণ, আমরা প্রত্যেক মানুষই তো আলাদা-আলাদা এবং প্রত্যেক মানুষেরই হয়ে ওঠার বৃত্তান্ত আলাদা এবং চিন্তা কাঠামো আলাদা। ফলে যখন একটা আড্ডাতে বসি তখন নানা প্রশ্ন কিংবা প্রশ্নোত্তর-পর্ব কিংবা তর্ক ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে কিন্তু আমরা একইভাবে পরস্পরকে প্রাণিত করি। এবং এই যে ক্রিয়েটিভিটির প্রশ্নটি সেটা খুব জটিল। সেটি ব্যক্তি বিশেষের উপরনির্ভর  করে—ব্যক্তি কিভাবে ধারণ করে আসলে। যে কোনও আড্ডাই যে কোন সৃজনশীল মানুষের জন্যই আমি মনে করি তা গুরুত্বপূর্ণ।

এজাজ : আপনি তো আড্ডা-সংশ্লিষ্ট ছিলেন। অনেককে দেখেছেন, আমাদের কাছ থেকে দেখেছেন। আমাদের কাজগুলো সম্পর্কে জেনেছেন। বিশেষ করে ৯০ দশক থেকে আজকে ২০২৫ সালে উপনীত হয়েছি। এই সময়ের মধ্যে আমরা অনেকগুলো কাজ করেছি। সে সবে আপনিও সম্পৃক্ত ছিলেন। সেই হিসাবে আপনার মূল্যায়নটা কী রকম?

মামুন : একটা হচ্ছে আমার যা বৃত্তান্ত কিংবা বুঝ ব্যবস্থা ছিল তার মধ্যে  নিশ্চয়ই  সেইটি আমার কাছে আকর্ষণীয়  এবং আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হতো। তাই হয়তোবা আমার সম্পৃক্ততা সেখানে ছিল বলে আমার মনে হয়। কারণ, আমার মনে হচ্ছে সে সম্পৃক্ততাটা একটা অর্থবহ ছিল (হয়তো আমার নিজের কাছে)। মানে  সম্পৃক্ততা থাকলে পরে, আমার কর্মকাণ্ড বা আমার সময়টা অর্থবহ হবে। সে কারণে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। এখন এটি খুব judgmentalway-তে  compare  করা is really difficult । কারণ, আমি মনে করি, আমি হয়তো অনেকগুলো আড্ডার সাথে যুক্ত ছিলাম। বোস ব্রাদার্সে বসেও আড্ডা মেরেছি। এমন অনেকগুলো জায়গায় আমার আড্ডা ছিল।

এজাজ: Individually সুচরিত চৌধুরির সঙ্গেও আপনাদের...

মামুন : সুচরিতদা’র ওখানে ও আমরা প্রচুর আড্ডা মেরেছি আমি , শাহাদুজ্জামান (মুন্না) এবং  মিলন চৌধুরি ছিল। I think most important person আমাদের আড্ডার। মিলনদা সত্যি সত্যিই খুবই একজন আড্ডাবাজ মানুষ ছিলেন এবং উনি আমাদেরকে প্ররোচিত করতেন এবং provoke করতেন। ফলে সবমিলিয়ে even আমার নাটক পাড়ার লোকদের সাথেও আড্ডা ছিল এবং  লেখকদের সাথেও আড্ডা ছিল। বলা যায়া ejvhvq visual artist-দের সাথে আমার আড্ডাটা কম হয়েছে। বরঞ্চ অন্য ডিসি প্লিনের লোকদের সাথে আমার নানা আড্ডা হয়েছে।

এজাজ : বেশি আড্ডা হয়েছে।

মামুন: সে অর্থে আমি নিজেই বলতে পারি ঐ আড্ডা থেকে আমি সত্যিকার অর্থে উপকৃত হয়েছি।

এজাজ : আপনি—আমার মনে পড়ে আমরা; আপনিই বিশেষ করে আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন যে, সবুজ তখন টিনের ছাউনি দেয়া এবং ফরমিকার চারদিকে ওয়াল ছিল। আপনি বলেছিলেন সেখানে আমরা একটা প্রদর্শনী করতে পারিকি না। কবিতা, চিত্রকলা, আলোকচিত্র  এগুলো দিয়ে। এবং আপনার কথামত আমরা ওই আইডিয়াকে কাজে লাগিয়ে একটা প্রদর্শনী করেছিলাম। এটাকি ভাবে ভেবেছিলেন? আমি মনে করি--বাংলাদেশে বোধহয় এই ধরনের কাজ কখনও হয়নি। এই সময়টায় এই inspiration-টা, আপনি আইডিয়াটা কীভাবে পেয়েছিলেন এবং এটা আমাদের দিয়েছিলেন?

মামুন : আমার তখন মনে হয়েছিল, আসলে আমরা একটা জায়গায় আড্ডা মারি—সবুজ আড্ডা। মনেপড়ে, সেখানে সবুজ হোটেলের যিনি মালিক ছিলেন, উনার কথা সত্যিকার অর্থে স্বীকার করা, সম্মান জানানো প্রয়োজন। কারণ, তার প্রশ্রয়ছিল এবং উনি allow করেছিলেন। ওটা আমাকে খুব আন্দোলিত করেছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে বাইর বা বিভিন্ন জায়গা থেকে  এখানে যে মানুষজন আসে এবং আমাদের যে দীর্ঘক্ষণের আড্ডা অবস্থানের একটা রিপ্রেজেন্টেশন হিসেবে প্রদর্শনী হতে পারে I as a space it is  temporary space একটা হোটেল,  এখানেও যে একটা শিল্পের জায়গা, শিল্প প্রদর্শনীর জায়গা হতে পারে, যেখানে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটে । not necessary যে শিল্প শুধুমাত্র একটা অভিজাত এলাকায়, অভিজাত স্পেসে হবে, তা কিন্তু না । হয়তো মনে করে ছিলাম একটা জন মানুষের সাথে এক ধরনের সম্পৃক্ততা এবং আমরা যেখানে থাকি তার ও একটা অর্থবহ উপস্থাপনা হতে পারে। প্রতিনিয়ত যে সকল মানুষ  স্বল্প সময়ের জন্য তাঁদের প্রয়োজনে এখানে আসছেন তারা দেখবেন –এটার মধ্যে দিয়েও শিল্পকে এবং শিল্পের একটা Communication- হবে যা  প্রসারিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

এজাজ : যেটা আমার মনে পড়ে—সেই সময় এই প্রদর্শনীটা Talk of the Town-এ পরিণত হয়েছিল। একারণে যে, ছেলে-মেয়েরা দেড়-দুই দশক ধরেএকটা হোটেলে আড্ডা মারে আর সেখানে আবার প্রদর্শনী করছে। তা কিন্তু সবার মধ্যে কৌতূহল তৈরি করেছিল।

চলবে…

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন