বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ , ১৭ জুমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫

অন্যান্য
  >
নারী দিবস

‘ল-ইয়ার হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও দেশের সেবায় পুলিশে এসেছি’

নিউজজি প্রতিবেদক ৮ মার্চ , ২০২২, ১৯:১৮:৩২

  • ‘ল-ইয়ার হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও দেশের সেবায় পুলিশে এসেছি’

ঢাকা: প্রচণ্ড রোদে সড়কের শৃঙ্খলা ধরে রাখার জন্য রাস্তায় কাজ করছেন পুলিশের নারী সার্জেন্ট সাবিনা ইয়াসমিন। ঘেমে একাকার কর্মরত নারী সার্জেন্টের অবশ্য সেদিকে খুব একটা খেয়াল নেই। তিনি ব্যস্ত সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায়। গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা আর সড়কে বেঁধে যাওয়া গাড়ির জট ছাড়াচ্ছেন তিনি। আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ব্যস্ততম রামপুরা মোড় এলাকায় ডিউটিরত অবস্থায় নারী ট্রাফিক সার্জেন্ট সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে কথা হয় নিউজজি২৪ডটকমের

সাবিনা ইয়াসমিনের বাড়ি শেরপুরে। বাবা-মায়ের ৮ ভাই-বোনের মধ্যে সাবিনা ইয়াসমিন সবার ছোট। এসএসসি ও এইসএসসি তার শেরপুরে। ২০১৪ শেরপুর সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স করেন তিনি। ল-ইয়ার হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ২০১৬ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক মতিঝিল বিভাগের রামপুরা জোনের সার্জেন্ট হিসেবে। ল-ইয়ার থেকে নিজের স্বপ্ন ঘুরিয়ে নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন তিনি। 

নারী দিবস উপলক্ষে সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল দেশের জন্য কিছু করার। পুলিশের ইউনিফর্মের প্রতি আকর্ষণ ছিল। যে ইউনিফর্ম পরে সবশ্রেণির মানুষকে সেবা দেয়া সম্ভব। দেশের রাষ্ট্রপতি থেকে সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেয়া যায়। তাই এই পেশায় আসছি। 

নিউজজি২৪: ট্রাফিকে দায়িত্ব পালন করতে কেমন লাগে?

সার্জেন্ট সাবিনা ইয়াসমিন: পেশাটাকে ভালোবেসেই বেছে নিয়েছি। তাই প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করি। সড়কে নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ভালোই লাগে। সব নারী সার্জেন্টই দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। ডিএমপির ট্রাফিকের সিনিয়র কর্মকর্তারা আমাদের নারী সার্জেন্টদের প্রশংসা করছেন। এতে আমাদের খুব ভালো লাগে।

নিউজজি২৪: ল’তে পড়ার ইচ্ছা ছিল কিংবা এত চাকরি থাকতে ট্রাফিক সার্জেন্টের চাকরিতে এলেন কেন?

সার্জেন্ট সাবিনা ইয়াসমিন: বিষয়টি তখন চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছিল আমার কাছে। আর ছোটবেলা থেকেই জীবনে চ্যালেঞ্জিং কিছু একটা করার টার্গেট ছিল আমার। সেই চ্যালেঞ্জটা জয় করার জন্যই আসলে পুলিশে আসা। 

নিউজজি২৪: দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো বিশেষ অভিজ্ঞতা আছে কি না?

সার্জেন্ট সাবিনা ইয়াসমিন: গণপরিবহণের চালকরা বিভিন্নভাবে কটু কথা বলে থাকেন। এছাড়া, নারী সার্জেন্ট দেখে সবাই একটু তাকান। আর নারী হয়ে বাইরে যেভাবেই বের হই না কেন, যারা কটু কথা বলার তারা বলবেই। তাছাড়া, এসব বিষয় হ্যান্ডেলিং করার প্রশিক্ষণ আমাদের নেয়া হয়েছে। আর সবার এসব কথা আমি আমলেও নিই না। এসব ছোটছোট কিছু বিষয় ছাড়া আর কোনও সমস্যা হচ্ছে না। এসবও আস্তে-আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

নিউজজি২৪: পুরুষ সহকর্মী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের থেকে সহযোগিতা ও অসহযোগিতার বিষয়ে কিছু বলুন-

সার্জেন্ট সাবিনা ইয়াসমিন:  পুরুষ সার্জেন্টরা আমাদের সবকিছু শিখিয়ে দিচ্ছেন- কিভাবে মামলা করতে হবে, কেমন করে চালকদের সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। তাদের সহযোগিতায় কাজ আরও সহজ হয়ে যাচ্ছে। আমরা যারা নারী সার্জেন্ট হিসাবে কাজ করি, তাদের ব্যাপারে সবসময়ই সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব দেখান আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রাস্তায় কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় বেয়ারা চরিত্রের লোকজনকে হ্যান্ডেল করতে হয় আমাদের। কোনো কোনো যানবাহন চালকের ভূমিকা হয়ে ওঠে মারমুখী। বিশেষ করে সমাজের একটু প্রভাবশালী কিংবা ক্ষমতাবানরা চেষ্টা করেন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সবকিছু নিজেদের মতো করে চালাতে। এ রকম ক্ষেত্রে একদিকে যেমন আমরা শক্ত ভূমিকা নিই, তেমনি শক্ত অবস্থান নিতে গিয়ে কোনো জটিলতা দেখা দিলে আমাদের সিনিয়ররাও পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করেন পাশাপাশি সাহস জোগান।

নিউজজি২৪: নারী সার্জেন্ট হিসেবে কখনো আলাদা সমস্যায় পড়তে হয়েছে কি না?

সার্জেন্ট সাবিনা ইয়াসমিন:  নারী সার্জেন্ট দেখে অনেকেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু এসব আমরা পাত্তা দিই না। আমরা আমাদের কাজ করি। এসব এখন আর মাথায় আসে না। অনেকে ভাবেন, নারীরা তেলাপোকা দেখে ভয় পান, গাড়ি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন? তবে আমরা আমাদের যোগ্যতা দিয়ে নিজেদের প্রমাণ করেছি। নারী বলে প্রথম প্রথম চালকরা পাত্তা দিত না। তবে অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। আমি পুরোপুরি নতুন। আমার সঙ্গে যারা কাজ করছেন, তারা অনেক সহযোগিতা করছেন। তবে, ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি থামানোর কাজটি একটু বেশি চ্যালেঞ্জের মনে হয়।

নিউজজি২৪: ট্রাফিকে কাজের সমস্যা আছে কি না?

সার্জেন্ট সাবিনা ইয়াসমিন: ডিএমপিতে নারী ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা অনেক কম, পাশাপাশি নারীদের জন্য ওয়াশরুম ব্যবহার করা একাট বড় সমস্যা। তবুও সবকিছু মেনে নিয়েই আসছি। কাজ করে যাচ্ছি। ট্রাফিক বিভাগে প্রয়োজনের তুলনায় জনবল খুব কম। এ রকম একটি অবস্থায় দেশে যদি আরও নারী সার্জেন্ট নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলে কাজের ক্ষেত্রে আরও সহজ একটা পরিবেশ হতো আমাদের। শেয়ারনেসের বিষয়টিও থাকত। নারী হিসাবে আমি তো সবকিছু সবার সঙ্গে শেয়ার করতে পারি না।

নিউজজি২৪: নারী সার্জেন্ট হওয়ায় পরিবার থেকে কোনো বাধা আসছে কি না?

সার্জেন্ট সাবিনা ইয়াসমিন:  ৮ ভাই-বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। আমার পরিবারের সবাই চাইতেন আমি যেন শিক্ষিত হই। এ ক্ষেত্রে আমার মায়ের অবদান ও অনেক বেশি। জীবনে যতটুকু অর্জন তা বাবার ইচ্ছে আর মায়ের অদম্য অনুপ্রেরণায়। এতগুলো ভাই-বোন হয়েও সবার মধ্যে সবার আন্তরিকতা ছিল। মেয়ে হিসেবে কখনোই অবহেলা করেননি। 

প্রসঙ্গত, আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য’।

নিউজজি/ওএফবি

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন