শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ , ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার
  >
মানচিত্র

হীরা ঝলমল দেশ বতসোয়ানা

 ২০ আগস্ট , ২০১৯, ১৩:৪৯:১৭

12K
  • হীরা ঝলমল দেশ বতসোয়ানা

দেশ হিসেবে ছোট। পৃথিবীময় পরিচিতিটাও কম। কিন্তু সে দেশের মেরুদণ্ডটা আস্তে আস্তে এমন শক্তে পৌঁছাচ্ছে, যে সেই ইচ্ছে করলেই চোখ রাঙাতে তো পারেই না, উল্টো খোদ যুক্তরাষ্ট্রকেও ছেড়ে কথা বলে না তারা। এর পেছনে কারণ একটাই, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সবদিক দিয়ে। দেশের নাম বতসোয়ানা। 

দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি সোয়ানা জাতির নাম থেকে দেশটির নাম এসেছে। ১৯৬৬ সালে যখন বতসোয়ানা ব্রিটিশদের হাত থেকে ছুটি পেয়ে স্বাধীনতা পায়, তখন সাকুল্যে তাদের ১২ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, মাত্র ২২ জন বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক এবং ১০০ জন মাধ্যমিক পাশ মানুষ ছিল। সেইসময়ে তাদের জিডিপি  ছিল মাত্র ৭০ ডলার। সেই সময় তাদের নেতা ছিলেন স্যার সেরেৎসে খামা। এই নেতার এমনি দূরদ্রষ্টা ছিলেন যে তিনি বা তাঁর হাত ধরে দেশটি এখন আফ্রিকার অন্যতম ধনী দেশে পরিণত হয়েছে। এখন তাদের জিডিপি (ক্রয়ক্ষমতার সমতায়) ১৮০০০ ডলার। 

বতসোয়ানা আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাংশে অবস্থিত একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। ১৯৬৬ সালে এটি ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। তার আগে এর নাম ছিল বেচুয়ানাল্যান্ড। ।  

অর্ধ-ঊষর এক মালভূমি, সমুদ্র সমতল থেকে যার গড় উচ্চতা ১,১০০ মিটার, সেখানেই এক টেবিলভূমির উপর অবস্থিত দেশ বতসোয়ানা ।  দেশটির জলবায়ু উপক্রান্তীয় এবং এটি প্রায় বৃক্ষহীন সাভানা তৃণভূমিতে আবৃত। দেশের অধিকাংশ এলাকা শুষ্ক এবং কৃষিকাজের অনুপযোগী। বতসোয়ানার মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমভাগের অধিকাংশ এলাকা জুড়ে কালাহারি মরুভূমি অবস্থিত। দেশটিতে প্রাণীদের জন্য অনেকগুলি অভয়ারণ্য বিদ্যমান। গাবোরোন দেশের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। মূলত সমতলভূমির এই দেশটির দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে দক্ষিণ আফ্রিকা, পশ্চিম ও উত্তরে নামিবিয়া, উত্তর-পূর্বে জিম্বাবুয়ে। উত্তরের অল্প কিছু অংশে জাম্বিয়ার সঙ্গেও সীমান্ত রয়েছে।

আফ্রিকার সবচেয়ে স্থিতিশীল দেশগুলোর একটি বতসোয়ানা। দেশটিতে দুর্নীতি তুলনামূলক কম ও মানবাধিকার পরিস্থিতিও বেশ ভালো। দেশটির জনসংখ্যাও বেশ কম। সাফারিনির্ভর পর্যটন দেশটির আয়ের প্রধান উৎস। এ ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরা উৎপাদনকারী দেশও এটি। এই বাণিজ্যের কারণেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে তারা। জানা যায়, প্রায় ৫০০ বাংলাদেশী বতসোয়ানায় আছেন। এরা মূলত ব্যবসায়ী, তাছাড়া স্বাস্থ্যখাতে সরকারীভাবে নিযুক্ত ডাক্তার বা ইউনিভার্সিটি বতসোয়ানায় শিক্ষকতা করতে এসেছিলেন এমন অনেকেই আছেন। ব্যবসা বলতে সুপারমার্কেট, হোটেল, মাংসের ব্যবসা ইত্যাদিতেই তারা খুব ভাল করেছেন। বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পের সঙ্গে আফ্রিকার এ দেশটির সাথে নতুন সম্পর্ক হতে যাচ্ছে, যা দারুণ খবর। 

বতসোয়ানা এগিয়ে যাবার মূল মাধ্যম তাদের পর্যাপ্ত হীরক খনি। এত মূল্যবান সম্পদের কারণেই তারা আজ এত দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে উন্নত দেশের কাতারে। এর আগেই তো ২০১৬ সালে এই দেশেই আবিষ্কৃত হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হীরকখণ্ডটি। ২০১৫ সালের নভেম্বরে কানাডার খনি কোম্পানি লুকারা ডায়ামন্ড বতসোয়ানায় ওই হীরক খণ্ডটি আবিষ্কার করে। টেনিস বল আকারের এ হীরক খণ্ড আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি বছর আগের বলে ধরে ধারণা করা হয়। জানা গেছে, লেসেদি লা রোনার রং অনন্য ও এটি অন্য যেকোনো হীরকের চেয়ে অধিক স্বচ্ছ। যুক্তরাষ্ট্রের জেমেলজিক্যাল ইন্সটিটিউট এটি টাইপ টু ডায়মন্ড নাম দিয়েছে। নিলামে এর মূল্য দাঁড়ায় ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

একনজরে :

নাম : রিপাবলিক অব বতসোয়ানা

রাজধানী : গাবোরন

সরকারি ভাষা : সেতসোয়ানা ও ইংলিশ

জাতিগোষ্ঠী : তিসোয়ানা (৭৯ শতাংশ),

কালাঙ্গ (১১ শতাংশ),

বাসারবা (৩ শতাংশ)

ধর্ম : খ্রিস্টান

সরকার : পার্লামেন্টারি রিপাবলিক

প্রেসিডেন্ট : ইয়ান খেমা

ভাইস প্রেসিডেন্ট : মগবিতসি মাসিসি

আইনসভা : জাতীয় পরিষদ

স্বাধীনতা লাভ : ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬ 

(যুক্তরাজ্য থেকে)

আয়তন : পাঁচ লাখ ৮১ হাজার ৭৩০

বর্গকিলোমিটার

জনসংখ্যা : ২১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৮৪ জন

ঘনত্ব : প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩ দশমিক ৪ জন

জিডিপি : মোট : ৪০ দশমিক 

৫৫ বিলিয়ন ডলার

মাথাপিছু আয়: ১৮ হাজার ৮২৫ ডলার

মুদ্রা : পুলা

জাতিসংঘে যোগদান: ১৭ অক্টোবর ১৯৬৬

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন