বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ , ২১ জুমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ফিচার
  >
মানচিত্র

চাঁদের আলোর দেশ আলজেরিয়া

নিউজজি ডেস্ক ১ নভেম্বর , ২০২১, ১৩:৪১:৩৬

3K
  • ছবি: ইন্টারনেট থেকে

ঢাকা: বার্বার ভাষায় ‘জিরি’ শব্দের অর্থ চাঁদের আলো। দ্বীপটিতে চাঁদের আলো অত্যন্ত প্রকট হয়ে পড়ত এবং এমন ঔজ্জ্বল্য ছিল যে, রাতে শহরের লোকজনের চলাফেরা করতে বেগ পেতে হতো না। রাতে চাঁদের আলো ছাড়া পথ চলা বা দেখার কোনো সহজ উপায় ছিল না। গভীর অন্ধকারে চাঁদের আলো ছিল সহায়ক। বার্বারভাষী লোকজন নিজেদের চাঁদের আলোর মতো বিপদসংকুলদের জন্য নিজেদের সহায়ক মনে করত। তাই বার্বারজাতীয় লোকজন জিরি নামে এবং তাদের শহরটি আলজিরি নামে পরিচিতি পায়। ঠিক একইভাবে আলজিয়ার্স নামের উৎপত্তি ঘটে। মধ্যযুগের ভূগোলবিদ আল-ইদ্রিসির মতে, আলজেরিয়া শহর থেকে আলজিয়ার্স নামের উদ্ভব হয়েছে। আরবি আল-জাজির থেকে আলজেরিয় নামটির উদ্ভব। যার অর্থ দ্বীপ।

ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকান রাষ্ট্র। দেশটির নয়-দশমাংশ জুড়ে সাহারা মরুভূমি অবস্থিত। ভূমধ্যসাগরের তীরে উপকূলীয় সমভূমি রয়েছে। আলজেরিয়ার প্রায় সব মানুষ দেশটির উত্তরাঞ্চলে উপকূলের কাছে বাস করে। ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত আলজিয়ার্স দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী।

আলজেরিয়ার আরবি নাম আলজাজাইর অর্থাৎ 'দ্বীপসমূহ'; নামটি রাজধানীর তীর সংলগ্ন দ্বীপগুলোকে নির্দেশ করছে। আলজেরিয়ার বেশির ভাগ লোক আরব, বার্বার কিংবা এই দুইয়ের মিশ্রণ। বার্বারেরা প্রথম উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় বসতি স্থাপন করে। সপ্তম শতকের শেষ ভাগে আরব মুসলিমরা উত্তর আফ্রিকা জয় করে এবং ইসলাম ও আরবি ভাষার প্রচলন করে। 

বর্তমানে আলজেরিয়ার প্রায় সবাই মুসলিম ও আরবিভাষী। সংখ্যালঘু বার্বারেরা ইসলাম গ্রহণ করলেও নিজ ভাষা ও রীতিনীতি বিসর্জন দেয়নি। আলজেরিয়াতে ফরাসি ভাষাও বহুল প্রচলিত। আলজেরিয়া ১৯শ শতকের মাঝামাঝি থেকে ১৯৬২ সালে ইতিহাসের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভের আগ পর্যন্ত ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। আট বছর ধরে সংঘটিত স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশটির অশেষ ক্ষতিসাধন হয় এবং এখান থেকে বহু ইউরোপীয় চলে যায়। 

স্বাধীনতার সময় আলজেরিয়ার অর্থনীতি ছিল অনুন্নত ও কৃষিনির্ভর। তবে সরকার শীঘ্রই এটি আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে আলজেরিয়া আফ্রিকার ধনী দেশগুলোর একটি এবং এর অন্যতম কারণ পেট্রোলিয়ামের রপ্তানি। ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে সামরিক বাহিনী ও ইসলামী মৌলবাদীদের মধ্যে সংঘর্ষ দেশটিকে গৃহযুদ্ধে ঠেলে দেয়। তবে সরকারি উদ্যোগের ফলে ২১শ শতকের শুরুতে এই যুদ্ধ অনেকাংশেই দমন সম্ভব হয়েছে।

আলজেরিয়ার উত্তরে ভূমধ্যসাগর, পূর্বে তিউনিসিয়া ও লিবিয়া, দক্ষিণে নাইজার, মালি এবং মোরিতানিয়া, পশ্চিমে মরক্কো ও পশ্চিম সাহারা। এটি একটি বিশাল দেশ। এটি আফ্রিকার বৃহত্তম এবং বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। 

দেশটিকে দুইটি সুস্পষ্ট ভৌগলিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়। উত্তরপ্রান্তে অবস্থিত অঞ্চলটি তেল নামে পরিচিত। এটি মূলত তেল অ্যাটলাস পর্বতমালাটি নিয়ে গঠিত, যা উপকূলীয় সমভূমিগুলিকে দক্ষিণের দ্বিতীয় অঞ্চলটি থেকে আলাদা করেছে। এখানকার জলবায়ু ভূমধ্যসাগর দ্বারা প্রভাবিত। দক্ষিণের দ্বিতীয় অঞ্চলটি প্রায় সম্পূর্ণই মরুভূমি আবৃত। এই অঞ্চলটি আলজেরিয়ার আয়তনের সিংহভাগ গঠন করেছে। এটি মূলত গোটা উত্তর আফ্রিকা জুড়ে বিস্তৃত সাহারা মরুভূমির পশ্চিম অংশ।

১৯৯০ সালে আরবি ভাষাকে সরকারীভাবে আলজেরিয়ার জাতীয় ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সিংহভাগ আলজেরীয় মানুষ প্রচলিত কথ্য আরবি ভাষার একাধিক উপভাষাগুলির কোনও একটিতে কথা বলেন। মরক্কো ও তিউনিসিয়ার যে অঞ্চলগুলি আলজেরিয়ার সীমানার কাছে অবস্থিত সেখানকার উপভাষাগুলির সাথে এই উপভাষাগুলির মোটামুটি মিল আছে। বিদ্যালয়গুলিতে আধুনিক আদর্শ বা প্রমিত আরবি ভাষা শেখানো হয়। 

আলজেরিয়ার ইমাজিগেন নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা আমাজিগ ভাষার বিভিন্ন ভৌগলিক উপভাষাতে কথা বলে, তবে এদের বেশিরভাগই আরবি ভাষাতেও সমানভাবে কথা বলতে পারে। স্বাধীনতার পর থেকেই আলজেরিয়ার সরকারের নীতি ছিল "আরবিকরণ", অর্থাৎ স্থানীয় আরবি ভাষাকে উৎসাহিত করা এবং ইসলামী সাংস্কৃতিক মূল্যবোধগুলি সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া। এর ফলশ্রুতিতে জাতীয় ভাষামাধ্যম হিসেবে আরবি ভাষা ফরাসি ভাষাকে প্রতিস্থাপিত করেছে। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষাদানের মূল ভাষা হিসেবে এখন আরবি ব্যবহার করা হয়। কিছু আমাজিক জাতিদল এই নীতির জোর বিরোধিতা করেছে, কেননা তাদের আশঙ্কা হল এর ফলে দেশে সংখ্যাগুরু আরবিভাষী জনগণ তাদেরকে দমন করবে। ২০০২ সালে আমিজাগ ভাষাকে জাতীয় ভাষা এবং ২০১৬ সালে এটিকে সরকারী ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়।

আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটিতে দিন দিন বেড়েই চলেছে ইসলামী মূল্যবোধের চর্চা। ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে মসজিদের সংখ্যা। বোরকা আবৃত অবস্থায় চলাফেরা করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন নারীরা। অ্যালকোহলিক পানীয় বিক্রির দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে ধীরে কিন্তু সক্রিয়ভাবে ইসলামী শরিয়তের অনুসরণের পথে এগোচ্ছে আলজেরিয়া।

তথ্য ও ছবি – ইন্টারনেট 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন