শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৬ চৈত্র ১৪২৯ , ৯ রমজান ১৪৪৪

অন্যান্য
  >
একুশে বইমেলা

বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা নিয়ে ডিআইজি হাবিবের গবেষণা গ্রন্থ

নিউজজি প্রতিবেদক ২৩ ফেব্রুয়ারি , ২০২২, ০৮:৪৪:৪৩

  • ছবি : জাকির হোসেন

ঢাকা : পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের গবেষণাগ্রন্থ ‘ঠার : বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে বইটির মোড়ক উন্মোচ করা হয়। বাংলা ভাষায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাষা নিয়ে হাবিবুর রহমানই প্রথম এই ধরণের গবেষণাগ্রন্থ রচনা করেছেন। 

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবি কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘আমি যখন হাবিবুর রহমানের মুখে বইটি লেখার আদ্যোপান্ত শুনলাম তখন আমি সত্যই অভিভূত হয়েছি। বইটি লেখার ক্ষেত্রে তার নিবেদন এবং ত্যাগ; এক কথায় অতুলনীয়।’ 

তিনি বলেন, এই গ্রন্থটি ভাষাবিজ্ঞানে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। যে কাজটি হাবিব করেছেন তা একটি অফিসিয়াল স্কলারের কাজ হয়েছে। সামনের দিনে গবেষকদের অনুপ্রাণিত করবে এই গ্রন্থটি। ভাষা গবেষকরা বইটি দ্বারা উপকৃত হবেন। 

বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। এসময় তিনি বলেন, ‘এই প্রথম বাংলা একাডেমির মঞ্চে ঠার ভাষার পক্ষে কেউ কথা বলেছেন। প্রতিটি মাতৃভাষারই মর্যাদা রয়েছে। আমি এই বইটি মন দিয়ে পড়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের সব নিয়ম মেনে এই গবেষণাটি করেছেন হাবিবুর রহমান।’ 

মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, হাবিবুর রহমান শুধু ভাষা নিয়ে কাজ করছেন না, তিনি উত্তরণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বেদে জনগোষ্ঠীর জীবন মান পরিবর্তনে অনুকরণীয় অবদান রেখেছেন। শুধু বেদে জনগোষ্ঠীই নয়, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্যও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। এই বইয়ের মাধ্যমে হাবিবুর রহমান প্রান্তিক মানুষদের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন।

লেখক হাবিবুর রহমান বইটির ভাবনা ও প্রস্তাবনা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি বেদে জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তাদের ভাষা সম্পর্কে জানতে পারি। তখন আমি উদ্যোগ নেই ঠার ভাষা নিয়ে কাজ করার জন্য। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের স্মরণাপন্ন হলে তারা কাজটি করতে পারেনি। পরে এই কাজটি আমিই হাতে নেই।’ 

বেদে জনগোষ্ঠীর কষ্টের জীবন তুলে ধরে আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, বইটি নিয়ে গত ৫ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ চলেছে। বইটি করতে বিভিন্ন ভাষাবিদ ও গবেষকের সহায়তা নিয়েছেন তিনি। গ্রন্থটি প্রণয়নে সারা বাংলাদেশ থেকে ঠার ভাষার শব্দ সংগ্রহ করা হয়েছে। হাবিবুর রহমান পৃথিবী থেকে যেসব ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে সেগুলো গবেষণার মাধ্যমে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের প্রতি আহ্বান জানান । 

অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও সংগঠক অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী বলেন, ‘হাবিব ভাষাবিজ্ঞানের ওপর যে কাজ করেছেন, এটা আমার কাছে অসামান্য কাজ মনে হয়েছে। আমি হাবিবুর রহমানের বইয়ের একজন মুগ্ধ পাঠক। শত বছর পরেও বেদে জনগোষ্ঠী হাবিবুর রহমানকে স্মরণ করবে।’ 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘হাবিবুর রহমান যখন ৫ বছর আগে আমাকে দেখালেন তখন আমি তাকে বললাম, এটা দিয়ে আপনি পিএইচডি করতে পারেন। ভাষাবিজ্ঞানী হিসেবে আমি বলতে পারি, এটা অসাধারণ একটি কাজ হয়েছে। এই বই ভাষাবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাজে লাগবে।’ 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কবি ও লেখক মিনার মনসুর বলেন, ‘আজ এখানে যত মানুষ উপস্থিত হয়েছে আমি গত ৩৫ বছরে কোন বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে এত মানুষ দেখিনি। এত মানুষ যতটা না বইয়ের কারণে এসেছেন তার চেয়ে বেশি এসেছেন ব্যক্তি হাবিবুর রহমানকে ভালবেসে।’ তিনি বলেন, হাবিবুর রহমান একটি দুরূহ কাজ করেছেন। এটি একটি পিএইচডি গবেষণা হতে পারে। অনুষ্ঠানে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান। 

সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, হাবিবুর রহমান যে সমৃদ্ধ রচনা করেছেন সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের ন্যায়। এটি একটি অসাধারণ বই। ভাষার মাসে এমন একটি বই আমাদের জন্য গৌরবজনক অধ্যায়।

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন