বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ , ৫ জুমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার
  >
মানচিত্র

মঙ্গোলিয়া ক্যানভাসে আঁকা স্বর্গের ছবি

নিউজজি ডেস্ক ৩১ মার্চ , ২০২২, ১১:১৭:২৬

772
  • ছবি :ইন্টারনেট

ঢাকা: বলিউডের সিনেমায় অনেকবারই দেখে থাকবেন,  বরফে ঢাকা পাহাড়, আর তার সামনে খোলা মাঠ দিয়ে দৌড়চ্ছে ঘোড়া৷ হাইওয়ে, কেবল শূন্য মাঠ। মাঠের পরে দূরে দূরে উঁচু-নিচু পাহাড়। মাঠে গরু, ঘোড়া আর ভেড়ার পাল ঘুরে বেড়াচ্ছে, ঘাস খাচ্ছে। মাইলের পর মাইল ফসলহীন বিরানভূমির মতো পড়ে আছে এসব জমি। এখানে কিছু জন্মায় না। তবে লম্বা লম্বা হরিৎ রংয়ের ঘাস জন্মায়। দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন শুকনো গমক্ষেত। আসলে এগুলো উঁচু ঘাস। এই অপরূপ দৃশ্যাবলীর দেশ মঙ্গোলিয়া।

মঙ্গোলিয়া মধ্য এশিয়ার স্থলবেষ্টিত দেশ । উত্তরে রাশিয়া এবং দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে গণচীন। রাজধানী উলানবাটোরে মোট জনসংখ্যার ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ লোক বাস করে। বেশির ভাগ লোক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও তাদের অনেকেই যাযাবর। ধর্মে বিশ্বাসহীন লোকের সংখ্যাও কম নয়। সম্প্রতি দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে। দেশটি অর্ধ-রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রতিনিধিত্বমূলক বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় পরিচালিত। রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার ও ৭৬ সদস্যবিশিষ্ট আইনসভার ওপর ন্যস্ত। রাষ্ট্রপতি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন এবং এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার রাষ্ট্রপতি হতে পারেন।

মঙ্গোলিয়া বিশ্বের ১৮তম বৃহত্তম দেশ। নিম্ন-মধ্যম আয়ের।  ঐতিহ্যগতভাবে এদেশের  অর্থনীতি পশুপালন ও কৃষির ওপর নির্ভরশীল। খনিজ সম্পদও দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তামা, কয়লা, টিন, টাংস্টেন ও সোনা দেশটির উল্লেখযোগ্য খনিজ পদার্থ। সম্প্রতি দেশটিতে দ্রুত শিল্পোন্নয়ন ঘটছে, যা অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছে।

সাম্রাজ্যবাদের প্রতিভূ চেঙ্গিস খান। মঙ্গোলিয়ার জাতীয় বীর। এক সময় অর্ধেক পৃথিবী দখল করেছিলেন একাই, পৃথিবী দখল করা ছাড়া তাদের আর কোনো বিকল্পও ছিল না। এ দেশে খাবার তো জন্মেই না, শীতকালে উল্টো একেবারে কাবু হয়ে ঘেরের ভেতর বসে থাকতে হয়। সুতরাং, বাঁচতে হলে সাম্রাজ্য লুঠ করা ছাড়া আর উপায় কী! ইউরোপ থেকে এশিয়া সর্বত্রই এদের বিচরণ ছিল। জাতি হিসেবে মঙ্গোলিয়ানরা ভবঘুরে ছিল এবং তারা এত বেশি শক্তিশালীও ছিল না, যতদিন না চেঙ্গিস খান তাদের নেতৃত্বে এসেছিলেন।

তাদের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার ছিলেন 'চেঙ্গিস খান' যিনি একমাত্র ঘোড়ায় পিঠে সওয়ার করেই যুদ্ধ করার জন্য ছিলেন বিখ্যাত। তারা ছিল ঐক্যতার জন্য সেরা এবং যুদ্ধের রণক্ষেত্রে অত্যন্ত কর্তব্যপরায়ণ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ। মঙ্গোলিয়ান যোদ্ধাদের ঘোড়াগুলো সাধারণত ছোট প্রকৃতির হতো, এই ঘোড়ার সুবিধা হলো যোদ্ধারা খুব সহজেই তাদের ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। মঙ্গোলিয়ান যোদ্ধারা ঘোড়ার পিঠে চড়েই ভয়ঙ্কর তীর আর ধনুকের ব্যবহার অত্যন্ত দ্রুত ও ক্ষিপ্রতার সঙ্গে করতে পারত। তারা ধারালো বল্লমের মাধ্যমে তীর-ধনুক চিরে ফেলতে পারত। এ ছাড়া বর্শার আকৃতির তলোয়ার বিশেষ অস্ত্র অত্যন্ত চমৎকারভাবে ব্যবহার করতে পারত। তারা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ এবং ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে পৃথিবীর বৃহত্তম সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল।

চেঙ্গিস খানের ভাস্কর্যের এলাকা উলানবাটর থেকে ৫৪ কিলোমিটার পূর্বদিকে, টোউল নদীর পাশে ছনজিন বোলডগ নামের এক জায়গা। বলা হয়, চেঙ্গিস খান এখানে একটি সোনার চাবুক পেয়েছিলেন। সম্প্রতি সেখানে ঘোড়ায়-চড়া চেঙ্গিস খানের একটি ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। চেঙ্গিস খানের ভাস্কর্যের এলাকা। ভাস্কর্যের চারদিকে বিস্তীর্ণ পতিত জমি, লম্বা লম্বা ঘাসে ভর্তি। কমপ্লেক্স থেকে খানিকটা দূর দিয়ে চারদিকেই রয়েছে ঘের। ঘেরগুলো দূর থেকে দেখতেও বেশ চমৎকার। চেঙ্গিস খানের ভাস্কর্যটি ৪০ মিটার উঁচু।

ঘোড়ার পিঠে বসে থাকা চেঙ্গিস খান। পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভাস্কর্য। ভাস্কর্যের ভেতর ১০ মিটার উঁচুতে একটি পর্যটন কেন্দ্র আছে। ভাস্কর্যটিতে মোট ৩৬টি কলাম আছে। এই ৩৬টি কলাম চেঙ্গিস খান থেকে শুরু করে লিগদান খান পর্যন্ত মোট ৩৬ জন খানের স্মৃতি বহন করে। মূল ভবনে লিফটে চড়ে এবং বেশ কিছুটা পথ সিঁড়ি ডিঙিয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়া যায়। পর্যটকরা অনায়াসে সেখানে চলে আসেন, চারদিকের দৃশ্য উপভোগ করেন। আছে একটা জাদুঘরও। তাতে আছে ব্রোঞ্জ যুগের নানা জিনিসপত্র। ভেতরে ঢুকতেই একটা কামান আর চামড়ার তৈরি বিশাল একটা জুতা।

পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম ১০টি নদীর তিনটি নদীই প্রবাহিত হয়েছে মঙ্গোলিয়া হয়েঃ ওব (Ob) নদীর দৈর্ঘ্য ৫,৪১০ কিলোমিটার। রাশিয়া, কাজাখিস্তান , চীন, মঙ্গোলিয়া ইত্যাদি দেশের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেষে এসে মিশেছে Ob উপসাগরে। আমুর নদীর দৈর্ঘ্য ৪,৪৪৪ কিলোমিটার। রাশিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া ইত্যাদি দেশের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেষে এসে মিশেছে Sea of Okhotsk এ. Yenisei নদীর দৈর্ঘ্য ৫,৫৩৯ কিলোমিটার। রাশিয়া ও মঙ্গোলিয়ার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেষে এসে মিশেছে (Kara Sea)কারা সাগরে।

একনজরে

পুরো নাম : মঙ্গোলিয়া।

রাজধানী ও সর্ববৃহৎ শহর : উলানবাটোর।

দাপ্তরিক ভাষা : মঙ্গোলীয়।

জাতি-গোষ্ঠী : মঙ্গোল (৯৭ শতাংশ), কাজাখ (৩ শতাংশ)।

ধর্ম : বৌদ্ধ (৫০ শতাংশ), ধর্মে বিশ্বাস নেই (৩৮.৬ শতাংশ), ইসলাম (৩ শতাংশ), শামানিজম (২.৯ শতাংশ), খ্রিস্টান (২.১ শতাংশ)।

সরকার পদ্ধতি : ইউনিটারি সেমি-প্রেসিডেনশিয়াল রিপাবলিক।

আয়তন : ১৫ লাখ ৬৬ হাজার বর্গকিলোমিটার।

জনসংখ্যা : ৩০ লাখ ৮১ হাজার ৬৭৭ জন।

ঘনত্ব : প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১.৯৭ জন।

জিডিপি : মোট ৩৭ বিলিয়ন।

মাথাপিছু আয় : ১২ হাজার ২৭৫ ডলার।

মুদ্রা : টোগ্রোগ।

জাতিসংঘে যোগদান : ২৭ অক্টোবর, ১৯৯৬।

তথ্য ও ছবি – ইন্টারনেট

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন