শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১ , ৮ শাবান ১৪৪৬

ফিচার
  >
বিশেষ দিবস

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস আজ

নিউজজি ডেস্ক ৯ আগস্ট , ২০২২, ১০:৪৭:৫৮

296
  • ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: আজ ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। প্রতি বছর এই দিনে বিশ্বজুড়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার জন্য এই বিশেষ দিনটি পালন করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে বিরাট একটি অংশ দেশের পার্বত্য অঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় বাস করে। বাংলাদেশে বাংলা ছাড়াও ৪০টি ভাষা রয়েছে। যার প্রায় সবই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর। তবে এসব ভাষার অধিকাংশই এখন বিলুপ্তির পথে। কার্যকর ব্যবহার ও উদ্যোগ না থাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন গবেষকরা।

তারা বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা হারিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ তারা নিজেরাই। সরকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। তারপরও নিজেদের ভাষা রক্ষা করতে পারছে না ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার স্বার্থে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন।

১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৯৯৫ সাল থেকে ৯ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করে আসছে বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি আদিবাসী। ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের উন্নয়ন ও সংরক্ষণ উপকমিশনের কর্মকর্তারা তাদের প্রথম সভায় আদিবাসী দিবস পালনের জন্য ৯ আগস্টকে বেছে নেন। আদিবাসী জনগণের মানবাধিকার, পরিবেশ উন্নয়ন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সুদৃঢ় করা ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করাই বিশ্ব আদিবাসী দশক, বর্ষ ও দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশ সরকার বিশ্বের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার, স্বীকৃতি ও দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে নৃ-তাত্ত্বিক ও সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশে কোনো সুনির্দিষ্ট কোনো আদিবাসী জনগোষ্ঠী নেই। বাংলাদেশের ভূমিজ সন্তান বা আদি বাসিন্দা হলো এখানকার মূল জনগোষ্ঠী যারা নানা পরিচয়ের পরিক্রমায় বাঙালি বলে পরিচিতি লাভ করেছে। কিন্তু বিগত শতকের শেষ দশকে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় আগত, বিশেষ করে ভারত ও মিয়ানমার থেকে ৭০০ থেকে ৩০০ বছর আগে আগত বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, যাযাবর, তপশিলি সম্প্রদায় বিদেশি বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার ইন্ধনে নিজেদের আদিবাসী বলে দাবি করে স্বীকৃতির জন্য আন্দোলন শুরু করে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর এই আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি কোনো সাধারণ ও মামুলি ব্যাপার নয়। এর সঙ্গে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, অখণ্ডতা, সরকারের কর্তৃত্ব ও মর্যাদার প্রশ্ন জড়িত। সে কারণে বিগত আড়াই দশক ধরে বাংলাদেশের সরকারসমূহ এ বিষয়ে নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছে। বিশেষ করে বর্তমান সরকার এ বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর ও বলিষ্ঠ নীতি প্রদর্শন করেছে।

বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর যে অংশটি নিজেদের হঠাৎ আদিবাসী বলে দাবি করতে শুরু করছে তারা কিন্তু বছর দশেক আগেও নিজেদের এ পরিচয়ে পরিচিত করাতে চায়নি। উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা বা নিজ জাতির পরিচয়েই তারা পরিচিত হওয়ার দাবি করে আসছিল দীর্ঘ দিন ধরে। এ রকম হঠাৎ করে আদিবাসী হয়ে যাওয়ার নজির বিশ্বে আর নেই। আদিবাসী জনগোষ্ঠী হিসাবে বিশ্বে যারা সুপরিচিত, যেমন, অস্ট্রেলিয়ার এবরিজিন, যুক্তরাষ্ট্রের রেড ইন্ডিয়ান, নিউজিল্যান্ডের মাউরি, দক্ষিণ আমেরিকার ইনকা প্রভৃতি সুপ্রাচীনকাল থেকেই আদিবাসী হিসেবে বিশ্বে সুপরিচিত।

কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কিছু অংশ যারা ১৯৯৭ সালেও নিজেদের উপজাতি বলে জাতীয়ভাবে পরিচিত করিয়েছে তারা হঠাৎ করে সেলফ প্রমোশন নিয়ে একবিংশ শতকের শুরু থেকে নিজেদের আদিবাসী বলে দাবি করতে শুরু করে। এমনকি দেশের মধ্যে বসবাসকারী যাযাবর ও তপশিলি সম্প্রদায়গুলোকেও তারা আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত করে নিয়েছে। দাবি করা হচ্ছে বাংলাদেশে ৭৫টি (মতান্তরে ৪৫টি) আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের দেশের কিছু সুশীল সমাজের মানুষ ও এনজিও আছে, যারা কিছু দেশের আশীর্বাদপুষ্ট। আদিবাসী ধোয়া তুলে তারা কোটি কোটি টাকা বিদেশি সাহায্য হিসেবে আনছে এবং সেই টাকা তারা নিজেরাই আত্মসাৎ করছে।

তিন পার্বত্য জেলার একাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরা জানান, বর্তমান সরকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা অনেক ভালো আছি। তবে আমাদের মধ্যে কিছু উচ্চাভিলাষী আছে, যারা কোটি কোটি টাকার লোভে আমাদের পণ্য হিসেবে বিদেশিদের কাছে বিক্রি করছে।

নিউজজি/এস দত্ত

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন