বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ , ১৮ রমজান ১৪৪৫

অন্যান্য
  >
বিশ্বকাপ

রুগ্ন শিশুটিই এখন ইংল্যান্ডের নায়ক

শামীম চৌধুরী, লন্ডন থেকে ১৭ জুলাই , ২০১৯, ১৫:৪০:৩৬

  • তিন বছর বয়সী রুগ্ন শিশু জোফরা আরচার। ছবিটি দেখা্চ্ছেন বাবা ফ্রাঙ্ক আরচার।ছবি-দ্য টাইমস

বিশ্বকাপের আগে ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন জোফরা আরচার মাত্র ৩ ম্যাচ। অথচ, সেই ছেলেটিকে নিয়েই ইংলিশ মিডিয়ার মাতামাতি ! ৯০ মাইল গতিতে অনবরত বল করতে পারেন। ইয়র্কার আর বাউন্সে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ভয় ধরিয়ে দিতে পারেন। 
 
 
এমন বোলার আছেন যে দলে, তাকে ঘিরে স্বপ্ন তো দেখতেই পারে। হ্যাঁ, যাকে ঘিরে এই স্বপ্ন আবর্তিত হয়েছে, তা এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছ্।সুপার ওভার থ্রিলারে বিশ্বকাপ জিতেছে ইংল্যান্ড। নায়ক শুধু বেন স্ট্রোকস একা নন। জোফরা আরচ্যারও।
ইংল্যান্ড মিডিয়ায় এ দু'জনকে নিয়েই একটার পর একটা প্রতিবেদন হচ্ছে ছাপা। ইংল্যান্ড বোলারদের মধ্যে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২০ টি উইকেট পেয়েছেন, ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি পিচগুলোতে ওভারপ্রতি মাত্র ৪.৫৭ রান খরচায় রীতিমতো বিস্মিত করেছেন। জোফরা আরচারকে নিয়ে মিডিয়ার হুমড়ি খেয়ে পড়ার একমাত্র কারন এটাই নয়। যে ছেলেটির খেলার কথা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে, বারবাডোজের সেই ছেলেটি ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক-এখানেই মিডিয়ার যতো কৌতুহল। সেই কৌতুহলের বশে এই ছেলেটির জন্ম,শৈশব, ক্রিকেটার হয়ে বেড়ে ওঠা আবিস্কার করেছে ইংল্যান্ডের দৈনিক দ্য টাইমস।বাবা বারবাডোজ বংশোদ্ভুত হলেও তিনি বৃটিশ পাসপোর্টধারী। মা জোয়েলি'র কোলে জন্ম তার লন্ডনে। কিন্তু শৈশবেই বড় ধাক্কা খায় ছেলেটি। মাত্র ৩ বছর বয়সে বাবা-মা'র ছাড়াছাড়ি হলে ছেলেকে নিয়ে বাবা চলে আসেন বারবাডোজে। রুগ্ন শরীর নিয়ে জন্ম নেয়া ছেলেটি এমনিতেই বাবা ফ্রাঙ্ক আরচারের দূর্ভাবনার কারন ছিলেন। ছেলেটির হাতে শক্তি নেই, অনেকটা অচল। তা সচল করতে ভিডিও গেম খেলার ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন চিকিৎসক। ছেলেকে বারবাডোজে নিয়ে সঙ্গে রেখেছেন ৫টি বছর। ছেলেটির বয়স যখন ৮ বছর, তখন আরচারকে বাবা ফ্রাঙ্ক আবার নিয়ে আসেন ইংল্যান্ডে। কিন্তু মা জোয়েলি ঠুঁকে দেন মামলা। সেই মামলায় সন্তানকে কাছে রাখার অধিকার হারান বাবা। মা'র কাছে থাকার অনুমতিও হারান আরচার। আদালতের আদেশে এক মামা'র কাছে থাকার অনুমতি পান।
তবে বাবা ছেলের খবর নিয়মিত রেখেছে। লন্ডনের স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর ফুটবল, এবং ক্রিকেট-দু'টি দলে খেলার জন্য পেয়েছিলেন ডাক। সিদ্ধান্ত নিজে নেননি। বাবার ইচ্ছাটাকেই দিয়েছেন প্রাধান্য আরচার। বাবা ফ্রাঙ্ক এমনটাই জানিয়েছেন-‌'ও শৈশবে ফুটবল এবং ক্রিকেট খেলার জন্য ডাক পেয়ে আমার মতামত নিতে এসেছিল। আমি তাকে বলেছি, ক্রিকেটে অনেক সুযোগ আসবে। তুমি বরং ক্রিকেটে মনোযোগ দাও।৮ বছর বয়সে সে স্কুলের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছে।'
বৃটেনে জন্ম নিয়ে বারবাডোজে ফিরে সেখানে ৫ বছর কাটিয়ে  পুনরায় ইংল্যান্ডে ফিরে আসায় একটু সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ২০১৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের হয়ে খেলেছেন আরচার আন্তর্জাতিক ম্যাচ। কিন্তু পিঠের চোট ভুগিয়েছে তাকে। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে টিকে থাকতে পারেননি। ২০১৬ সালে সাসেক্সে নাম লিখিয়েই নিজেকে মেলে ধরেছেন। আসরের শেষ দিকে এসে সাসেক্সে যোগ দিয়ে সে মওশুমে ক্লাবটির পক্ষে পেয়েছেন ৩৫ উইকেট। সেই থেকে শুরু। বিশ্বকাপের মাত্র ২৫ দিন আগে  আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক তার কার্ডিফে, পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-২০ ম্যাচে। সেই ম্যাচে ৪-০-২০-২ এমন বোলিংয়ে কেড়েছেন নির্বাচকদের নজর। পেয়েছেন বিশ্বকাপ দলে ডাক। তবে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার ছাড়পত্রটা পেতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি তাকে। অভিবাসন আইন তার ক্ষেত্রে শিথিল করতে হয়েছে। 
বিশ্বকাপ চলাকালে একটি দূর্ঘটনায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন আরচার। দক্ষিন  আফ্রিকার বিপক্ষে ওভালে প্রথম ম্যাচ জয়ের পর ইংল্যান্ড দল যখন করছে উৎসব। তখন বারবাডোজ থেকে আসে এক দু:সংবাদ। সমবয়সী চাচাতো ভাই আশান্তিও ব্লাকম্যান সন্ত্রাসী হামলায় গুলিতে নিহত হয়েছেন-এই দু:সংবাদ শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন বলে আরচারের বাবা জানিয়েছেন।
যে বাবা'র জন্য এতোটা পথ পাড়ি দিয়ে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ হিরো আরচার, সেই বাবা ফ্রাঙ্ক আরচার কিন্তু ফাইনালের টিকিট যোগাড় করতে পারেননি। খেলা দেখেছেন একটি বারে বসে, স্মার্টফোনে !! অথচ, যে মা ৩ বছরর ছেলেকে ফেলে চলে গেছেন, সেই মা জোয়েলি এবং সৎ বাবা ঠিকই লর্ডসে দেখেছেন ফাইনাল।
 

 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন