মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ , ৭ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা
  >
ক্রিকেট

নাইমের সেরা বোলিং, ম্যাথুউজের ১ রানের আফসোস

শামীম চৌধুরী, চট্টগ্রাম থেকে ১৬ মে , ২০২২, ১৭:০৩:১৮

380
  • ম্যাথুউজকে ১৯৯রানে আউট করে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের পরও এই ব্যাটারকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন নাইম হাসান। ছবি-ক্রিকইনফো



শ্রীলংকা ১ম ইনিংস : ৩৯৭/১০ (১৫৩.০ ওভারে)

শ্রীলংকাকে ৪০০-এর মধ্যে আটকে ফেলার টার্গেট ছিল বাংলাদেশ দলের। অফ স্পিনার নাইম হাসান প্রত্যাবর্তন টেস্টে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং (৩০-৪-১০৫-৬) সে কথা রাখতে পেরেছে মুমিনুলের দল। ৩৯৭-এ থামিয়ে দিয়েছে শ্রীলংকাকে বাংলাদেশ দল।
তবে শ্রীলংকার ইনিংসের শেষ বলে ম্যাথুউজের জন্য আফসোস করেছে সবাই। স্বভাববিরোধী ব্যাটিংয়ে ৫৭৮ মিনিট সংযমের পরিচয় দেয়া অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুুউজ নিজের ভুলে হাতছাড়া করেছেন ডাবল সেঞ্চুরি।

টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ডাবলটা যখন অবধারিত বলে ধরে নিয়েছেন সবাই, অপেক্ষা মাত্র ১ রান, তখন নাইম হাসানের বলে স্কোয়ার লেগে সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে থেমেছেন ম্যাথুউজ ১৯৯-এ! ম্যাথুউজকে ডাবল সেঞ্চুরি করতে না দিয়েও উচ্ছ্বাস নেই ততোটা। দৌড়ে ছুটে এসে ম্যাথুউজকে দিয়েছেন নাইম হাসান সান্ত্বনা।
 ২৯৯-এ কাঁটা পড়ে ত্রিপল সেঞ্চুরি মিস করার দৃস্টান্ত শুধু নিউ জিল্যান্ডের মার্টিন ক্রো'র। শ্রীলংকার বিপক্ষে ওয়েলিংটনে ১৯৯১ সালে ত্রিপল সেঞ্চুরি হাতছাড়া করার সেই আক্ষেপটা এখনো পোড়ায় কিউই লিজেন্ডারিতে। ১৯৯-তে কাঁটা পড়া ভাগ্যাহতদের তালিকায় ১১তম ব্যাটার ম্যাথুউজ।

ডাবল বঞ্চিত হওয়া ভাগ্যাহতদের তালিকা তৈরি করেছেন পাকিস্তানের মুদাস্সর নজর ১৯৮২ সালে, ফয়সালাবাদ টেস্টে, ভারতের বিপক্ষে। এই তালিকায় ১৯৮৬ সালে ভারতের আজহারউদ্দিন, ১৯৯৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার ইলিয়ট, ১৯৯৭ সালে শ্রীলংকার জয়সুরিয়া, ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ ওয়াহ, ২০০৬ সালে পাকিস্তানের ইউনিস খান, ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার স্মিথ, ২০১৬ সালে ভারতের লোকেশ রাহুল, ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ডিন এলগার, ২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ডু প্লেসির পাশে ভাগ্যাহতদের তালিকায় এখন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুউজের নাম।

সবচেয়ে বেশি সময় ব্যাট করে ১ রানের জন্য ডাবল হাতছাড়া করা ভাগ্যাহতদের মধ্যে সবার উপরে ছিলেন ডিন এলগার। পোচেস্টর্মে বাংলাদেশের বিপক্ষে তার ৫৫৩ মিনিটের ইনিংসকে ছাড়িয়ে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুউজ ব্যাটিং করেছেন ৫৭৮ মিনিট।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৯৯-এ কাঁটা পড়া ব্যাটারদের তালিকায় অবশ্য প্রথম নন ম্যাথুউজ। ২০১৭ সালে পোচেষ্টর্মে দক্ষিণ আফ্রিকার ডিন এলগারের ১৯৯ রানে কাঁটা পড়ার দৃষ্টান্ত এতোদিন ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে ডাবল হাতছাড়া করার একমাত্র দৃষ্টান্ত। সোমবার সাগরিকায় এই তালিকা সম্প্রসারিত করেছেন ম্যাথুউজ। বাংলাদেশের মাটিতে ১৯৯-এ কাঁটা পড়া প্রথম ব্যাটার ম্যাথুউজ।     
প্রথম ইনিংসকে ৫'শ পর্যন্ত টেনে নেয়ার টার্গেট করে দ্বিতীয় দিন ব্যাট করবে শ্রীলংকা। প্রথম দিন শেষে ২৫৮/৪ স্কোরে সন্তুষ্ট হয়ে সে লক্ষ্যের কথাই জানিয়েছিলেন কুশল মেন্ডিজ।
দ্বিতীয় দিন যেভাবে ৫ম উইকেট জুটি শুরু করেছে, প্রথম ঘন্টা থেকেছে অবিচ্ছিন্ন, তাতে এই টার্গেটটা কঠিন মনে হয়নি। লাঞ্চের আগে-পরে মিলিয়ে ২৩ মিনিটে শ্রীলংকার ইনিংসের উপর নাইম-সাকিব একটা ঝড় বইয়ে দিয়েছিলেন।লাঞ্চের আগে অফ স্পিনার নাইম হাসানের একটি স্পেল (৫-০-২১-২) এবং লাঞ্চের পর বাঁ হাতি স্পিনার সাকিবের (৯-৩-১১-২) একটা স্পেলে দমকা হাওয়ায় মাত্র ১৬ রানে পড়েছে শ্রীলংকার ৪ উইকেট। দু'জনেই আবার এক ওভারে পেয়েছেন ২টি করে উইকেট। টি ব্রেকের পর শেষ ২ জুটির ৫১ মিনিট স্থায়ীত্ব পাওয়া ইনিংসেও নাইমের একটি স্পেলে (৫-১-৮-২) গুটিয়ে ফেলছে শ্রীলংকা ইনিংস। এদিন শ্রীলংকাকে সহজে ব্যাট করতে দেননি বাংলাদেশের দুই স্পিনার। ১৩৯ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়েছে তারা।  
১১৪ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে এদিন ম্যাথুউজ দিয়েছেন ব্যাটিংয়ে নেতৃত্ব। যোগ করেছেন ৮৫ রান। চান্দিমালের সঙ্গে ২০৬ মিনিটে ৫ম উইকেট জুটিতে ১৩৬ রানে দিয়েছেন ম্যাথুউজ নেতৃত্ব। টেল এন্ডার বিশ্ব ফার্নান্ডো সেখানে ৮৪  বল ফেস করে ১৭ রানে অপরাজিত ছিলেন ব্যাটিং পার্টনার ম্যাথুউজের অনুপ্রেরনায়।  
 লাঞ্চের মিনিট দশেক আগে অফ স্পিনার নাইম হাসান দিয়েছেন ঝাঁকুনি। তাতেই লক্ষ্য পূরণ দুরূহ হয়ে গেছে শ্রীলংকার। শ্রীলংকাকে প্রথম ইনিংসে ৪'শর মধ্যে থামিয়ে দেয়ার যে লক্ষ্যটা নিয়ে দ্বিতীয় দিন ফিল্ডিংয়ে নেমেছে বাংলাদেশ, সেই লক্ষ্য পূরণের পথে বাংলাদেশ দল। নাইম হাসানের একটা স্পেল (৪-০-১৬-২) দিয়েছে দিনের প্রথম সেশনে বাংলাদেশ দলকে স্বস্তি। নাইমের বোলিংয়ে প্রথম সেশনে ৬৮ রানে হারিয়েছে শ্রীলংকা ২ উইকেট।
দ্বিতীয় সেশনে সেখানে শ্রীলংকা ৫১ রানে যোগ করে হারিয়েছে ২ উইকেট। প্রথম স্পেলে (৭-০-১৪-০) উইকেটহীন সাকিব দ্বিতীয় স্পেলে শ্রীলংকাকে আঁতকে দিয়েছিলেন। লাঞ্চের পর দ্বিতীয় বলে রমেশ মেন্ডিজকে (১) বোল্ড করেছেন। পরের ডেলিভারিতে এমবুলডিনিয়া (০) এলবিডাব্লুউ।
টি ব্রেকের পর প্রথম ব্রেক থ্রুটা দিয়েছেন নাইম হাসান, কুইকারে আসিথা ফার্নান্ডোকে করেছেন বোল্ড (২৭ বলে ১)। তার শেষ স্পেলের ৫ম ওভারে স্কোয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে থেমেছে ম্যাথুউজের ক্লাসিক ইনিংস (৩৯৭ বলে ১৯ চার, ১ ছক্কায় ১৯৯)। শ্রীলংকা প্রথম ইনিংসে ব্যাট করেছে ৬৭৫ মিনিট। যার মধ্যে ম্যাথুউজে ইনিংসটি ছিল ৫৭৮ মিনিট।  
দ্বিতীয় দিনের চতুর্থ ওভারেই শ্রীলংকার ৫ম জুটি বিচ্ছিন্ন করার সুযোগ এসেছিল। খালেদের আউট সুইং ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন ম্যাথুউজ। তবে ব্যাটের কানায় বলের স্পর্শটা আন্দাজ করতে পারেননি বোলার খালেদ, উইকেট কিপার লিটন। কেউ আপীলই করেননি। বোলার খালেদের অভিব্যক্তিতেও ছিল না তেমন কিছু। অথচ, টিভি রিপ্লেতে-আলট্রা এজ স্পষ্ঠ করেছে বল ব্যাটে লাগার বিষয়টা। ১১৯ রানে বাংলাদেশ বোলার-ফিল্ডারদের বোকামিতে বেঁচে যাওয়া সেই ম্যাথুউজ ভাগ্যক্রমে যোগ করেছেন আরো ৮০ রান।
টি ব্রেকের আগের ওভারে সাকিব তৃতীয় স্পেল করতে এসে ৯ম জুটি বিচ্ছিন্ন করার পথ সুগম করেছিলেন। তবে মিড অনে মুশফিক বিশ্ব ফার্নান্ডোর সহজ ক্যাচটি ফেলে দিলে অবধারিত উইকেট থেকে বঞ্চিত হন সাকিব।  
প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও ব্রেক থ্রু দিয়েছেন নাইম হাসান। এবং যথারীতি প্রথম দুই উইকেট চট্টগ্রামের এই লোকাল বয়ের। দিনে প্রথম স্পেলের জন্য লাঞ্চের কিছুক্ষণ আগে পেয়েছেন হাতে বল। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে তাকে উইকেট উপহার দিয়েছেন চান্দিমাল। বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিফটির চেয়ে সেঞ্চুরি বেশি (২ ফিফটি, ৪ সেঞ্চুরি) এই ব্যাটারের।
স্বাচ্ছন্দে ফিফটি উদযাপনের পর সেঞ্চুরিতে চোখ রাখার কথা তার। অথচ, নাইমকে রিভার্স সুইপ করতে যেয়ে ৬৬ রানের মাথায় এলবিডাব্লুউতে থেমেছেন। আম্পায়ার ক্যাটেলবার্গের সিদ্ধান্তের রিভিউ আপীল করেও বোকামি করেছেন চান্দিমাল। নষ্ঠ করেছেন আপীল। ম্যাথুউজের সঙ্গে চান্দিমালের ২০৬ মিনিটে ১৩৬ রানের এই পার্টনারশিপ ভেঙ্গে যাওয়ার পর ৬ষ্ঠ জুটিকে সেট হতে দেননি নাইম। ৪ বল পর ডিকভেলা (৩) কাট করতে যেয়ে নাইমের বোল্ড আউটে গেছেন ফিরে।
৪ বছর আগে টেস্ট অভিষেকে ৫ উইকেট পেয়েছেন অফ স্পিনার নাইম হাসান চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে (১৪-২-৬১-৫)। ১৫ মাস পর টেস্টে প্রত্যাবর্তনে শ্রীলংকার বিপক্ষে বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে করেছেন সেরা বোলিং। এর আগে শ্রীলংকার বিপক্ষে ২২ টেস্টে সেরা বোলিং ছিল সাকিবের (২৮.৪-৪-৭০-৫)। প্রেমাদাসায় সাকিবের সেই রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়ে প্রথম বোলার হিসেবে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৬ উইকেট পেয়েছেন চট্টগ্রামের লোকাল বয় নাইম হাসান (৩০-৪-১০৫-৬)।

তার প্রত্যাবর্তন টেস্টে সাকিবের টেস্ট প্রত্যাবর্তনও প্রত্যাশিত হয়েছে। নেটে বোলিং না করে খেলার ইয়েস কার্ড পেয়ে করেছেন সাকিব ৩৯ ওভার বোলিং। পেয়েছেন ৩ উইকেট (৩৯-১২-৬০-৩)। করোনা নেগেটিভ হওয়ার খবর শুনে বিসিবি সভাপতি বলেছিলেন-'সাকিব চাইলেই টেস্ট খেলতে পারবে।' আসলেই ঠিক বলেছেন তিনি। অনুশীলনের দরকার নেই, ফিটনেস টেস্টেরও দরকার নেই। চাইলেই সাকিব খেলতে পারেন, করতে পারেন পারফর্ম।



 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন