শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ , ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

গণমাধ্যম

৭৩ বছরে সংবাদ

নিউজজি ডেস্ক ১৭ মে , ২০২৩, ১৫:৫১:৩৯

83
  • ছবি: ইন্টারনেট

ঢাকা: সংবাদ আজ ১৭ মে বুধবার ৭৩ বছরে পদাপর্ণ করলো। দেশের ঐতিহ্যবাহী দৈনিক পত্রিকা সংবাদ ১৯৫১ সালের ১৭ মে প্রথম প্রকাশিত হয়। তারপর পাঠকদের বস্তুনিষ্ঠ খবর পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সংবাদ এগিয়ে চলেছে। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে ৭ দশক। 

আজ ১৭ মে সংবাদ-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংবাদ কার্যালয়ে সংবাদ পরিবারের সদস্যদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হবে। এই দিনে সংবাদ কর্তৃপক্ষ সংবাদের সব পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, শুভাকাঙ্খী এবং বিভিন্নভাবে যারা সংবাদকে সহযোগিতা করেছেন, সংবাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের সবাইকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানিয়েছেন।

সংবাদ প্রথম ব্যবসায়ী আলহাজ গিয়াসউদ্দিন আহমেদের মালিকানায় এবং খায়রুল কবিরের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালে পত্রিকাটি কিনে নেয় মুসলিম লীগ। ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের ভরাডুবির পর ‘সংবাদ’ প্রকাশনায় অচলাবস্থা দেখা দেয়। তখন সংবাদ কিনে নেন আহমদুল কবির। তারই উদ্যোগে ১৯৫৪ সালে গঠিত হয় দি সংবাদ লিমিটেড কোম্পানি। ২০০৩ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি ‘সংবাদ’-এর প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৫৪ সাল থেকে গণতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মানুষের অদ্বিতীয় কণ্ঠস্বর হিসেবে ‘সংবাদ’ মানবতার স্বরূপ সন্ধানে নিয়ত সক্রিয়। প্রগতি ধারার পত্রিকা হিসেবে এ দেশের মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে শাণিত করেছে দৈনিক ‘সংবাদ’। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি জাতির গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে একাত্ম ‘সংবাদ’ তার মাথা না নোয়ানোর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এগিয়ে চলেছে। দীর্ঘ চলার পথে দৈনিক সংবাদ যেসব কৃতী সাংবাদিকের সৃজনশীলতায় আলোকিত হয়েছে এবং ‘সংবাদ’-এর মাধ্যমে এই জাতির মনন গঠনে অতুলনীয় ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন নাসির উদ্দিন আহমেদ, খায়রুল কবির, আহমদুল কবির, রণেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেন, সৈয়দ নুরুদ্দিন, জহুর হোসেন চৌধুুরী, আবু জাফর শামসুদ্দিন, শহীদুল্লা কায়সার, তোহা খান, সন্তোষ গুপ্ত, বজলুর রহমান প্রমুখ।

সংবাদ পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে সামরিক স্বৈরাচারী অপশাসনের বিরুদ্ধে সব সময়ই সোচ্চার ছিল। ১৯৬৪ সালে দাঙ্গার বিরুদ্ধে ‘সংবাদ’-এর দাঙ্গাবিরোধী ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। আর এ ভূমিকার কারণে দাঙ্গাকারীরা সেদিন আহমদুল কবিরের ঘোড়াশালের বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় ‘সংবাদ’ যে ভূমিকা পালন করে তা ইতিহাসে লেখা রয়েছে। ‘সংবাদ’ তখন বাঙালি জাতীয়তার অনন্য মুখপত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ৬ দফা ও ১১ দফার আন্দোলনে সংবাদ’-এর বিশিষ্ট ভূমিকা সংগ্রামী মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছিল। ১৯৭০ সালে ঘূর্ণিঝড়ের খবর ‘সংবাদ’ যেভাবে তুলে ধরে, তেমনি গুরুত্বসহকারে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহতদের খবর ছাপতেও পিছপা হয়নি। আন্দোলন যখন তুঙ্গে, সেই ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর ৮ মার্চ একমাত্র ‘সংবাদ’-এর শিরোনাম ছিল-‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। অন্য কোন পত্রিকায় এ রকম শিরোনাম সেদিন দিতে পারেনি।

১৯৭১ সালে বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আঘাতের কালো হাত ‘সংবাদ’কেও স্পর্শ করে। পুড়িয়ে দেয়া হয় ‘সংবাদ’ কার্যালয়। ২৮ মার্চ সংবাদ-এর সঙ্গেই ভস্মীভূত হন সাংবাদিক শহীদ সাবের। নানা প্রলোভন ও হুমকির মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ‘সংবাদ’ আর প্রকাশিত হয়নি। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি যেদিন বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসেন, মুক্তিযুদ্ধের পর সেদিন প্রথম সংবাদ বের হয়।

১৯৭৫ সালে কুচক্রীদের হাতে বঙ্গবন্ধু নিহত হন। একের পর এক সামরিক শাসন জারি হয়। ‘সংবাদ’ তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়নি।

বাংলাদেশ সাংবাদিক সৃষ্টির ক্ষেত্রে ‘সংবাদ’-এর অবদান ঐতিহাসিক। আজ ‘সংবাদ’ শুধু একটি পত্রিকা নয়, একটি প্রতিষ্ঠান। গত ৭২ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানটির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংস্পর্শে আসেননি এমন প্রগতিমনা সাহিত্যিক, সাংবাদিক-রাজনীতিক দেশে কমই আছেন। সাংবাদিকতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় প্রথমবারের মতো দৈনিক সংবাদকে প্রদান করা হয় বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক-২০১৮। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দৈনিক সংবাদের সম্পাদক আলতামাশ কবির এবং প্রয়াত সংবাদ সম্পাদক আহমদুল কবিরের সহধর্মিণী লায়লা রহমান কবিরের হাতে সম্মানসূচক ক্রেস্ট তুলে দেন।

নিউজজি/এস দত্ত

 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন