মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১ আশ্বিন ১৪৩০ , ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

অন্যান্য
  >
বিশ্বকাপ

পর্তুগালকে হারিয়ে উরুগুয়েকে কাঁদিয়ে নক আউট পর্বে কোরিয়া

শামীম চৌধুরী ৩ ডিসেম্বর , ২০২২, ০০:২০:০৫

577
  • পর্তুগালকে হারিয়ে রাউন্ড সিক্সটিনে ওঠার আনন্দ দক্ষিণ কোরিয়ার। ছবি-ইন্টারনেট

দক্ষিণ কোরিয়া ২ : পর্তুগাল ১

এইচ গ্রুপের শেষ রাউন্ডের ম্যাচ দু'টিতে চরম নাটকীয়তা দেখেছে দর্শক। দুই ম্যাচ জিতে পর্তুগাল এই গ্রুপ থেকে শেষ ষোল নিশ্চিত করেছে আগেই। অন্য তিনটি দলের মধ্যে এগিয়ে ছিল ঘানা।

দক্ষিণ কোরিয়াকে ৩-২ গোলে হারিয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকা ঘানাকে ধরা হচ্ছিল সম্ভাব্য গ্রুপ রানার্স আপ। ২ ম্যাচে ১ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া এবং উরুগুয়ের সামনে সেখানে গ্রুপ রাউন্ডের শেষ ম্যাচটি সমীকরণ মেলানোর পরীক্ষা।

জিততে হবে, গোল ব্যবধানে থাকতে হবে এগিয়ে।আল জানোব স্টেডিয়ামে ৩২ মিনিটের মধ্যে ঘানাকে ২ গোল দিয়ে নক আউট রাউন্ডের স্বপ্ন দেখেছে উরুগুয়ে।

এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে খেলার নির্ধারিত সময়ে পর্তুগালের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার ম্যাচটি ১-১ গোলে সমতা থাকায় দুই বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে সমর্থকদের মুখে উৎসবের অভিব্যক্তি। তবে পর্তুগাল-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচে অতিরিক্ত ৬ মিনিট যোগ হওয়াটাই উরুগুয়ের স্বপ্ন ভঙ্গ করল।

ইনজুরি টাইমের প্রথম মিনিটে (৯০+১) হোয়াং হি চান-এর গোলে পর্তুগালের বিপক্ষে দক্ষিণ কোরিয়ার ২-১ এ জয়ে কপাল পুড়ল উরুগুয়ের। সব নাটকীয়তার অবসান করে এক যুগ পর বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়া নক আউট রাউন্ডের দেখা পেল। 

এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে বলের নিয়ন্ত্রনে এগিয়ে ছিল পর্তুগাল। তাদের ৬১% বল দখলের বিপরীতে কোরিয়ার ৩৯%। তবে ৪-৩-৩ ফরমেশনে কোরিয়া কাউন্টার অ্যাটাকগুলো ছিল ভয়ংকর। পর্তুগালের মতোই গোল লক্ষ্য করে ৬টি শট নিয়েেছে দক্ষিণ কোরিয়া। খেলার ৫ মিনিটের মাথায় ডান প্রান্ত থেকে ডিয়েগো দালোতের ক্রস থেকে রিকার্ডো হোর্তার গোলে এগিয়ে যায় পর্তুগাল (১-০)। এবারের বিশ্বকাপে তিনি পর্তুগালের তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে অভিষেক ম্যাচেই গোলের মুখ দেখেছেন হোর্তা।

পিছিয়ে পড়ে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচে সমতাসূচক গোল পেয়েছে ২৫ মিনিটে। কর্নার থেকে বল রোনালদোর কাঁধে লেগে দিক পরিবর্তিত হয়ে কিম ইয়ং গিয়োনের পায়ের সামনে এসে পড়লে সেই সুযোগের সদ্বব্যহার করেছেন তিনি (১-১)।

নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ফল অমিমাংসিত থাকলে গ্রুপ পর্যায় থেকে বিদায় ঘন্টা বেজে ওঠে কোরিয়ার। তবে নাটকীয়তা তখনো শেষ হয়নি। অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচটি গড়ালে তা যেনো আশির্বাদ হয়ে উঠল কোরিয়ার।

দক্ষিণ কোরিয়ার সেরা ফুটবল সং হিয়েন মিন ডি বক্সের বাইরে থেকে পর্তুগালের দুই তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ঠান্ডা মাথায় যে পাসটি দেন, ডি বক্সের ভেতর থাকা  হোয়াং হি চান তা গোলে পরিণত করে কোরিয়ান উৎসবের উপলক্ষ্য এনে দিয়েছেন (২-১)।  জয়সূচক গোলের উৎসব উদযাপন করতে যেয়ে জার্সি খুলে ফেলে হলুদ কার্ড খেয়েছেন তিনি। পর্তুগালের বিপক্ষে প্রথম মোকাবেলাকে জয়ে  স্মরণীয় করে রেখেছে এশিয়ান জায়ান্ট দক্ষিণ কোরিয়া।

এই জয়ে উরুগুয়ের সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে গোল গড়ে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় হয়ে নক আউট রাউন্ডে জায়গা করে নেয় এশিয়ান জায়ান্টরা।

উরুগুয়ে ২ : ঘানা ০

আল জানোব স্টেডিয়ামে এদিন একই সময়ে সমীকরণ মেলানোর লড়াইয়ে একটি পয়েন্ট দরকার ছিল যেখানে ঘানার, সেখানে উরুগুয়েকে জটিল সমীকরণ মেলাতে দরকার ছিল জয়। এমন এক সমীকরণের ম্যাচে সুয়ারেজের উরুগুয়ে খেলেছে পরিচিত ল্যাতিন ছন্দময় ফুটবল। ৪-৪-২ ফরমেশনে এদিন উরুগুয়ে ঘানাকে শুরু থেকেই ধরেছে চেপে। গোলপোষ্ট লক্ষ্য করে শটও নিয়েছে তুলনামুলক বেশি, ১২টি।

যদিও খেলার শুরুতে বিতর্কিত পেনাল্টি পেয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল ঘানার সামনে। খেলার ১৮ মিনিটের মাথায় ঘানা স্ট্রাইকার মোহাম্মদ কুদুসের পা থেকে বল ক্লিয়ার করতে যেয়ে উরুগুয়ের গোলরক্ষক সার্জিও রোশের ট্যাকলটি গণ্য হয় পেনাল্টিতে।ঘানা ফুটবলারদের দাবির মুখে  'ভার' ( ভিডিও অ্যাসিটেন্ট রেফারি) দেখে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। ২০১০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে উরুগুয়ের বিপক্ষে পেনাল্টি মিসের কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন আসামোয়াহ জিয়ান। তার পেনাল্টি শটটি বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে প্রতিহত করেছেন উরুগুয়ে গোলরক্ষক। 

একটার পর একটা আক্রমনে ঘানার ডিফেন্স ভেঙ্গে ফেলা উরুগুয়ে খেলার ২৬ মিনিটে এগিয়ে যায়। ডান প্রান্ত থেকে সুয়ারেজের নেয়া শট রুখে দিয়েছিলেন ঘানার গোলরক্ষক লরেন্স আতি। কিন্তু ফিরতি বলে আরাকায়েসতার হেড কাঁপিয়ে দেয় ঘানার জাল (১-০)। 

ব্যবধান দ্বিগুণ করতে বেশি সময় নেয়নি উরুগুয়ে। ৬মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুন করেন সেই আরাকায়েসতা। খেলা ৩২ মিনিটেই সুয়ারেজের পাস থেকে  চলন্ত বলে কোনাকুনি শটে গোল করেন তিনি (২-০)। ৬৬ মিনিট পর্যন্ত মাঠে থেকে সুয়ারেজ উরুগুয়ের একটার পর একটা আক্রমনের উৎস তৈরি করে দিয়েছেন। সেই সুয়ারেজকে মাঠ থেকে উঠিয়ে কাভানিকে নামিয়ে অবশিষ্ট সময়ে ব্যবধান আর বাড়তে পারেনি উরুগুয়ে। ২-০ গোলে জিতেও গোল ব্যবধানে নক আউট পর্বে যেতে না পারার কষ্টটা উরুগুয়ে খেলোয়াড়দের মধ্যে একটু বেশিই পেয়েছেন সুয়ারেজে। ডাগ আউটে বসে অঝোরে কেঁদেছেন তিনি । রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন