মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ , ২০ জুমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

খেলা

সাইফ ঝড়ে সহজ জয়ে আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে প্রতিশোধ বাংলাদেশের

ক্রীড়া ডেস্ক অক্টোবর ৬, ২০২৫, ০১:০০:০২

352
  • ছবি: ক্রিকিইনফো

টানা দুই জয়ে আগেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। তারপরও দলটির চিন্তার একটা জায়গা ছিল হঠাৎ ব্যাটিং ধস। এবার তেমন কিছু হলো না। তিন বিভাগে দাপুটে পারফরম‍্যান্স প্রদর্শন করে টিম টাইগার্স। রবিবার সাইফ হাসানের ৭ ছক্কাময় ম্যাচে অনেকটা সহজেই ৪ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে টিম টাইগার্স। এরফলে ৭ বছর পর আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে মধুর প্রতিশোধ নিল জাকের আলির নেতৃত্বাধীন দল। 

এরআগে ২০১৮ সালে ভারতের দেরাদুনে বাংলাদেশকে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইওয়াশ করেছিল আফগানিস্তান। ৫ বছর পর বাংলাদেশও তাদের একই ফরম্যাটে হোয়াইটওয়াশ করে। তবে সিলেটে অনুষ্ঠিত সিরিজটি ছিল দুই ম্যাচের। এবার প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রতিশোধটা ঠিকঠাকই নিল টিম বাংলাদেশ। ৭ ছক্কায় ৩৮ বলে ৬৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে বাংলাদেশের নায়ক সাইফ হাসান। এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা ও ভারতের বিপক্ষে দারুণ দুটি ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যান উপহার দিলেন আরেকটি মনে রাখার মতো ইনিংস। তার সঙ্গে ২৪ বলে ৩৫ রানের জুটিতে নুরুল হাসান সোহানের অবদান ৯ বলে ১০। ছক্কায় তিনিই শেষ করেন ম‍্যাচ।

শারজাহতে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রান করে আফগানিস্তান। দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ৩২ রান করেন রাসুলি। জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই দারুণ ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। বিশেষ করে সাইফ হাসান। ২২ গজে নেমেই চেনা রুপে আর্বিভূত হন এ ডানহাতি। তার ঝড়ে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে টিম টাইগার্স লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ১২ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখে। এরফলে ৩ ম্যাচের সিরিজ লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা নিজেদের করে নিল ৩-০ ব্যবধানে। তার মানে টি-টোয়েন্টি আফগানদের হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডোবাল সাইফ-নুরুলরা।

রান তাড়ায় শুরুটা বেশ দেখে শুনে করেছিলেন টাইগার দুই ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন আর তানজিদ হামান তামিম। যে কারনে মুজিব উর রহমানের প্রথম ওভার মেডেন দেন তারা।  তবে তৃতীয় ওভারে মুজিবের ওপর চড়াও হন তারা। পারভেজ ছক্কা মারার পর তানজিদ চার মারেন।

সাবধানী শুরু করেও ইনিংসটা বড় করতে পারেননি পারভেজ। ওমরজাইয়ের স্লোয়ার বলে মিড অফে রশিদের হাতেই ধরা পড়েন (১৬ বলে ১৪ রান করে।  তবে তিনি ফিরলেও পখ হারায়নি বাংলাদেশ। ২২ গজে নেমেই সাইফ হাসান নিজের সভাবসুলভ ব্যাটিং করেন। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারটা দারুণভাবে কাজে লাগায় বাংলাদেশ। অভিষিক্ত বশির এই ওভারে দেন ১৩ রান। সাইফ হাসান ছক্কা মারেন, তানজিদ হাঁকান একটি চার।

তানজিদ দারুণ ব্যাটিং করার সুবাদে সপ্তম ওভারে রশিদকে হাঁকান দুটি চার।  সাইফের সঙ্গে গড়ে তোলেন ৫৫ রানের জুটি। তবে আরেকবার জীবন পেয়েও ইনিংসটা বড় হয়নি তার। সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়েও পরের বলেই আউট হয়ে যান (৩৩ বলে ৩৩)। তবে বাংলাদেশকে চাপে পড়তে দেননি সাইফ। তানজিদের বিদায়ের পর চোখধাঁধানো এক শটে বল আছড়ে ফেলেন তিনি স্টেডিয়ামের বাইরে।

মুজিবের স্পেলের শেষ দুটি বলে পরপর বিদায় নেন জাকের আলি (১০) ও শামীম হোসেন (০)। সাইফ তখন বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিংয়ে রাশিদ খানের শেষ ওভার পার করে দেন মেডেন খেলে। এরপর বাশির আহমেদকে টানা দুটি বিশাল ছক্কায় পঞ্চাশে পৌঁছে যান ৩২ বলে। সেখানেই না থেমে আরেকটি ছক্কায় তিনি বল ফেলেন গ্যালারিতে। নুরুল হাসান সোহানের ছক্কায় শেষ হয় ম্যাচ।

এরআগে মোস্তাফিজুর রহমানকে একাদশে বাইরে রেখে রবিবার সিরিজের শেষ ম্যাচে মাঠে নামে বাংলাদেশ। তবে এদিন তার অভাব বুঝতে দেননি সাইফ উদ্দিন, তানজিদ হাসান সাকিব, নাসুম আহমেদরা। টস জিতে নতুন বলে ভালো বোলিং করেন শরিফুল ইসলাম। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই দলকে ব্রেকথ্রু এনে দেন এই বাঁহাতি পেসার। ইব্রাহিম জাদরানকে ৭ রানে ফিরিয়ে ২০ রানেই আফগানিস্তানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন তিনি। আরেক ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজকে ১২ রানে ফেরান নাসুম। তিনে নেমে ভালো শুরু পেয়েছিলেন সেদিকুল্লাহ অটল। তবে উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। ২৩ বলে ২৮ রান করা এই টপ অর্ডার ব্যাটারকে ফিরিয়ে দেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।

এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে সাইফ উদ্দিন ফেরান ওয়াফিউল্লাহ তারাখিলকে , রিশাদ হোসেন তুলে নেন আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে ও মোহাম্মদ নবিকে ফেরান নাসুম। তাতে ৮২ রানেই ষষ্ঠ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। দলের বিপর্যয়ে হাল ধরার চেষ্টা করেন রশিদ খান। আফগান অধিনায়ক উইকেটে এসেই শট খেলার চেষ্টা করেন। আর তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে! এক চার ও ছক্কায় ৭ বলে ১২ রানে থামেন তিনি।

শেষদিকে এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলার চেষ্টা করেন দারউইস রাসুলি। ২৯ বলে ৩২ রান করেন তিনি। এ ছাড়া দশ নম্বরে ব্যাট করতে নামা মুজিবউর রহমানও দারুণ ব্যাটিং করেন। ১৮ বলে অপরাজিত ২৩ রান করেন তিনি। তাদের কল্যাণেই চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পায় আফগানিস্তান। তবে সাইফ হাসানের ঝড়ে তাদের সেই স্কোর বাংলাদেশ টপকে যায় সহজেই। এর সঙ্গে সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ৩-০ তে জিতে নিয়ে আফগানদের হোয়াইটওয়াশের স্বাদও দিল টিম টাইগার্স। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৪৩/৯ (গুরবাজ ১২, ইব্রাহিম ৭, আটাল ২৮, তারাখিল ১১, রাসুলি ৩২, ওমারজাই ৩, নাবি ১, রশিদ ১২, এহমেদজাই ০, মুজিব ২৩*, বাশির ২*; শরিফুল ৪-০-৩৩-১, নাসুম ৪-০-২৪-২, তানজিম ৪-০-২৪-২, সাইফ উদ্দিন ৩-০-১৫-৩, সাইফ হাসান ১-০-৬-০, রিশাদ ৪-০-৩৯-১)।

বাংলাদেশ: ১৮ ওভারে ১৪৪/৪ (পারভেজ ১৪, তানজিদ ৩৩, সাইফ ৬৪*, জাকের ১০, শামীম ০, সোহান ১০*; মুজিব ৪-০-২৬-২, ওমারজাই ৩-০-১২-১, বাশির ৩-০-৩৮-০, রশিদ ৪-১-১৩-০, এহমেদজাই ৪-০-৫০-১)

ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজ বাংলাদেশ জয়ী ৩-০ ব্যবধানে।

ম্যাচসেরা: সাইফ হাসান।

সিরিজ সেরা: নাসুম আহমেদ

নিউজজি/সিআর

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন