মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ , ১ জুমাদাউস সানি ১৪৪৬

ফিচার
  >
পাঠক বিভাগ

পিতা আর বাবা এক নয়

সুমাইয়া ইসলাম শিমু ১৯ জানুয়ারি , ২০২৪, ১২:০১:২৯

804
  • ছবি : নিউজজি

ববি: সন্তান জন্ম দিয়ে পিতা হওয়া যায়। কিন্তু বাবা হওয়ার জন্য দরকার বিশেষ কিছু গুণাবলী। আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় উচ্চ পর্যায়েরও কিছু ব্যক্তি ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে ছেলে-মেয়ে থেকে দূরে সরে যায়, তারা সন্তানকে কেবল টাকা দেয়াই বহমান রাখে। একটি ছেলে বা মেয়ের মাথায় বাবার হাত, আদর, শাসন ঐ সন্তানকে সফলতার ও ভালো মানুষ হওয়ার শীর্ষে পৌঁছে দিতে পারে।

আবার অন্যদিকে দারিদ্রতার রোষানলেও বাংলাদেশের বেশিরভাগ পিতাই বাবা হয়ে উঠতে পারে না। অর্থ-সংকট, কঠিন কাজের ভার সর্বোপরি সংসারের টানাপোড়েনে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত একজন বাবা সত্যিকার অর্থে সন্তানের কাছে মমতাময়ী বাবা হয়ে উঠতে পারেন না।

জৈবিক চাহিদা পূরণ নয় বরং সন্তান জন্ম দেয়ার উদ্দেশ্য হোক আসল বাবা-মায়ের স্বাদ গ্রহণ। মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রত্যেক পিতা তার পরিশ্রম দিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে সন্তানকে ভালো রাখার। কিন্তু সন্তানের ভালো থাকার জন্য মানসিক বিকাশে বাবার যে একটি ভূমিকা থাকে তা সেই পিতা বুঝে না, জানে না।

নিজের ছেলে-মেয়ে কোথায় থাকে, কখন কী করে, মানসিক স্বাস্থ্য কেমন আছে, সমাজের সাথে নিজেকে কতটা খাপ খাওয়াতে শিখেছে এসবের প্রতিনিয়ত খোঁজ খবর রাখাই একজন বাবার কাজ। কেবল জন্ম দিয়ে আর রোজগার করে খাবার এনেই দায়িত্ব শেষ করা ব্যক্তির নাম জন্মদাতা পিতা, সে কখনো বাবা হয় না।  

বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা বাবার সাথে মন দিয়ে কথা বলার সুযোগ পায় না। বাবার কাছ কোনোদিন কোনো আদরের কথা শুনে না। কোনো প্রয়োজনের কথা বাবাকে বলতে পারে না, পাশে বসে অথবা চোখে চোখ রেখে গল্প করা, দুঃখ-কষ্টের কথা একে অপরের কাছে ভাগাভাগি করা হয়ে ওঠে না তাদের।

কোনোভাবে দুটো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকাই এসব পরিবারের একমাত্র লক্ষ্য। আর পোষাক পরিচ্ছদ তো বড়লোক আত্মীয়-স্বজনের পুরনোগুলো দিয়েই দিব্যি চলে যায়। এসব পরিবারে বেড়ে ওঠা ছেলে-মেয়েগুলো প্রচন্ড সহ্যক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে থাকে। এরা কষ্ট করে দুঃখ অবসানের চেষ্টা করে। ছেলেরা কোনোভাবে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে একটা চাকরি পেলেই পরিবারের অবস্থা পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। বাবা-মায়ের মুখের হাসিই হয় তাদের সুখ। আর মেয়েরা?? মেয়েদের তো বাল্যবিবাহ খুব স্বাভাবিক বিষয় ছিল একসময়। এখন বাল্যবিবাহ না হলেও দুঃসহ জীবনযাপনই করতে হয় সংসারে অবস্থান করে। শুধু খাটুনি দিতে জানা অজ্ঞ পিতা-মাতা চাকরিজীবী ছেলের উপার্জন দিয়ে ছেলের জন্যই সংসার পুনঃনির্মাণের চেষ্টা করে।

মেয়েও যে তাদের পরিবারের সদস্য, তারও যে অধিকার আছে পিতা-মাতা এমনকি ভাইয়ের উপরেও তা একদম ভুলে যায়। ছেলের টাকার কাছে হার মেনে ছেলে-বউয়ের কাছে ভালো থাকার জন্য মেয়েদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে কুন্ঠাবোধ করে না এসব বাবা পরিচয় পেতে চাওয়া জন্মদাতা পিতারা। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত ব্যস্ততার মাঝেও ছেলে-মেয়েকে ছোটবেলা থেকে পর্যাপ্ত সময়, আদর-স্নেহ দিয়ে বড় করে তোলা। মানসিক বিকাশ সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখা।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ছেলে-মেয়ের মানসিক স্বাস্থ্যের নজর রাখা, পর্যাপ্ত সাপোর্ট দেয়া আবশ্যক।

এবং সেই সাথে বলা বাহুল্য, আর্থিক সংকটের টানাপোড়েনে সংসারের সকলেই সমানভাবে কষ্ট করে। সেই সংসারে সচ্ছলতা তৈরি হলে ছেলে ও মেয়েকে সমান চোখে দেখা উচিত। শুধু ছেলের ভবিষ্যত ভাবনা না করে মেয়ের যথাযথ অধিকার প্রতিষ্ঠার মতো জ্ঞানটুকু প্রত্যেক বাবার থাকা জরুরী।

জীবনের উত্থান-পতন সকল অবস্থাতে পরিবারের প্রত্যেকের মধ্যবর্তী সম্পর্ক দৃঢ় ও শান্তিপূর্ণ হোক, স্নেহের ও শাসনের দৃষ্টিসহ সকলের সম-অধিকার নিশ্চিত করে প্রত্যেক পিতা হয়ে উঠুক আদর্শ বাবা।

 

নিউজজি/এসএম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন