নাইম-সাকিবের আলোচিত স্পেল, ডাবলের পথে ম্যাথুউজ

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ৩৭৫/৮  (১৪০.০ ওভারে)
(২য় দিন টি ব্রেক পর্যন্ত)

প্রথম ইনিংসকে ৫শ পর্যন্ত টেনে নেয়ার টার্গেট করে দ্বিতীয় দিন ব্যাট করবে শ্রীলঙ্কা। প্রথম দিন শেষে ২৫৮/৪ স্কোরে সন্তুষ্ট হয়ে সে লক্ষ্যের কথাই জানিয়েছিলেন কুশল মেন্ডিজ।

দ্বিতীয় দিন যেভাবে ৫ম উইকেট জুটি শুরু করেছে, প্রথম ঘণ্টা থেকেছে অবিচ্ছিন্ন, তাতে এই টার্গেটটা কঠিন মনে হয়নি। লাঞ্চের আগে-পরে মিলিয়ে ২৩ মিনিটে শ্রীলঙ্কার ইনিংসের উপর নাইম-সাকিব একটা ঝড় বইয়ে দিয়েছিলেন।

লাঞ্চের আগে অফ স্পিনার নাইম হাসানের একটি স্পেল (৫-০-২১-২) এবং লাঞ্চের পর বাঁ হাতি স্পিনার সাকিবের (৯-৩-১১-২) একটা স্পেলে দমকা হাওয়ায় মাত্র ১৬ রানে পড়েছে শ্রীলঙ্কার ৪ উইকেট। দুজনেই আবার এক ওভারে পেয়েছেন ২টি করে উইকেট। তবে এই চাপটা অব্যাহত রাখতে পারেনি বাংলাদেশ দল।

নবম উইকেট জুটি ১২১ মিনিটে অবিচ্ছিন্ন ৪৭ রান যোগ করায় দ্বিতীয় দিন টি পর্যন্ত পার করেছে। দ্বিতীয় দিনের টি ব্রেক পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার স্কোর ৩৭৫/৮। ম্যাথুউজ দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি থেকে ২২ রান দূরে।

১১৪ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে এদিন দুই সেশনে যোগ করেছেন তিনি ৬০ রান। দ্বিতীয় দিনের টি ব্রেকের সময়ে ১৭৮ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে আছেন তিনি। টেল এন্ডার বিশ্ব ফার্নান্ডো সেখানে ৭৭ বল ফেস করে ১৭ রানে ব্যাটিংয়ে।  
 

লাঞ্চের মিনিট দশেক আগে অফ স্পিনার নাইম হাসান দিয়েছেন ঝাঁকুনি। তাতেই লক্ষ্য পূরণ দুরূহ হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কার। শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ইনিংসে ৪শর মধ্যে থামিয়ে দেয়ার যে লক্ষ্যটা নিয়ে দ্বিতীয় দিন ফিল্ডিংয়ে নেমেছে বাংলাদেশ, সেই লক্ষ্য পূরণের পথে বাংলাদেশ দল। নাইম হাসানের একটা স্পেল (৪-০-১৬-২) দিয়েছে দিনের প্রথম সেশনে বাংলাদেশ দলকে স্বস্তি। নাইমের বোলিংয়ে প্রথম সেশনে ৬৮ রানে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা ২ উইকেট।

দ্বিতীয় সেশনে সেখানে শ্রীলঙ্কা ৫১ রানে যোগ করে হারিয়েছে ২ উইকেট। প্রথম স্পেলে (৭-০-১৪-০) উইকেটহীন সাকিব দ্বিতীয় স্পেলে শ্রীলঙ্কাকে ভড়কে দিয়েছিলেন। লাঞ্চের পর দ্বিতীয় বলে রমেশ মেন্ডিজকে (১) বোল্ড করেছেন। পরের ডেলিভারিতে এমবুলডিনিয়া (০) এলবিডাব্লুউ।
 
দ্বিতীয় দিনের চতুর্থ ওভারেই শ্রীলঙ্কার ৫ম জুটি বিচ্ছিন্ন করার সুযোগ এসেছিল। খালেদের আউট সুইং ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন ম্যাথুউজ। তবে ব্যাটের কানায় বলের স্পর্শটা আন্দাজ করতে পারেননি বোলার খালেদ, উইকেট কিপার লিটন। কেউ আপিলই করেননি। বোলার খালেদের অভিব্যক্তিতেও ছিল না তেমন কিছু। অথচ, টিভি রিপ্লেতে-আলট্রা এজ স্পষ্ট করেছে বল ব্যাটে লাগার বিষয়টা। ১১৯ রানে বাংলাদেশ বোলার-ফিল্ডারদের বোকামিতে বেঁচে যাওয়া সেই ম্যাথুউজই এখন টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দিকে বাড়িয়েছেন পা।

টি ব্রেকের আগের ওভারে সাকিব তৃতীয় স্পেল করতে এসে ৯ম জুটি বিচ্ছিন্ন করার পথ সুগম করেছিলেন। তবে মিড অনে মুশফিক বিশ্ব ফার্নান্ডোর সহজ ক্যাচটি ফেলে দিলে অবধারিত উইকেট থেকে বঞ্চিত হন সাকিব। 

প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও ব্রেক থ্রু দিয়েছেন নাইম হাসান। এবং যথারীতি প্রথম দুই উইকেট চট্টগ্রামের এই লোকাল বয়ের। দিনে প্রথম স্পেলের জন্য লাঞ্চের কিছুক্ষণ আগে পেয়েছেন হাতে বল। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে তাকে উইকেট উপহার দিয়েছেন চান্দিমাল। বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিফটির চেয়ে সেঞ্চুরি বেশি (২ ফিফটি, ৪ সেঞ্চুরি) এই ব্যাটারের।

স্বাচ্ছন্দে ফিফটি উদযাপনের পর সেঞ্চুরিতে চোখ রাখার কথা তার। অথচ, নাইমকে রিভার্স সুইপ করতে যেয়ে ৬৬ রানের মাথায় এলবিডাব্লুউতে থেমেছেন। আম্পায়ার ক্যাটেলবার্গের সিদ্ধান্তের রিভিউ আপিল করেও বোকামি করেছেন চান্দিমাল। নষ্ট করেছেন আপিল। ম্যাথুউজের সঙ্গে চান্দিমালের ২০৬ মিনিটে ১৩৬ রানের এই পার্টনারশিপ ভেঙ্গে যাওয়ার পর ৬ষ্ঠ জুটিকে সেট হতে দেননি নাইম। ৪ বল পর ডিকভেলা (৩) কাট করতে যেয়ে নাইমের বোল্ড আউটে গেছেন ফিরে।

৪ বছর আগে টেস্ট অভিষেকে ৫ উইকেট পেয়েছেন অফ স্পিনার নাইম হাসান চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ১৫ মাস পর টেস্টে প্রত্যাবর্তনেও ৫ উইকেটের হাতছানি দিচ্ছে তার সামনে। শ্রীলঙ্কার পড়ে যাওয়া ৮ উইকেটের মধ্যে ৪টি পেয়েছেন এই অফ স্পিনার (২৫-৩-৯৭-৪)। প্রত্যাবর্তন টেস্টে সাকিবও চেনা রূপে করেছেন আত্মপ্রকাশ (৩৭-১০-৬০-৩)।