বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ , ১৭ জুমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫

খেলা

সাকিবের মাইলস্টোনের দিনে বাংলাদশের সর্বোচ্চ স্কোর

শামীম চৌধুরী মার্চ ১৮, ২০২৩, ১৮:২৬:৪৪

247
  • সাকিব-তৌহিদ হৃদয়। ছবি-বিসিবি

বাংলাদেশ : ৩৩৮/৮ (৫০.০ ওভারে(৫০.০ ওভারে)

সিলেটে ৩ বছর আগে মাশরাফির ফেয়ারওয়েল ম্যাচে লিটন ঝড়ে (১৪৩ বলে ১৭৬) ৩২২/৩ স্কোর দেখেছে দর্শক। ওটাই ছিল দেশের মাটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর।

তবে সেই রেকর্ডটা ছাড়িয়ে সিলেটে প্রত্যাবর্তন ম্যাচে বাংলাদেশ করেছে নিজেদের সর্বোচ্চ ওয়ানডে স্কোর (৩৩৮/৮)।২০১৯ বিশ্বকাপে নটিংহামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৩৩/৮ স্কোর টপকে এদিন এসেছে সর্বোচ্চ স্কোর।

এই রেকর্ড স্কোরের ম্যাচে সাকিব ৭ হাজারী ক্লাবের সদস্যপদ পেয়েছেন। তবে তার মাইলস্টোনের দিনে আক্ষেপও আছে। মাইলস্টোন ম্যাচে ৭ রানের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছেন (৮৯ বলে ৯৩) সাকিব। ওয়ানডে অভিষেকে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারের ছিল না সেঞ্চুরি।

সেই ইতিহাস রচনার হাতছানি ছিল বিপিএলের আবিস্কার তৌহিদ হৃদয়। তবে তিনিও ভাগ্যাহত। ৮ রানের জন্য মিস করেছেন অভিষেক ওয়ানডে ম্যাচে সেঞ্চুরি। 

তারপরও ৪র্থ উইকেট জুটিতে সাকিবের সঙ্গে ১২৪ বলে ১৩৫, ৫ম উইকেট জুটিতে মুশফিকুরের সঙ্গে ৪৯ বলে ৮০ রানে রেখেছেন অবদান। শেষ ৬০ বলে ৫ উইকেট হারিয়ে ৯৬ রানও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরে সহায়ক হয়েছে।   

বিতর্ক যতোই পিছু নিচ্ছে না কেনো, মাঠের সাকিব ঠিকই আছেন চেনারূপে। ছুটছেন একটার পর একটা মাইলস্টোনের নেশায়। মাত্র ১২ দিনের মধ্যে দু দুটি মাইলস্টোন। ভাবুন তো ? ১২ দিন আগে ইংল্যান্ডের রেহান আহমেদকে লং অনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ওডিআই ক্রিকেটে ৩শ' উইকেট ক্লাবের সদস্যপদ পেয়েছেন।

ওই ল্যান্ড মার্কে পৌছে ৬ হাজার রানও ৩০০ উইকেটে বিরল অলরাউন্ড ক্লাবে সর্বকালের সেরা দুই অলরাউন্ডার শ্রীলঙ্কার জয়সুরিয়া (১৩৪৩০ রান ও ৩২৩ উইকেট) এবং পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদিকে (৮০৬৪ রান ও ৩৯৮ উইকেট) ছুঁয়েছেন। সর্বকালের সেরা'র পথে পা বাড়াতে আরো একটি কৃতি গড়েছেন শনিবার। সিলেটে ১৯.৫ ওভারে কার্টিজ ক্যাম্পারকে সিঙ্গল নিয়ে ২৩ রান পূর্ণ করেই ওডিআই ক্রিকেটে তামিম ইকবালের পর (২৩৫ ম্যাচে ৮১৪৬ রান) পৌছে গেছেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ৭ হাজার রান পূর্ণ করেছেন সাকিব আল হাসান।

চট্টগ্রামে ৩০০ তম উইকেটের পর সিলেটে ৭ হাজার রান। ১২ দিনের ব্যবধানে দুটি মাইলস্টোন স্পর্শ করেছেন সাকিব। প্রথম মাইলস্টোনে লেগেছে তার ২২৭ ম্যাচ, দ্বিতীয়টিতে ২২৮ম্যাচ। ৩০০ উইকেট ক্লাবের সদস্যপদ পেতে লেগেছে ১৬ বছর ১৯৫ দিন। ৭ হাজার রান পূর্ণ করতে লেগেছে ১৬ বছর ২০৭ দিন। ৭ হাজার রান পূর্ণ করতে অবশ্য তামিমের চেয়ে ১০ ইনিংস বেশি খেলতে হয়েছে সাকিবকে।

তামিমের লেগেছে এই মাইলস্টোনে ২০৬ ইনিংস, সাকিবের সেখানে লেগেছে ২১৬ ইনিংস। ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার রানে পৌছে যেতে সাকিবকে খেলতে হয়েছে ২৬টি ইনিংস। যেভাবে ছুটছেন সাকিব, তাতে আফ্রিদির রেকর্ড টপকে যাওয়ার দিকে রেখেছেন তিনি চোখ।৩০০ উইকেটের মাইলস্টোন ম্যাচে অলরাউন্ড পারফর্ম করেছেন সাকিব (৭৫ ও ৪/৩৫)। ৭ হাজার রান পূর্ণ করার দিনেও ব্যাটিংয়ে ছিলেন উজ্জ্বল।কার্টিজ ক্যাম্পারকে পয়েন্টে পুশ করে সিঙ্গল নিয়ে ওডিআই ক্রিকেটে ৫৩তম হাফ সেঞ্চুরি উদযাপন করেছেন তিনি। সিঙ্গল-ডাবলে খেলে ৬৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন সাকিব। যে ইনিংসে বাউন্ডারি মাত্র ২টি।

পুলিশ হত্যাকারী ফেরারী আসামীর দুবাইয়ে জুয়েলারি দোকান আরাভ জুয়েলার্স উদ্বোধন করে দেশজুড়ে সমালোচিত সাকিব ক্রিকেটকে রেখেছেন অন্যস্থানে। দুবাইয়ের ওই ঘটনার  তিনদিন পর ৭ হাজারী ক্লাবের সদস্যপদের ইনিংসকে অনেক বেশি স্মরণীয় করে রাখতে পারতেন।কার্ডিফে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২১, টন্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ উইনিং ১২৪।

২০১৯ বিশ্বকাপে উপর্যুপরি ২টি সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরিহীন কেটেছে সাকিবের ২৫টি ইনিংস। ২০২১ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পার্টনার ব্যাটারের আত্মকেন্দ্রিক ব্যাটিংয়ে ৯৬ রানে অপরাজিত থেকে ড্রেসিং রুমে ফিরে যাওয়ার কষ্টটা ভুলতে পারতেন এদিন। 

২৫ ইনিংস পর সেঞ্চুরির আবহ ছিল তার ব্যাটিংয়ে। হ্যারি টেক্টরকে এক ওভারে ৫ বাউন্ডারিতে সিলেট স্টেডিয়াম মাতিয়ে রাখা সাকিব ৭ রানের জন্য ওয়ানডে ক্রিকেটে ১০ম সেঞ্চুরি উদযাপন করতে পারেননি। হুম এর সেকেন্ড স্পেলে ইয়র্কার ডেলিভারিতে সিদ্ধান্তহীন শট নিতে যেয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে থেমেছেন সাকিব সেঞ্চুরির ৭ রান আগে (৮৯ বলে ৯ চার-এ ৯৩)।ওয়ানডে ক্রিকেটে ৯০'র ঘরে থেমে যাওয়ার দৃষ্টান্ত এটাই প্রথম নয় সাকিবের। এই নিয়ে এটি ৪র্থ।

তবে ২০০৯ সালে মিরপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯২ এবং হারারেতে জিম্বাবুয়ের ২০২১ সালে হারারেতে ৯৬ রানের ইনিংস দুটিতে অবিচ্ছিন্ন ছিলেন সাকিব। ২০১৮ সালে গায়ানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯৭ এবং রোববার সিলেটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৩ রানে থেমে গেছেন সাকিব আউট হয়ে। ডেব্যুটেন্ট তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ায় চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১২৪ বলে ১৩৫ রানে নেতৃত্বটা দিয়েছেন সাকিব।  

 বিপিএলে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানে নির্বাচকদের নজরে এসে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৪ও ২৭ রানের ইনিংসে ইয়েস কার্ড পেয়ে শনিবার ওয়ানডে অভিষেকও হয়েছে তৌহিদ হৃদয়ের। ওয়ানডে অভিষেকে এতোদিন অভিষেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে ফিফটি ছিল আগে কেবল দুজনের। ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ছয় নম্বরে নেমে ফরহাদ রেজা করেছিলেন ৫০। ২০১১ সালে একই প্রতিপক্ষের সঙ্গে আটে নেমে নাসির হোসেন করেছিলেন ৬৩।সেই তালিকায় তৃতীয় নাম তৌহিদ হৃদয়। অভিষেকে ৫৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে চোখ রেখেছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। শেষ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিংয়ে থাকলে ওয়ানডে অভিষেকে ১৭তম ভাগ্যবান হিসেবে পেতেন সেঞ্চুরি।

ওয়ানডে অভিষেকে প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটার হিসেবে এই রেকর্ড হতে পারতো তার। তবে হুম-এর দ্বিতীয় স্পেলে মুশফিক শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে আসার (২৬ বলে ৩ চার, ৩ ছক্কায় ৪৪) এক বল পর ফ্লিক করতে যেয়ে বোল্ড আউট হয়ে ৭ম দুর্ভাগা ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে অভিষেকে ৯০'র ঘরে থেমেছেন তৌহিদ হৃদয় (৮৫ বলে ৯ চার, ২ ছক্কায় ৯২)। 

দুর্ভাগা সাকিব এবং তৌহিদ হৃদয়ের দিনে আইরিশ পেসার গ্রাহাম হুম করেছেন ক্যারিয়ারসেরা বোলিং (৪/৬০)। শেষ স্পেলে পেয়েছেন তিনি ৩ উইকেট (৩-০-২২-৩)।সবচেয়ে বেশি মার খেয়েছেন পেসার এডেয়ার (১০-০-৭৭-১)।

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন