শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ , ১১ জুমাদাউস সানি ১৪৪৬

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

অ্যাপল না এনভিডিয়া: কে এখন বিশ্বের সবচেয়ে দামী প্রতিষ্ঠান?

নিউজজি ডেস্ক ২৭ অক্টোবর , ২০২৪, ১৩:৫১:২৭

96
  • সংগৃহীত

ঢাকা: বিশ্বরে সবচেয়ে দামী প্রতিষ্ঠান হওয়ার ইঁদুর দৌড়ে অনেকদিন ধরেই সক্রিয় তিনটি প্রতিষ্ঠান: অ্যাপল, এনভিডিয়া ও মাইক্রোসফট। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত তাঁদের প্রত্যেকেই কখনো না কখনো শীর্ষে অবস্থান করেছে। তবে যে যখনই শীর্ষে থাকুক, যত সময়ের জন্যেই থাকুক, বাজার মূলধনের দিক থেকে নিজেদের মধ্যে এদের দূরত্ব ছিল সামান্যই। উল্লেখ্য, এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের বাজারমূল্যই ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের উপরে।

কে এগিয়ে অ্যাপল না এনভিডিয়া? 

গত শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বিশ্বের সবচেয়ে দামী প্রতিষ্ঠানের খেতাবটি কিছু সময়ের জন্য অ্যাপলের কাছ থেকে চলে যায় এনভিডিয়ার হাতে। লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ গ্রুপ (এলএসইজি) এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দিনের লেনদেন চলাকালীন সময় এক পর্যায়ে এনভিডিয়ার বাজারমূল্য পৌঁছে যায় ৩ দশমিক ৫৩ ট্রিলিয়ন ডলারে। আর তাতেই অ্যাপলের ৩ দশমিক ৫২ ট্রিলিয়ন ডলার বাজারমূল্যকে ছাপিয়ে শীর্ষে উঠে আসে এনভিডিয়া।

তবে দিনের লেনদেন শেষ হতে হতে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে পারেনি এআই চিপ তৈরির শীর্ষ প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া। শুক্রবার নিজেদের বাজারমূল্য শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হলেও ৩ দশমিক ৪৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারমূল্য নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থেকেই দিন শেষ করে এনভিডিয়া।

আইফোন নির্মাতা অ্যাপলের বাজারমূল্যও শুক্রবার শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩ দশমিক ৫২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছয়। অবশ্য নিজেদের ঘাড়ে এনভিডিয়ার নিঃশ্বাস স্পষ্টই অনুভব করার কথা স্টিভ জবসের প্রতিষ্ঠিত অ্যাপলের। উল্লেখ্য, দিনশেষে মাইক্রোসফটের বাজারমূল্য শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ১৮ ট্রিলিয়ন ডলারে।

এই রিপোর্ট লেখার সময় প্রতিষ্ঠান তিনটির বাজারমূল্য:

অ্যাপল- ৩ দশমিক ৫২ ট্রিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ৪২১ কোটি ৫৩ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি)

এনভিডিয়া- ৩ দশমিক ৪৭ ট্রিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ৪১৫ কোটি ৫৪ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি)

মাইক্রোসফট- ৩ দশমিক ১৮ ট্রিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩৮০ কোটি ৮১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি)

উল্লেখ্য, চলতি অর্থ বছরে (২০২৪-২৫) বাংলাদেশের বাজেটের পরিমাণ ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।

এনভিডিয়ার সাম্প্রতিক সাফল্যের রহস্য

চলতি বছর এখন পর্যন্ত এনভিডিয়ার বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯০ শতাংশ। আর চলতি মাসেই (অক্টোবরে) সেটা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৮ শতাংশ। এই রেকর্ড সাফল্যের পেছনে মূল কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা।

২০২২ সালে ওপেনএআই চ্যাটজিপিটি নামক চ্যাটবট বাজারে আনার পর থেকেই জেনারেটিভ এআই (জেন এআই) ভিত্তিক বিভিন্ন টুল ও ফিচারের ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। জেন এআই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন টুল তৈরিতে প্রয়োজন হয় শক্তিশালী সার্ভারে সমৃদ্ধ ডেটা সেন্টারের। আর এইসব হাই-এন্ড সার্ভার তৈরির জন্য দরকার পড়ে শক্তিশালী এআই চিপের।

বর্তমানে এআই চিপের ৮০ শতাংশ বাজার এনভিডিয়ার দখলে। বিশ্বজুড়ে বিশেষায়িত এআই চিপের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষাপটে তর তর করে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির বাজার মূলধন। গত জুন মাসেও মাইক্রোসফটকে পেছনে ফেলে কিছু সময়ের জন্য সবচেয়ে দামী প্রতিষ্ঠানের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করেছে চিপ উৎপাদনকারী এই প্রতিষ্ঠানটি।

১৯৯০’র দশক থেকেই কম্পিউটার ও ভিডিওগেমসের গ্রাফিক্স প্রসেসর (গ্রাফিক্স কার্ড) তৈরির জন্য সুপরিচিত এনভিডিয়া। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উচ্চ মানের ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ডে ‘রে ট্রেসিং’ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে শুরু করে, ফলে হাই-এন্ড কম্পিউটার গেমসপ্রেমীদের মাঝে এনভিডিয়ার আরটিএক্স সিরিজের গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) দারুন জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

তবে চলতি বছর শেয়ার বাজারে এনভিডিয়ার আকাশছোঁয়া সাফল্যের মূল কারিগর তাঁদের বিশেষায়িত এআই চিপ। এআই কম্পিউটিং এর জন্য প্রয়োজনীয় সিস্টেম তৈরিতে যে শক্তিশালী সেমিকন্ডাক্টর বা চিপের প্রয়োজন হয় সেগুলোর বৈশ্বিক যোগানদাতাদের মধ্যে একচ্ছত্র আধিপত্য এখন এনভিডিয়ার।

শেয়ার বাজারে এনভিডিয়ার ঊর্ধ্বগতি মোটামুটি পুরো বছরজুড়েই অব্যাহত ছিল। তবে চলতি মাসে সেটা আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। এর পেছনে কারণ অবশ্য বেশ কয়েকটি। এআই খাতে বিনিয়োগের বিপরীতে আশানুরূপ আয় না হওয়ার কারণে কয়েক মাস আগেও বিনিয়োগকারীদের মাঝে এআই নিয়ে আশাবাদ কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি এআই প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক আয়ের বিবরণী প্রকাশিত হওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা পুনরুদ্ধার হয় শতভাগ।

এই যেমন ডেটা স্টোরেজ ডিভাইস নির্মাতা ওয়েস্টার্ন ডিজিটালের গত প্রান্তিকের আয়ের বিবরণী বাজার বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসকেও হার মানিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর। কেননা ডেটা স্টোরেজ ডিভাইসের বিক্রি বেশি হওয়ার অর্থ হচ্ছে ডেটা সেন্টারের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া। আর নতুন ডেটা সেন্টার তৈরি করতে প্রয়োজন এআই চিপ দিয়ে তৈরি শক্তিশালী সার্ভারের।

পাশাপাশি আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমাতে পারে, বিনিয়োগকারীদের এমন আশাবাদের প্রেক্ষিতেও এনভিডিয়ার মতো এআই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ার বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও সুসংহত করতে সক্ষম হয়েছে।

এছাড়া সম্প্রতি এআই গবেষণার জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই  ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার নতুন বিনিয়োগ উত্তোলনে সমর্থ হয়, যেখানে এনভিডিয়া নিজেও ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। নতুন বিনিয়োগে ওপেনএআই-এর বাজারমূল্য প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৫৭ বিলিয়ন ডলারে।

নিউজজি/পি.এম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন