শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ , ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার
  >
মানচিত্র

অর্ধলক্ষ বছরের প্রাচীন দেশ অস্ট্রেলিয়া

নিউজজি ডেস্ক ২০ জুন , ২০১৯, ১৩:০০:৩৯

15K
  • অর্ধলক্ষ বছরের প্রাচীন দেশ অস্ট্রেলিয়া

যখন পৃথিবী জুড়ে চলছে অস্থিরতা, তখন  শান্তিপূর্ণ দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে যতগুলো দেশ, তারমধ্যে অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। সমৃদ্ধ অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসম্মত আবহাওয়া, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা—সব মিলিয়ে বসবাসের জন্য চমৎকার অস্ট্রেলিয়া । আমাদের মানচিত্র বিভাগের আজকের আয়োজন এই দেশ নিয়েই।

প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার বছর আগে অস্ট্রেলিয়াতে প্রথম মানুষ বসতি স্থাপন করে। ১৭৮৮ সালে ইউরোপীয়রা যখন প্রথম এখানে বসতি স্থাপন করে, সে সময় এখানে প্রায় ৩ লক্ষ আদিবাসী লোক বাস করত, যারা প্রায় ২৫০টি আলাদা জাতিতে বিভক্ত ছিল। প্রতিটি জাতির নিজস্ব ভাষা ছিল। ১৭৮৮ সালে এখানে ক্যাপ্টেন কুকের নেতৃত্বে ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপিত হয়। তবে মূল ইতিহাস বলে অন্য কথা। এতোদিন ব্রিটিশরা সদম্ভে দাবি করে এসেছে, তারা অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করেছে। কিন্তু ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ওয়ালস (ইউএনএসডব্লিউ) দাবি করেছে, ব্রিটিশদের এ দাবি মোটেও সত্য নয়। তারা অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার নয়, হামলা করেছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, জাতির উপনিবেশের সময়কার ইতিহাস নতুন করে লিখতে শুরু করেছে তারা। এরই ধারায় এখন বলা হচ্ছে, ক্যাপ্টেন জেমস কুক আসলে অস্ট্রেলিয়ায় হামলা চালিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীদের এখন এভাবেই ইতিহাস পাঠ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউএনএসডব্লিউ। নতুন করে ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি শব্দের প্রয়োগেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন, ‘আবিষ্কারের’ জায়গায় ‘হামলা’র ব্যবহার ও ‘আদিবাসী’ শব্দটা এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে কোন শব্দ ব্যবহার করা যাবে, বা যাবে না, সে ব্যাপারে ইউএনএসডব্লিউ বিধিনিষেধ সৃষ্টি করছে না উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন মুখপাত্র বলেছেন, নতুন করে ইতিহাস লেখার কাজটি চলছে শুধুমাত্র কোন শব্দ বেশি উপযোগী, কোন শব্দ কম উপযোগী, তা নির্ধারণে। এ গাইডলাইনে বলা হয়েছে, ‘ইংরেজ ক্যাপ্টেন জেমস কুক অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করেছেন’ এর জায়গায় যদি ‘তিনি এ মহাদেশের পূর্ব উপকূলের মানচিত্র তৈরি করেছেন’ বলা হয়, তাহলে বেশি যুক্তিযুক্ত হয়। আর ‘আদিবাসী’ বিশেষণের জায়গায় শিক্ষার্থীদের ‘অস্ট্রেলীয় নৃ-গোষ্ঠী’ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এচাড়া নতুন এ গাইডলাইনে ‘আদিম’, ‘সাধারণ’, ‘স্থানীয়’ এবং ‘প্রাগৈতিহাসিক’ শব্দগুলোকে কম উপযোগী শব্দের তালিকায় রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে ‘যাযাবর’ শব্দের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বসতিস্থাপক ছিল এখানকার আদিবাসী জাতিগুলি। এরা প্রায় ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ বছর আগে দেশটিতে অভিগমন করে। ১৭শ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত বহির্বিশ্বের কাছে দ্বীপটি অজানা ছিল। ১৭৮৮ সালে দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার পোর্ট জ্যাকসনে প্রথম স্থায়ী উপনিবেশ সৃষ্টি করা হয়; এটি ছিল ব্রিটিশ কয়েদিদের উপনিবেশ। এটিই পরবর্তীকালে বড় হয়ে সিডনী শহরে পরিণত হয়। ১৯শ শতক জুড়ে অস্ট্রেলিয়া এক গুচ্ছ ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে কাজ করত। ১৯০১ সালে এগুলি একত্র হয়ে স্বাধীন অস্ট্রেলিয়া গঠন করে।

এটি একটি দ্বীপ-মহাদেশ। এটি এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে ওশেনিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। কাছের তাসমানিয়া দ্বীপ নিয়ে এটি কমনওয়েল্থ অফ অস্ট্রেলিয়া গঠন করেছে। দেশটির উত্তরে তিমুর সাগর, আরাফুরা সাগর, ও টরেস প্রণালী; পূর্বে প্রবাল সাগর এবং তাসমান সাগর; দক্ষিণে ব্যাস প্রণালী ও ভারত মহাসাগর; পশ্চিমে ভারত মহাসাগর। দেশটি পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৪০০০ কিমি এবং উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ৩৭০০ কিমি দীর্ঘ। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের ক্ষুদ্রতম মহাদেশ, কিন্তু ৬ষ্ঠ বৃহত্তম দেশ। অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা। সিডনী বৃহত্তম শহর। দুইটি শহরই দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত। গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর। এটি অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব সীমান্ত ধরে প্রায় ২০১০ কিমি জুড়ে বিস্তৃত। এটি আসলে প্রায় ২৫০০ প্রাচীর ও অনেকগুলি ছোট ছোট দ্বীপের সমষ্টি। কুইন্সল্যান্ডের তীরের কাছে অবস্থিত ফেয়ারফ্যাক্স দ্বীপ গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের অংশ। অস্ট্রেলিয়া ৬টি অঙ্গরাজ্য নিয়ে গঠিত - নিউ সাউথ ওয়েল্স, কুইন্সল্যান্ড, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া, ভিক্টোরিয়া, ও পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া। এছাড়াও আছে দুইটি টেরিটরি — অস্ট্রেলীয় রাজধানী টেরিটরি এবং উত্তর টেরিটরি। বহিঃস্থ নির্ভরশীল অঞ্চলের মধ্যে আছে অ্যাশমোর ও কার্টিয়ার দ্বীপপুঞ্জ, অস্ট্রেলীয় অ্যান্টার্কটিকা, ক্রিসমাস দ্বীপ, কোকোস দ্বীপপুঞ্জ, কোরাল সি দ্বীপপুঞ্জ, হার্ড দ্বীপ ও ম্যাকডনাল্ড দ্বীপপুঞ্জ, এবং নরফোক দ্বীপ।

ভ্রমণের জন্য অস্ট্রেলিয়া অনন্য সুন্দর এক দেশ। কয়েকটা দর্শনীয় স্থান নিয়ে তথ্য দেয়া যাক তবে -  

সিডনি শহরটি অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। এটি নিউ সাউথ ওয়েলসের রাজধানী এবং একটি আধুনিক শহর, যার আছে লম্বা ইতিহাস। এই অঞ্চলের প্রথম অধিবাসীরা হাজার হাজার বছর পূর্বে এই উপকূলে বাস করতো। ১৭৮০ সালে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পাঠানো হত এই উপকূলে। বর্তমানে ফেরীতে করে সমুদ্র ভ্রমণের জন্য দর্শনার্থীদের ঘোরানো হয় সিডনি হারবার ব্রিজ এবং আইকনিক সিডনি অপেরা হাউজ।

অস্ট্রেলিয়ার উপকূলীয় শহর কুইন্সল্যান্ডের কোরাল সাগরে পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ প্রবাল প্রাচীর গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ অবস্থিত। যা ২,৯০০টির বেশি প্রবাল প্রাচীর এবং শত শত দ্বীপ নিয়ে গঠিত। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে লক্ষ লক্ষ জীবন্ত প্রাণী একত্র হয়ে বিশাল প্রবাল প্রাচীর গঠিত হয়েছে যা পৃথিবীর সবচাইতে বিচিত্র বাস্তুতন্ত্রের একটি এবং অস্ট্রেলিয়ার দর্শনীয় স্থানগুলোর অন্যতম।

অ্যালিস স্প্রিংস অস্ট্রেলিয়ার মাঝামাঝি অবস্থিত এবং কাছাকাছি শহর থেকে ১৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অ্যালিস স্প্রিংসে গুহা, গিরিসঙ্কট, সীমানাহীন মরুভূমি  এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের দেখা মিলে। এখানে অনেক জনবিরল ও দর্শনীয় স্থান আছে এবং পর্বত আরোহণের সুযোগ আছে যেমন- উলুরো/আয়ারস পর্বত, কাটা টিজুটা ও কিং ক্যানিয়ন। আশির দশকে পর্যটকের আনাগোনা বেশি হওয়ার ফলে এখানকার জনসংখ্যা ২৮০০০ এ উন্নিত হয়।

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু, স্বাচ্ছন্দ্যকর আবহাওয়া এবং গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ থেকে মোটামুটি কাছে হওয়ায় Cairns  অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় অবকাশ যাপনস্থল যা অস্ট্রেলিয়ার উত্তরপূর্ব কোণে অবস্থিত। Cairns প্রাদেশিক হলেও স্টাইলিশ শহর, এর জনসংখ্যা ১৫০,০০০। পর্যটকদের জন্য চমৎকার উপকূলীয় পরিবেশ এবং বিচিত্র বন্যপ্রাণীর দেখা মিলে এখানে।

ভিক্টোরিয়া রাজ্যের রাজধানী এবং অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল শহর হচ্ছে মেলবোর্ন যা অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত। মেলবোর্ন শহর পৃথিবীর সবচেয়ে বাসযোগ্য শহর। মেলবোর্ন অস্ট্রেলিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানী ও গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। এই শহরের শপিং সেন্টার, রেস্টুরেন্ট, স্পোর্টস ভেনু সব কিছুই পরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে। ভ্রমণ বিলাসী মানুষের জন্য মেলবোর্ন আদর্শ স্থান।

অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী হচ্ছে ক্যানবেরা। সব দেশের এম্বেসি কিংবা হাইকমিশন এখানে অবস্থিত। আমেরিকা গেলে মানুষ যেমন নায়াগ্রা ফলস না দেখে ফিরে না তেমনি অস্ট্রেলিয়ায় গেলে ক্যাঙ্গারু না দেখে ফিরে না। সেখানে (ক্যানবেরা) পথের দুইপাশে অসংখ্য ক্যাঙ্গারু। ক্যাঙ্গারুর চলাফেরা খুব মজার, তাদের মত লেজে ভর দিয়ে জোড়া পায়ে লাফিয়ে আর কোন প্রাণী ছুটতে পারেনা। তার চেয়েও মজার হচ্ছে, মায়ের পেটের থলেতে ক্যাঙ্গারুর বাচ্চার বসে থাকা। বাচ্চা গুলোকে দেখে মনে হয়, পৃথিবীতে বুঝি এর থেকে আরামের কোন জায়গা নেই।

ব্লু-মাউন্টেইন একটি বিস্তীর্ণ পর্বতমালা, যতদূর চোখ যায় উঁচুনিচু পাহাড় আর পাহাড়। পুরো এলাকাজুড়ে অনেক নিচুতে ইউক্যালিপটাস এর বন মাঝে মাঝে সঘন সবুজ ট্রিফার্ণ, একেবারে রাক্ষুসে সাইজের, সেগুলি এত বিশাল আর বিস্তৃত... অসংখ্য ইউক্যালিপটাস নিঃসৃত একধরণের বাষ্প বা গ্যাসের উপস্থিতে দূর থেকে এই পাহাড়কে হালকা নীলাভ লাগে আর পাহাড়ের গায়ে মেঘের ছায়া পড়লে অদ্ভুত নীল দেখা যায়, এজন্যই হয়ত এ পাহাড়ের নাম ‘ব্লু-মাউন্টেইন’। 

একনজরে

পুরো নাম : কমনওয়েলথ অব অস্ট্রেলিয়া

রাজধানী : ক্যানবেরা

সর্ববৃহৎ শহর : সিডনি

জনসংখ্যা : দুই কোটি ৩৯ লাখ ৮ হাজার ৯ শ (২০১৫ সালের হিসাব)

ঘনত্ব : ২ দশমিক ৮ জন (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে)

আয়তন : ৭৬ লাখ ৯২ হাজার ২৪ বর্গকিলোমিটার

রাষ্ট্রভাষা : নেই

প্রধান ভাষা : ইংরেজি

প্রধান ধর্ম : খ্রিস্টান

গড় আয়ু : ৮০ (পুরুষ), ৮৪ (নারী)

সরকারের ধরন : ফেডারেল পার্লামেন্টারি কনস্টিটিউশনাল মনার্কি

আইন পরিষদ : পার্লামেন্ট

উচ্চকক্ষ : সিনেট

নিম্নকক্ষ : হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস

জিডিপি : মোট ১ দশমিক ১৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার

মাথা পিছু : ৪৭ হাজার ৬০৮ ডলার

মুদ্রা : অস্ট্রেলিয়ান ডলার।

ছবি ও তথ্য – ইন্টারনেট 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন