তুমি-আমি ও রবীন্দ্রনাথ

ঢাকা: তুমি কি আজ রবীন্দ্রনাথে আছো নাকি অন্য কোথাও, এই যে পঁচিশে বৈশাখের বাতাস এসে আমাকে বলে গেলো তোমার ভাঁজ করা পায়ের উপর শুয়ে আছে বিছানার ঢেউ আর সেখানে তুমি ঠোঁট নেড়ে করছো উচ্চারণ ‘সময়ের সমুদ্রে আছি, কিন্তু এক মুহূর্ত সময় নেই’। পৃষ্ঠার মানচিত্র পেরুতে পেরুতে তোমার কি চোখে পড়ে না ‘আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি যুগল প্রেমের স্রোতে, অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে’।

তোমার পূবের জানালায় কতখানি মেঘ জমেছে বলো, সে কি আমার চোখের ব্যথার চেয়েও ঘনত্বে করছে ওড়াউড়ি। তুমি কতখানি রোদ সরাবার পর পেয়েছো কিছুটা জলের আশ্রয়, সে কি আমার বুকে থইথই কান্নানদীর চেয়েও অনেকখানি গভীর। কী পেয়েছো এই বিরহী বৈশাখে তুমি আজ, কোনও কথাই কইছো না যে।

তোমার নতুন শাড়িটার আঁচল ভরতি কীসের ঘুম ছিল এত, যা গতরাতে চুরি হয়ে গেছে বলে স্নানঘরে লাল অথবা অন্য কোনও মরা জলের বালতিতে চুবিয়ে এসেছো তারে, নিয়ে থাকলে কেউ না হয় নিয়েই নিয়েছে, কিছু মনে করিনি তো আমি। আমি শুধু চেয়েছিলাম এরকম পঁচিশে বৈশাখে তুমি অন্তত একবার সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসবে তোমার আবাসিক অঞ্চলের ছায়ায় আর তোমার শাড়ির ওপাশ দিয়ে মসৃণ মেঝে দেখে নেব আলগোছে হয়তো।

তুমি কি আজ রবীন্দ্রনাথে আছো নাকি অন্য কোথাও, আকাশ থেকে বৃষ্টির শাদা ফুল ছিনিয়ে এনে তোমার ছোট ছোট চুলের পাশ দিয়ে ছড়িয়ে দেব বলে সারারাত আমি শিখেছি রবীন্দ্রসঙ্গীত, তোমার কানের কাছে সে সুর আছড়ে পড়তেই তুমিও জানবে, জীবনে ভালোবাসার গভীরেই জন্ম নেয় পৃথিবীর সকল সুন্দর বিরহ। কী পেয়েছো এই বিরহী বৈশাখে তুমি আজ, কোনও গানই শুনছো না যে।

তোমার জেনে রাখা ভালো, ভালোবাসার নৌকোর গলুইয়ে একবার বসে গেলে সেদিকের হাওয়ায় রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়া আর কোনও গান শুনতে নেই, আর প্রত্যেক প্রেমিক-প্রেমিকার অন্তত পঁচিশে বৈশাখে এতোটা দূরে থাকতে নেই, যতোটা দূরে থাকলে পৃথিবীর কোথাও কোনও গান ভাসে না কোনোমতেই।

নিউজজি/পিএম