বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ৭ চৈত্র ১৪২৯ , ২৯ শাবান ১৪৪৪

ফিচার
  >
বিশেষ দিবস

আজ ভালুকা মুক্ত দিবস

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি ৮ ডিসেম্বর , ২০২২, ১২:১৯:১৪

103
  • আজ ভালুকা মুক্ত দিবস

ময়মনসিংহ: আজ (৮ ডিসেম্বর) ভালুকা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে আফসার বাহিনীর আক্রমণে পাক ও রাজাকার বাহিনী ময়মনসিংহের ভালুকা ঘাঁটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। ফলে এই দিনটিকে ভালুকার মুক্তিকামী জনতার ভালুকা মুক্ত দিবস হিসেবে উদ্যাপন করে আসছে।

৭১ এর ৭ই ডিসেম্বর মধ্যরাতে আফসার বাহিনীর অধিনায়ক মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ভালুকা সদরে পাক ও রাজাকার বাহিনীর ঘাঁটির তিনদিক থেকে প্রচন্ড আক্রমণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের সামনে টিকতে না পেরে পাক সেনারা এক পর্যায়ে ভালুকা ঘাঁটি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা ভালুকা থানা প্রাঙ্গনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে।

৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ সোনার পর থেকে ভালুকা উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। মুক্তিযোদ্ধা পরিচালনার জন্য দেশ প্রেমিক, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিক নেতা কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণের উপস্থিতিতে ভালুকায় গঠন করা হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ। ওই পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন আফসার উদ্দিন আহম্মেদ।

ব্রিটিশ ভারত সেনাবাহিনী (অব:) সুবেদার তৎকালীন ভালুকা থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আফসার উদ্দিন আহম্মেদ ১৯৭১ সালে তৎকালীন ভালুকা উপজেলার রাজৈ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ মেম্বারের কাছ থেকে একটিমাত্র রাইফেল নিয়ে ও আট জন সদস্য নিয়ে ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ী ইউনিয়নের মল্লিকবাড়ী বাজারের খেলু ফকিরের বাড়িতে মুক্তি বাহিনীর একটি গেরিলা দল গঠন করেন।

পরবর্তীতে ভালুকা থানা দখল করে ১৪/১৫ টি রাইফেল ও একটি এল, এম, জিসহ প্রচুর গোলাবারুদ সংগ্রহ করেন। এর কয়েক দিনের মাথায় কাউরাইদ হতে খীরু নদী ভালুকা থানায় আসার পথে ভালুকা উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের পনাশাইল নামক স্থানে পাকিস্তান পাক হানাদার বাহিনীর অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ একটি নৌকা আটক করে মুক্তিযোদ্ধারা। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে গেরিলা একটি দল শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত হয়। আফসার উদ্দিনের আট সদস্যের একটি দল পরবর্তীতে প্রায় সাড়ে চার হাজার মুক্তিযোদ্ধার বিশাল একটি বাহিনী গড়ে উঠে।

এফ জে ১১ নম্বর সেক্টরের ময়মনসিংহ জেলা দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা উত্তর সাব সেক্টর অধিনায়ক মেজর আফসার ব্যাটেলিয়ান নামে পরিচিত লাভ করে। যুদ্ধকালীন আহত মুক্তিযোদ্ধাদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার রমজান আলী তরফদার তত্ত্বাবধানে পাঁচজন ডাক্তার, দশজন সহকারী ও চারজন নার্সর সমন্বয়ে আফসার ব্যাটালিয়ন হাসপাতাল নামে একটি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল পরিচালিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে কিছুদিন রেডক্রস সংস্থার দ্বারা পরিচালিত হয়।

২৫ জুন শুক্রবার সকাল হতে ভালুকা গফরগাঁও সড়কের ভাওলিয়াবাজু নামক স্থানে শিমুলিয়া নদীর পাড়ে পাকিস্তানের পাক বাহিনীর সঙ্গে আফসার বাহিনী সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হন। যুদ্ধ একটানা ৩৬ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। শুক্রবার শুরু হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাক বাহিনী চারিদিকে পানিবেষ্টিত নদীর পূর্বপারড় গোয়ারী যোগীপাড়া নামক স্থানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। শুক্রবার সারাদিন সারারাত তিনদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে বহু পাকসেনা নিহত হয়।

১৯৭১ ঐতিহাসিক ওই যুদ্ধের খবর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, অল-ইন্ডিয়া রেডিও ও বিবিসি হতে ফলাও করে সম্প্রচার করা হয়। এই যুদ্ধের পরে ভালুকা থানা ও বাজার এলাকায় পাক বাহিনীর ক্যাম্পটি শক্তিশালী করা হয়। স্থানীয় মুসলিমলীগ নেতারা এখানে গড়ে তোলেন একটি বিশাল রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্প। এসব রাজাকার আলবদররা ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দিনের পর দিন মানুষ হত্যা, নারী ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ লুটপাট চালায়।

আফসার বাহিনী যুদ্ধকালীন বিভিন্ন সময় একাধিক বার ভালুকা পাক হানাদার ক্যাম্পে আক্রমণ চালিয়েছে। এছাড়া আমলীতলা যুদ্ধে, বল্লা যুদ্ধ, ত্রিশাল, গফরগাঁও, ফুলবাড়িয়া, শ্রীপুর, ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ী, মেদুয়ারীসহ বিভিন্ন স্থানে পাক সেনা ও রাজাকারদের সঙ্গে আফসার বাহিনীর অসংখ্য যুদ্ধ হয়। দীর্ঘ ৯ মাসের বিভিন্ন যুদ্ধে আফসার উদ্দিন আহম্মেদের ছেলে নাজিম উদ্দিনসহ ৪৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা খাতুন জানান, ভালুকা মুক্ত দিবসে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যৌথভাবে ৮ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন