শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ , ১৯ রমজান ১৪৪৫

ফিচার
  >
বিশেষ দিবস

সর্বজনীন সমাজ বিনির্মাণ ও মানব কল্যাণে বাগীশিক অনন্য

যীশু সেন ১৫ জুলাই , ২০২১, ০০:২০:৩৫

950
  • ছবি: নিউজজি২৪

অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন ও কুসংস্কারমুক্ত মানব কল্যাণমুখী সমাজ প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে বাংলাদেশ গীতা শিক্ষা কমিটি (বাগীশিক) নামক প্রতিষ্ঠানটির মূলনীতি হলো-গীতানুগত্য, বিশ্বমানবতা ও সংঘশক্তি এবং সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে জাগতিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয়, সামাজিক, মানবীয় তথা নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা প্রচার ও প্রসার ঘটানোর মধ্য দিয়ে একটি আদর্শ দেশপ্রেমিক, আত্মমর্যাদাশীল, স্বনির্ভর জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৯ সালের ১৭ এপ্রিল ‘বাগীশিক’ এর যাত্রা শুরু হয়।

তিল তিল করে গড়ে তোলা হাঁটি হাঁটি পা পা করে প্রতিষ্ঠানটি ১ যুগ (১২ বছর) পরিপূর্ণ হলো, সংগঠনটি সূচনাকালে আহ্বায়ক আয়কর আইনজীবি দিলীপ কুমার ভট্টাচার্য ও সদস্য সচিব পলাশ কান্তি নাথ (রণি) দায়িত্বরত থাকাকালে পরবর্তীতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু করেন।

বিগত ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় সংসদের নতুন সভাপতি ব্যাংকার দেশপ্রিয় চৌধুরী (বিনয়) ও সাধারণ সম্পাদক ডা. অঞ্জন কুমার দাশের নেতৃত্বে এবং বর্তমানে কোন সরকারী বা বেসরকারী সহায়তা ছাড়াই প্রতিষ্ঠানলগ্ন হতে বাংলাদেশ গীতিা শিক্ষা কমিটি (বাগীশিক) এর ১ (এক) যুগ পর্যন্ত পথচলা অব্যাহত রয়েছে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর সমাজসেবা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত সংগঠনটি গঠনতন্ত্রের আলোকে রয়েছে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণ বাগীশিক কেন্দ্রীয় সংসদ। উক্ত সংসদের অধীনে বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলা, মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয়, বৈদেশিক সংসদ, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও কলেজ সংসদ। সুন্দর ও মহৎ মানব জীবন গঠন, গীতা ধ্যান ও চর্চার মাধ্যমে বিবেক জাগ্রত করে, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ, বন্ধুত্ব, সুখে-দুঃখে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর আদর্শ, মানুষের মধ্যে প্রীতি, শ্রদ্ধাবোধ ও পারস্পরিকতার বন্ধন সুদৃঢ় করে (বাগীশিক)।

ইতোমধ্যে দেশব্যাপী তথা শহর ও গ্রামে প্রায় ১০ (দশ হাজার) গীতা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত চালু আছে। কেন্দ্রীয় সংসদ এর প্রকাশিত রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মানসম্মত সিলেবাস ও শ্রীমদ্ভগবদগীতা।

সমগ্র দেশব্যাপী গীতাদর্শবাদী সংগঠনটি সারা বছরব্যাপী সমাজের কল্যাণে বহুমাত্রিক কার্যক্রম প্রণালী- গীতা শিক্ষা, গীতা প্রশিক্ষণ কর্মশালা, গীতা প্রশিক্ষক ও কৃতি শিক্ষার্থী সম্মাননা, দাতা ও জীবন সদস্য সম্মাননা, সুধী সমাবেশ, গীতাশিক্ষা স্বর্ণপদক প্রতিযোগিতা, মন্দির ভিত্তিক বিবাহ, অনাথদের সহায়তা, দুর্যোগে ত্রাণ বিরতণ, কন্যা দায়গ্রস্ত মা-বাবাকে আর্থিক অনুদান প্রদান করে আসছে সংগঠনটি।

গীতা চর্চা ও অনুশীলন ছাড়াও দরিদ্র জনগণকে বস্ত্র দান, ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষা উপকরণ প্রদান, রক্তের গ্রæপ নির্ণয় করে প্রয়োজনে রক্তদান করা, বৃক্ষের চারা রোপন ও সরবরাহ এবং প্রতিবন্ধীদেরকে সাহায্য করা, গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবসসমূহ উদ্যাপন, বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে অংশগ্রহণ এবং সমাজের জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদানসহ নানা সমাজ সেবামূলক কাজ করে আসছে।

প্রত্যেক সংসদের স্ব-স্ব অবস্থানে উপদেষ্টা, পৃষ্ঠপোষক, দাতা ও জীবন সদস্য, শুভাকাক্সক্ষী, শুভানুধ্যায়ী ও সমাজ হিতৈষীদের সার্বিক সহযোগিতা করে সাংগঠনিক ভিত্তি দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে বাগীশিক। বিপথগামী তরুণ সমাজ মানবীয় মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে পেতে পারে সুস্থ, সুন্দর ও শিষ্টাচারমন্ডিত জীবন, যা ভবিষ্যৎ জীবনের চলার পথের একমাত্র পাথেয় স্বরূপ। বাগীশিক কেন্দ্রীয় সংসদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে উপদেষ্টামন্ডলী- এড. তপন কান্তি দাশ, অধ্যক্ষ বিজয় লক্ষী দেবী, আয়কর আইনজীবী দিলীপ কুমার ভট্টাচার্য, চন্দনময় নন্দী টিটু, এড. প্রবীর ভট্টাচার্য, সমাজসেবক অদুল কান্তি চৌধুরী, লায়ন দিলীপ কুমার শীল, রঞ্জন কান্তি দত্ত, লায়ন রবি শংকর আচার্য, লায়ন প্রীতম চৌধুরী, সনজিত দাশ ভোলা, পৃষ্ঠপোষকমন্ডলীতে আছেন- সংগঠক তপন কুমার ধর, লায়ন ডা. প্রণব রঞ্জন বিশ্বাস এমজেএফ, তপন সরকার, লায়ন তিনকড়ি চক্রবর্ত্তী, অনুপ বরণ দাশ, কৃষ্ণা চৌধুরী, সাধন কান্তি দাশ, স্বরূপ কুমার বিশ্বাস, সজল বরণ সেন, চিত্রালী রায়, অরুণ চন্দ্র মজুমদার, প্রকৌশলী সুবল সিংহ, যুক্ত আছেন- দেশবরেণ্য ব্যক্তি প্রফেসর ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ, প্রফেসর ড. সরোজ কান্তি সিংহ হাজারী, অতিরিক্ত সচিব প্রণব চক্রবর্ত্তী, অতিরিক্ত সচিব ড. শ্যামাপদ দে, প্রফেসর ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাবেক অধ্যক্ষ ড. হরিশংকর জলদাস, একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া, প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর সুবীর বিকাশ দেব, প্রফেসর ড. তাপসী ঘোষ রায়, অধ্যাপক ড. সুপ্তিকণা মজুমদার, যুগ্ম সচিব শংকর প্রসাদ দেব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. পীযুষ দত্ত, কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক সুমন বড়–য়া, সমাজসেবক সেলিম নবী, লায়ন শংকর সেনগুপ্ত।

উক্ত বিজ্ঞবানরা জ্ঞানের যে নির্যাস ও সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছে তার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আলাপচারিতা মূহুর্তে বাগীশিক কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ব্যাংকার দেশপ্রিয় চৌধুরী বিনয় বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য বহু পুরানো ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। প্রত্যেকটি মানুষ ধর্ম, বর্ণ ও জাত নির্বিশেষে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। সকল ধর্মেরই মূল শিক্ষা হলো মানুষকে সত্য ও সুন্দরের পথে পরিচালিত করা।

বাগীশিক প্রতিটি অঞ্চলে শিশু-কিশোর যুব সমাজসহ সকলের জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করা ও শিষ্টাচারমূলক অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে সেবামূলক কর্মকান্ডে পরিচালিত করে যাচ্ছে বাগীশিক। একই সময়ে কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক ডা. অঞ্জন কুমার দাশ বলেন, বাগীশিক ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, দেশাত্মবোধক ও মানবীয় গণমানুষের সংগঠন।

নবীন ও প্রবীণদের সমন্বয়ে গঠিত এ মানবতাবাদী প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৩৫টি জেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রম স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে প্রতিটি স্তরে বিস্তৃতি। গীতাশিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি এবং অসহায় জনগোষ্ঠীদের মাঝে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছে বাগীশিক। কুসংস্কার, আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপরতায় সমাজকে খুড়ে খুড়ে খাচ্ছে। তাই সবার মাঝে সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার প্রয়াসে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাগীশিক নামক নন্দিত সংগঠন।

সৃষ্টিকর্তা মানুষকে বিবেক ও বুদ্ধি দিয়ে গড়েছেন। বিবেক ও বুদ্ধির যথাযথ প্রয়োগ করে মানুষ যখন ভালো কাজে সমাজে কল্যাণে ব্রতী হয়, তখন সুন্দর সমাজ, গ্রাম ও দেশ গড়ে ওঠে। দেশ, সমাজের অগ্রগতি, উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠান, জাতীয় দিবস পালন, নবীন-প্রবীণদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সার্বজনীন সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণে ও মানব কল্যাণে বাগীশিক অনন্য প্রতিষ্ঠান। 

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সংস্কৃতিকর্মী।

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন