রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ , ১৩ জুমাদাউস সানি ১৪৪৬

সাহিত্য

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ গোকুলানন্দ গীতিস্বামী

নিউজজি ডেস্ক ২৬ নভেম্বর , ২০২৪, ১৫:২৩:১০

65
  • সংগৃহীত

ঢাকা: গোকুলানন্দ গীতিস্বামী ছিলেন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ। তিনিই সর্বপ্রথম বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের ভেতর জাতীয়তাবোধ ও মাতৃভাষার প্রতি চেতনা জাগ্রত করেন। গোকুলানন্দ মুলত ছিলেন একজন চারণকবি।

তৎকালীন মণিপুরী সমাজের শিক্ষিত একটি বৃহদাংশ যখন সাহেবি এবং বাঙালি চালচলন রপ্ত করতে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময় মাতৃভাষায় নানান কবিতা, গান, গীতিপালা লিখে সেগুলোর পরিবেশনা নিয়ে ঘুরতেন গ্রাম থেকে গ্রামে। নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি আচার নিয়ম সবকিছু বিস্মৃত হয়ে এই সমাজ যখন প্রায় নিশ্চিহ্ন হবার দ্বারপ্রান্তে, তখন গীতিস্বামী সক্রেটিসের মতো নতুন আশার, নতুন সম্ভাবনার বাণী ঘরে ঘরে ফেরী করে বেড়িয়েছেন ক্লান্তিহীনভাবে।

তিনি দেখিয়ে দিলেন, এই ভাষা এই সংষ্কৃতির ভেতরেও বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। শুধুমাত্র লোকমুখে প্রচারিত এই দরিদ্র ভাষাটি দিয়েও রচিত হতে পারে উৎকৃষ্ট সাহিত্য, শিল্পরস।

গোকুলানন্দের জন্ম বাংলাদেশের বর্তমান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানার মাধবপুর ইউনিয়নের জবলারপার নামের এক প্রত্যন্ত গ্রামে, ১৮৯৬ সালের ২৬ নভেম্বর তারিখে। তিনি মাধবপুরে নিম্নবাংলা পাশ করার পর ইংরেজি পড়ার জন্য ত্রিপুরায় চলে যান। সেখানে অস্টম মান পর্যন্ত পড়েছিলেন। এরপর ১৯২৫ সালে ত্রিপুরার রাতাছড়া গ্রামে ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানে নিজে শিক্ষক হয়ে পাঠদান শুরু করেন। পাশাপাশি শুরু করেন মাতৃভাষা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীতে গান ও নাট্যপালা লেখার কাজ।

গান গেয়ে সমাজকে জাগানোর দ্বায়িত্বে স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নেন, পাশাপাশি চলে নাট্যপালা মঞ্চায়ন। সমাজ রাজনীতি বিষয়ে গোকুলানন্দের জ্ঞান ও মতাদর্শ ছিল স্বচ্ছ ও শক্তিশালী। গোঁড়ামি ও পশ্চাৎপদতার বিরুদ্ধে তার অবস্থান গানে গানে স্পষ্ট করেন। এজন্যে কম লাঞ্ছনা গঞ্জনা সইতে হয়নি গোকুলানন্দকে। সমাজের উচ্চশ্রেণীর ব্যক্তিরা যারা তাকে একসময় 'পাগল', 'কাক' ইত্যাদি বিশেষনে অভিহীত করেছে, তারাই একসময় তাকে "গীতিস্বামী" নামক সম্মানসূচক উপাধিতে ভূষিত করতে বাধ্য হয়েছে।

গীতিস্বামীর সামাজিক সংস্কার মুলক রচনারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো - 'মাতৃমঙ্গল গীতাভিনয়', 'সমাজ সংস্কার' ইত্যাদি নাটকগুলো। গোকুলানন্দ গীতিস্বামী রচিত পদাবলী কীর্ত্তনের মধ্যে - বাসক, নৌকাবিলাস, মোহিনীবেশ, মান, মাথুর ইত্যাদি নানান রসকীর্ত্তনগীতির কথা উল্লেখ করা যায়। এছাড়া বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সমাজ নিয়ে অসংখ্য সমাজ-সংস্কারমুলক গান, কবিতা এবং নাটকের পাশাপাশি নীতিশাস্ত্র বা চরিত্র গঠনমুলক নানান বাণী রেখে গিয়েছেন।

বাংলাদেশ ভারত দুদেশেই মণিপুরী সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয় এই গীতিকবি ১৯৬২ সালের ১০ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন, সেদিন ত্রিপুরা সরকার গোটা রাজ্যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।

নিউজজি/পি.এম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন