শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ , ৫ জুমাদাউস সানি ১৪৪৬

ফিচার
  >
পাঠক বিভাগ

পুরানো সেই ঈদের কথা

মোহাম্মদ এনামুল হোসেন ১ জুলাই , ২০২৩, ১৩:৫১:৪৩

982
  • পুরানো সেই ঈদের কথা

বাস্তবে অতীতে ফেরার কোনো নিয়ম বোধ হয় নেই। তবে সেই অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করার উপায়তো আছে। আর সেই স্মৃতিগুলোর মধ্য আমাদের সবচেয়ে বেশি করে মনে পড়ে সাদামাটা আর ছিমছাম শৈশব-কৈশোরের ঈদের দিনগুলোকে। ঈদকে ঘিরে থাকতো এক প্রবল উন্মুখতা। হারানো সেই ঈদের দিনগুলোতে হাতে মেহেদী নেয়া, সুগন্ধি আতড় মেখে দ্রুত মসজিদের দিকে রওনা হওয়ার জন্য ব্যস্ত হওয়া, নামাজ শেষে বড়দের কাছ থেকে সালামি নেয়ার জন্য হুড়োহুড়ি, টেলিভিশনের পর্দায় ছোট দুটি চোখ মেলে দিয়ে ঈদের বর্ণিল সব আয়োজন দেখা, মেলায় ঘুরতে যাওয়া, প্লাস্টিকের হাতঘড়ি থেকে শুরু করে বাহারি রঙিন পুতুল, গাড়ি, গিটার, খেলনা বন্দুক আর কত কী নিয়ে যে কেটে যেত মধুর আর স্বাপ্নিক এক বেলা!

আজও সেই চিরভাস্বর স্মৃতিগুলোকে হাতড়ে বেড়াই আমরা অনেকেই। বাস্তবতার মঞ্চে যেন হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের আবেগ, অনুভূতিশূন্য হয়ে পড়ছে আমাদের জীবন, সব আনন্দেই ধীরে ধীরে যেন ভাটা পড়ছে। এমন যান্ত্রিক জীবনে ঈদের সময়গুলোতে শৈশবের স্মৃতির তুমুল ঢেউ এসে যেন আছড়ে পড়ে আমাদের হৃদয়ে। বিস্ময়ভরা হারানো সেই রঙিন শৈশব আর কৈশোরের আনন্দ, মায়া এবং স্মৃতিবিজড়িত ঈদের দিনগুলোকে লেখনীর মধ্যে দিয়ে কুড়িয়ে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। চলুন পড়ে আসা যাক তাদের অনুভূতির বর্ণনা—

‘শৈশবের সেই ঈদ, উৎসবের এক বৃষ্টি’

শৈশব-কৈশোরের ঈদগুলো এক কথায় বলতে গেলে ছিল অসাধারণ, সময়ের ব্যবধানে ঈদের সংজ্ঞা ঠিক থাকলেও ঈদের আমেজে পরিবর্তন এসেছে অনেক। ভাবনাহীন স্মৃতিতে রাত জেগে মেহেদী নেয়া, রং গাঢ় করতে ঘুম ঘুম চোখেও জেগে থাকার চেষ্টা, নতুন জামা কিনে সবাইকে জানান দেয়া, কিন্তু কেউ জামা দেখতে চাইলে দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিবাদ করার মতো হাজারো স্মৃতি ভেসে উঠে সেই দিনগুলো মনে পড়লে। এছাড়াও ১০/২০ টাকার কচকচে নোট পকেটে নিয়ে সারাদিন ঘোরাঘুরি করা, আর ভাবতাম ঈদ যদি অনেকগুলো হতো। মাঝে মাঝে ঈদ শেষ হয়ে যাবে ভেবে কান্না জুড়ে দিতাম, আম্মু বুঝাতো বাচ্চাদের ঈদ থাকে তিনদিন। সব মিলিয়ে ছোটবেলার ঈদের স্মৃতির সাথে বর্তমান ঈদের ব্যবধান আকাশ পাতাল। এখন বাচ্চাদের আমেজ দেখে ফিরে যাই আমাদের সোনালি অতীতে, ভাবতে থাকি বাচ্চাগুলো তাদের অজান্তেই পার করছে জীবনের সেরা সময়গুলো। চেষ্টা করি ওদের মতো করে কিছুটা সময় কাটাতে, কিন্তু আসলেই কি চাইলে সেভাবে সম্ভব হয়ে ওঠে? তারপরেও ঈদ পৃথিবীর বুকে নিয়ে আসে উৎসবের বৃষ্টি, ভিজিয়ে দেয় প্রতিটি হৃদয়, সেই বৃষ্টিতে আমিও চেষ্টা করি নিজেকে ভেজাতে, তবুও মনে হয় কোথাও যেন একটু শুকনো রয়েই গেলো!

—নাঈম হাসান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

‘যান্ত্রিক হয়ে ওঠার আগের সেই রঙিন ঈদ’

এখনকার আধুনিক নগরজীবনের চেয়ে হারানো সময়ের শৈশবের গ্রামীণ ঈদ আমার কাছে বেশি স্মৃতিময়। দশ বছর আগেও ঈদ পালনে সবার মধ্যেই দেখা যেত আন্তরিকতার ছোঁয়া। শুভেচ্ছা বিনিময়ে পাড়া প্রতিবেশীর আদর,ভালোবাসায় সিক্ত সেই মন কখনোই বর্তমান সময়ে মুঠোফোনের মাধ্যমে পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তার কৃত্রিমতাকে টেক্কা দিতে পারবে না। কুশলাদি বিনিময় শেষে প্রতিবেশীর বাড়িতে দাওয়াত গ্রহণ এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়া, বিভিন্ন সাজে বন্ধু-বান্ধবদের ঈদ কার্ড দেয়া, নতুন জামা পড়ে বিকেলে ঘুরতে বের হওয়া, কখনো বা ক্রিকেট ফুটবল খেলায় মেতে ওঠা, বাহারি রঙের নতুন খেলনা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হওয়া সবই আজ অতীতের ফ্রেমে বন্দি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে আসে ঈদের আনন্দের মতো কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সবকিছুর এত পরিবর্তন হচ্ছে যে আমরা পরিপূর্ণ আনন্দ অন্তরে গ্রহণ করতে পারছি না। যান্ত্রিকতার চাপে ঈদের সব আনন্দ যেন হারিয়ে যাচ্ছে, হয়ে উঠছে অনুভূতিহীন। তবুও আমাদের জীবনে সেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ফিরে আসুক। ফিরে আসুক সেই আনন্দঘন, শান্তি, সৌন্দর্য মিশ্রিত ঈদ।

—মাহমুদ হাসান, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ।

‘সোনালি আভার মতো দীপ্ত শৈশবের ঈদ’

ছোটবেলার ঈদ স্মৃতি বলতে সকাল সকাল আমাদের বাড়ির পাশের ঈদগাহে এক চক্কর দিয়ে আসা,  মিষ্টি-সেমাই-নুডলস দিয়ে নাস্তা করে আব্বু আর ভাইয়ার সাথে ঈদগাহে নামাজ পড়তে যাওয়া, নামাজের পর পর বন্ধুরা দলবেঁধে কুরবানির পশু দেখতে যাওয়া। কুরবানির পশু জবাই করার পর মাংস বানানো হতো ,আম্মু বিলি-বণ্টন করার জন্য প্যাকেট করে দিতো কয়েকজনের বাড়িতে সেটা দিয়ে আসতাম।তারপর শুরু হতো রান্নার আয়োজন। সন্ধ্যা হলেই টিভিতে ঈদের ম্যগাজিন অনুষ্ঠানে মত্ত হয়ে যেতাম। এই ঈদেও প্রায় একইরকম রুটিন ছিল কিন্তু আনন্দটা কিছুটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে সেই সোনালির আভার মতো দীপ্ত শৈশবের সেই ঈদের দিনগুলি।

—ফজলে রুহানি, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

‘ফিরে যদি আসতো সেই ঈদ’

ঈদ!  মাত্র দুটি শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও। এর আনন্দের মাত্রা অসীম। পরিবার পরিজন, বন্ধু বান্ধব আর প্রিয়জনের সাথে ঈদের কাটানো দিনগুলি প্রতিবছর নতুন করে ঈদ এলেই বারবার ফিরে আসে স্মৃতিতে। সময়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত আমাদের অনুভুতি বদলাচ্ছে, বদলাচ্ছে আশেপাশের মানুষজন, চেনা মানুষগুলো দূরে গিয়ে নতুন মানুষের ভিড় হচ্ছে। এসবের সাথে ঈদের দিনগুলোও পাল্টাচ্ছে। কৈশোরের ঈদের দিনগুলির কথা মনে হলে মনে পড়ে, ঈদের দিনগুলিতে আমি আমার বন্ধুদের আমার বাসায় নিমন্ত্রণ জানাতাম, আড্ডা আর খুনসুটিতে মেতে উঠতাম, ঈদের মুক্তি পাওয়া সিনেমা দেখতে চলে যেতাম। ঘুরতে চলে যেতাম আশপাশের আকর্ষণীয় স্থানে। কৈশোরের ঈদের দিনগুলি আমার জীবনে এখনো রঙিন হয়ে বেঁধে রয়েছে। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে সেই সময়গুলো যদি আবার ফিরে পেতাম!

—মেহরাব তিশা, ইংরেজী বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

‘বৈচিত্র্যময় সেই ঈদের দিনগুলি’

জীবন স্মৃতিময়। হাজারো রঙিন স্মৃতিতে মানুষের জীবন রাঙা। ছোট্ট এই জীবনে এমন স্মৃতি থেকে যায় মনে যা বারবার মনকে আলোড়িত করে। অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আর সেইসব স্মৃতির মাঝে ছোটবেলার ঈদের স্মৃতি খুবই বৈচিত্র্যময়। কোলাহলময় ঈদের সেই দিনগুলি ছিল হরেক রকমের প্লাস্টিক আর মাটির খেলনার আবদার করে বসার, ঘুরতে যাওয়ার বায়না করার, হাত মেহেদীর রঙে রাঙানোর, বান্ধবীদের সাথে আড্ডায় মেতে ওঠার, ঈদের শুভেচ্ছার জন্য প্রত্যকের জন্য আলাদা আলাদা ঈদ কার্ড তৈরি করার, আরও কত কী! কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে এখন মেসেজের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়ে দিচ্ছি অনায়াসে , বিনোদন হিসেবে ইউটিউব আর ফেসবুকের ভিডিও দেখেই সময় কেটে যায়। ঈদগুলি এখন দিন দিন যেন অন্য এক রঙে আবর্তিত হয়ে উঠছে।

—সোমা আক্তার, আইন বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, ববি প্রতিনিধি, নিউজ জি২৪।

নিউজজি/নাসি

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন