শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ , ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার
  >
মানচিত্র

সৌন্দর্যের ঘোর বিস্ময় লাগা দেশ পেরু

নিউজজি ডেস্ক ৩ অক্টোবর , ২০১৮, ১২:৩০:২০

15K
  • সৌন্দর্যের ঘোর বিস্ময় লাগা দেশ পেরু

আলাস্কা ছুঁয়ে ইনকাদের যে দল আমেরিকায় প্রবেশ করেছিল, তাদের পোশাক ছিল পশুর চামড়া। আমেরিকার গ্রীষ্মপ্রধান এলাকায় প্রবেশ করার পর এরা হালকা পোশাকের জন্য সূতিবস্ত্র তৈরি করা শেখে। পেরু অঞ্চলে প্রবেশ করার পর, এরা লামার পশম দিয়ে পোশাক বানানো আয়ত্ব করে। অভিজাতরা পোশাকের সাথে পরতো ধাতুর প্রতীকী লকেট।  সকল মানুষে পায়ে চপ্পল জাতীয় উপকরণ ব্যবহার করতো। এই চপ্পল তৈরি হতো লামার চামড়া থেকে। সাম্রাজ্যের ভিতরে যোগাযোগ রক্ষার প্রধান ব্যবস্থা ছিল, সড়কপথ। পুরো সাম্রাজ্য জুড়ে এরা সড়ক তৈরি করেছিল প্রায় ১৪ হাজার মাইল। এই পথকে বর্তমানে বলা হয় ইনকা ট্রেইল। এই পথ ছিল মূলত পায়ে চলার উপযোগী। তবে স্থান বিশেষে মালামাল পরিবহনের উপযোগী গাড়ি চলাচলের জন্য রাস্তাও ছিল। স্থানের বৈশিষ্ট্য অনুসারে এই পথের প্রকৃতি নানাস্থানে নানা রকমের ছিল। সমতলভূমিতে বড় বড় পাথর বা কোথাও নুড়ি বিছিয়ে পথের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করতো। ফলে বর্ষার সময়েও কাদা এবং পিচ্ছিল অবস্থা থেকে পথচারী মুক্তি পেতো। পাহাড়ি অঞ্চলে এই পথ তৈরি করা হতো সিঁড়ি। কোথাও কোথাও ব্যবহৃত হতো প্রাকৃতিক পাহড়ি সমতলধর্মী বন্ধুর পথ। এই পথে সামরিক ও বেসামরিক সকল লোকই চলাচল করতো। হাজার বছর আগেই এইরূপ এগিয়ে থাকা জাতির দেশ পেরু। 

পেরু দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম-মধ্য অঞ্চলে, প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। পেরুর ভূগোলে চরম বৈপরিত্যের সহাবস্থান পরিলক্ষিত হয়। এখানে আছে জনবিরল মরুভূমি, সবুজ মরূদ্যান, বরফাবৃত পর্বতমালা, উচ্চ মালভূমি এবং গভীর উপত্যকা। দেশটির উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব বরাবর আন্দেস পর্বতমালা চলে গেছে। আন্দেস পেরিয়ে দেশের অভ্যন্তরে রয়েছে ঘন ক্রান্তীয় অরণ্য, যেখানে জনবসতি তেমন ঘন নয়। 

পেরু অতীতে দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তৃত ইনকা সাম্রাজ্যের কেন্দ্র ছিল। ১৬শ শতকে স্পেনীয় বিজেতাদের হাতে ইনকা সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। আন্দেসের স্বর্ণ ও রূপার খনির আকর্ষণে স্পেনীয় খুব শীঘ্রই পেরুকে দক্ষিণ আমেরিকাতে তাদের সম্পদ ও শক্তির কেন্দ্রে রূপান্তরিত করে। পেরু ১৯শ শতকের শুরুতে স্বাধীনতা লাভ করে। 

 পেরুর বেশির ভাগ লোক ইনকা বা অন্য আদিবাসী আমেরিকান জাতির লোক। ইনকাদের ভাষা কেচুয়া ভাষা এবং এর সাথে সম্পর্কিত আরেকটি ভাষা আইমারা ভাষা স্পেনীয় ভাষার পাশাপাশি দেশটির সরকারি ভাষার মর্যাদা লাভ করেছে। তবে পেরুতে এখনও ঔপনিবেশিক শাসনামলে সৃষ্ট শ্রেণী ও জাতিগত বৈষম্য বিরাজমান। এই বিভক্ত সমাজে সংখ্যালঘু স্পেনীয় অভিজাত শ্রেণী দীর্ঘদিন যাবৎ সংখ্যাগুরু আদিবাসী আমেরিকান এবং দো-আঁশলা মেস্তিজোদের শাসন করে আসছে।

ভ্রমণকারীদের তালিকায় অবশ্যই পেরু একটি প্রিয় নাম। প্রতি বছর লাখো দর্শনার্থী পেরু ভ্রমণ করেন এবং দেশটির অনন্য সব সৌন্দর্য্য উপভোগ করেন। শুধু অপূর্ব প্রকৃতি নয়, পেরু প্রাচীন ঐতিহ্য, সভ্যতার এক মহামিলন কেন্দ্র। 

মাচু পিচু 

মাচুপিচু হচ্ছে ইনকা জাতির প্রতিষ্ঠিত সবচেয়ে বিস্ময়কর নগরীর নাম। প্রতি বছর পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে লাখ লাখ পর্যটক মাচুপিচু দেখতে ছুটে যায় পেরুর রাজধানী লিমা থেকে ৩৫৭ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত কুসকো শহরে। এখানেই অবস্থিত মাচুপিচু সভ্যতা। ধারণা করা হয়, পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইনকা নগরী মাচুপিচু তৈরি করা হয়। পেরুর দক্ষিণ-পশ্চিমে আন্দিজ পর্বতমালায় অবস্থিত এই শহর। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতা হচ্ছে ইনকা সভ্যতা। নানা মায়া কাহিনি প্রচলিত রয়েছে ইনকাদের নিয়ে। তাদের রাজ্যের পথের ধুলোয়ও নাকি সোনার গুঁড়ো ছিল।

ইনকা সাম্রাজ্য দুই হাজার পাঁচশ মাইলব্যাপী বিস্তৃত ছিল। এখানে প্রতিটি মানুষ এমনকি অন্ধ, খোঁড়া, মূক, বধির, বৃদ্ধ প্রতিটি লোক সম্মানের সঙ্গে তার শ্রমের বিনিময়ে উৎপাদিত শস্য সমানভাগে উপভোগ করত। আধুনিক পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্র আজও সে উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেনি। মাচুপিচু শব্দের অর্থ প্রাচীন পর্বত। শব্দটি মূলত আমেরিকান প্রাচীন জাতি কেচুয়াদের ব্যবহৃত শব্দ। মাচুপিচু শুধু পর্যটক নয়, বছরের পর বছর আকৃষ্ট করেছে প্রত্নতত্ত্ববিদদেরও। মাচুপিচু নগরীটি কোনো ধ্বংসাবশেষ নয় বরং একেবারে অক্ষত অবস্থায় আছে। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এটি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়। বর্তমান বিশ্বের কাছে ইনকা সভ্যতা বলতে মাচুপিচুরই পরিচিতি সবচেয়ে বেশি। মাচুপিচুর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭,৫০০ ফুট উচ্চতায়। 

অধিকাংশ সময় মাচুপিচু নগরী মেঘের আড়ালে ঢাকা থাকে বলে একে ‘মেঘের দেশের নগরী’ বলা হয়। অনেক সময়ে এর ওপর দিয়ে চলাচল করা বৈমানিকদেরও এটি চোখে পড়ে না। মাচুপিচুর সৌন্দর্যের মূল আকর্ষণ হলো আশপাশের ঘন সবুজ বন। অনেকেই বিশ্বাস করেন ‘মাচুপিচু’ অত্যন্ত পবিত্র একটি জায়গা। আবার অনেকের বিশ্বাস এই শহরে ইনকা সম্রাট বসবাস করতেন। কারো আবার ধারণা এখানে ছিল ইনকাদের দুর্গ। উপকথা অনুযায়ী প্রথম সাপা ইনকা মাংকো কাপাক ১২০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে কোস্কো রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে মাংকো কাপাকের উত্তরসূরিদের অধীনে আন্দেস পর্বতমালার অন্য জাতি-গোষ্ঠীগুলোকে নিজেদের মধ্যে নিয়ে এসে এ রাজ্যটি বিস্তার লাভ করে। ১৪৪২ সালের মধ্যেই রাজা পাচকুতিকের অধীনে ইনকারা তাদের সাম্রাজ্য দূর-দূরান্তে বিস্তৃত করে। পাচকুতিক নামের অর্থই হচ্ছে, ‘পৃথিবী কাঁপানো মানুষ।’ তিনিই ইনকা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন, যা কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের আগে দুই আমেরিকা মহাদেশের সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য ছিল। এই সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক কেন্দ্র ছিল কোস্কো শহর। পেরুর পাহাড়ি এলাকায় ১৩০০ শতকের দিকে ইনকা সভ্যতার সূচনা হয়। বর্তমান ইকুয়েডর, পেরু, বলিভিয়া, উত্তর-পশ্চিম আর্জেন্টিনা, উত্তর চিলি ও দক্ষিণ কলম্বিয়াও ইনকা সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইনকা জাতি বেশ বুদ্ধিমান ছিল। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ইনকাদের রাজত্বে কখনো না খেয়ে মরার কোনো ঘটনা ঘটেনি। যতদূর জানা যায়, ইনকা সম্রাটই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম তার রাজ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, চুরি করলে অপরাধীর শাস্তি সরাসরি এবং প্রচলিত সাধারণ নিয়মে হবে না। আগে তদন্ত করে দেখতে হবে যে, চুরিটা কোন পর্যায়ের; স্বভাবগত নাকি অভাবের দরুন। স্বভাবগত হলে তাকে রোদে শুকিয়ে মারতে হবে, অভাবের দরুন হলে সে যে এলাকার মানুষ সেই এলাকার শাসন কর্তাকে রোদে শুকিয়ে মারতে হবে। কেননা তার শাসনেই এই অভাবের জন্ম। পৃথিবীতে এমন অদ্ভুত দৃষ্টান্ত অন্য কোথাও পাওয়া যায়নি। ইনকা সভ্যতায় ধর্মভিত্তিক কুসংস্কারের কোনো শেষ ছিল না। সূর্য দেবতা ‘ইনটি’ ছিল ইনকা ধর্মের মূল কেন্দ্র। তবে এর পাশাপাশি তারা স্থানীয় অনেক দেব-দেবীকে মেনে নিয়েছিল। প্রজারা এসব দেব-দেবীর পূজা করত, যারা ‘হুয়াকাস’ নামে পরিচিত ছিল। যদিও ইনকারা মেক্সিকোর অ্যাজটেকদের মতো রক্তপিপাসু ছিল না, তবুও তারা নরবলি পছন্দ করত। বিশেষ করে ‘কাপাকচা’ নামের বিশেষ অনুষ্ঠানে শিশুদের বলি দেওয়া হতো। দেব-দেবীর উদ্দেশে উৎসর্গ করার আগে ইনকারা কিভাবে তাদের সন্তানদের মোটাতাজা করত, কিছু মমি আবিষ্কারের মাধ্যমে তার নির্মম প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রাচীন ইনকা সভ্যতার নিকটবর্তী ‘লুলাইলাকো’ নামের একটি আগ্নেয়গিরির চূড়ায় সংরক্ষিত ৫০০ বছরের পুরনো মমির চুল পরীক্ষার মাধ্যমে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গেছে। সেখানে ‘লুলাইলাকোর কুমারী’ নামে পরিচিত ১৫ বছর বয়সী এক বালিকা এবং ‘লুলাইলাকোর বালক’ নামে সাত বছর বয়সী এক বালকের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। মমিকৃত দুটি দেহের সঙ্গে ছয় বছর বয়সী আরেকটি ছোট মেয়ের মমির সন্ধান পাওয়া যায়। শুধু পাহাড়ের দেবতাদের তুষ্ট করতেই তাদের বলি দেওয়া হতো না, বরং একটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সম্পর্কে বিজিতদের মনে ভয় ও সম্মান ঢুকিয়ে দেওয়াও এর একটি উদ্দেশ্য ছিল। 

মাচুপিচু শহরটির ১৪০টি স্থাপনার মধ্যে রয়েছে কিছু মন্দির, পবিত্র স্থান, উদ্যান এবং আবাসিক ভবনসমূহ (আবাসিক ভবনগুলো খড়ের ছাউনি দেওয়া ছিল)। মাচুপিচুতে রয়েছে ১০০টিরও বেশি সিঁড়ি যার মধ্যে কিছু কিছু একটি মাত্র গ্রানাইট পাথরের খ- কুদে তৈরি করা হয়েছে। এখানে আরও রয়েছে প্রচুর সংখ্যক ঝরনা, যেগুলো পাথর কেটে তৈরি করা ছোট ছোট খালের মাধ্যমে পরস্পর সংযুক্ত এবং এসব মূলত সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, এই সেচ ব্যবস্থা ব্যবহার করে একটি পবিত্র ঝরনা থেকে পানি প্রতিটি বাড়িতে সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এটি ১৪৫০ সালের দিকে নির্মিত হয়, কিন্তু এর ১০০ বছর পর ইনকা সভ্যতা যখন স্পেন দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন এটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। কয়েক শ বছর অজ্ঞাত থাকার পর ১৯১১ সালে আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিরাম বিংহ্যাম মাচুপিচুকে আবার লোকচক্ষুর সামনে নিয়ে আসেন। ১৯১১ সালের ২৪ জুলাই তিনি বৈজ্ঞানিক অভিযানে মাচুপিচু এসে পৌঁছান। খুঁজে পান ইনকা সভ্যতার হারিয়ে যাওয়া এই নগরী। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক জার্নালে তিনি তার অভিযান এবং আবিষ্কারের কথা জানান। তারপর থেকে মাচুপিচু পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। এটিকে ১৯৮১ সালে পেরুর সংরক্ষিত ঐতিহাসিক এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ইউনেস্কো ১৯৮৩ সালে এটিকে তাদের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এটি বর্তমান বিশ্বের সাতটি নতুন বিস্ময়েরও একটি।

চান চান 

আর্কিওলজিকাল সাইটের ভক্তরা অবশ্যই ঘুরে যাবেন পেরুরু চান চান নামক প্রাচীন শহরে। এর আভিধানিক অনুবাদ দাঁড়ায় 'Sun Sun'। তুলনামূলক অপরিচিত কিন্তু ঐতিহ্য অনন্য শহর এটি। এক্সপ্লোর করে আবিষ্কারের সুযোগ রয়েছে যথেষ্ট। সিমু সাম্রাজ্য ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দে এই শহর প্রতিষ্ঠা করে। চান চান দীর্ঘদিন স্বাধীন রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। যদিও এক সময় ইনকারা দখল করে ফেলে এটি। প্রচীন শহর তাই অবশ্যই দেখা হবে প্রাচীন দালান, রাস্তাঘাট, মন্দির, বাগানসহ অনেক কিছুর সাথেই। 

ইনকা ট্রায়াল 

যদি নিজের জীবনকে দিতে চান নতুন চ্যালেঞ্জ তাহলে আপনার জন্যই অপেক্ষা করছে ইনকা ট্রায়াল। সাউথ আমেরিকার বিখ্যাত ট্রাকিং রুট এটি। মজার বিষয় হল, ইনকাদের পদানুসরন করে পারি দিতে পারেন পর্বতময় দূগম পথ- এটাই চ্যালেঞ্জ এখানে। প্রাচীন ইনকাদের জন্য সহজ হলেও আমাদের জন্য কিন্তু মোটেই সহজ নয় কাজটি। তবু সাহসী ভ্রমণকারীরা এখানে আসেন, হাইকিং করেন। পথ দূর্গম, কিন্তু সেই পথের সৌন্দর্য্য অসীম। আপনিও একবার এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেখুন, জীবন বদলে যাবে। 

কাসা ডে লা এমান্সিপাকন 

যখন পেরুর আকর্ষণের মূলেই রয়েছে সব প্রাচীন সভ্যতা তখন চোখ ফিরিয়ে ভিন্ন কিছু খুজলেও হতাশ হবেন না। পেরুতে সেই আয়োজনও আছে। ঘুরে আসুন কাসা ডে লা এমান্সিপাকন, এর অবস্থান কলনিয়াল শহর ট্রুজিলোতে।লিমার পর এটিই সবচেয়ে বড় মেট্রোপলিস। পেরুর আধুনিক শহর, শিল্প-সংস্কৃতির সাথে পরিচয় হবে আপনার এখানে, এরমধ্যে কিউবিক কাজাবাম্বা ফ্লোর একটি মাস্টারপিস।

নাজকা লাইন 

নাজকা লাইন হলো পেরুর প্রাচীন ইনকা সভ্যতার নিদর্শন। কিন্তু বিশাল এলাকা জুড়ে আঁকা এসব রেখাচিত্র কি সেই প্রাচীন মানুষের পক্ষে এঁকে রাখা সম্ভব? এই রেখাচিত্র কারা তৈরি করলো, কেনই বা করলো সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য আজও অজানা। কেউ বলেন এগুলো হলো ইনকাদের স্বর্গীয় পঞ্জিকা। কেউ বলেন ইনকাদের দেবতাদের নিদর্শন এই বিশাল চিত্র। আবার কারও কারও মতে, এগুলো হলো এলিয়েনদের মহাকাশযান অবতরণের স্থান। খ্রিস্টপূর্ব ২০০ থেকে ৬০০ খ্রিস্টাব্দের মাঝে কোনও এক সময়ে এই রেখাচিত্র তৈরি করা হয়। শুধু ইনকা সভ্যতাই নয়, এমন রহস্যময় রেখাচিত্র রয়েছে মিশর, মাল্টা, আমেরিকার মিসিসিপি এবং ক্যালিফোর্নিয়া, চিলি, বলিভিয়া এবং অন্যান্য দেশেও। কিন্তু নাজকায় এসব রেখাচিত্র এত বড়, বিচিত্র এবং এত বেশী সংখ্যায় রয়েছে যে তা স্বাভাবিকভাবেই আকৃষ্ট করে বিভিন্ন ধারার গবেষকদের। নাজকা এবং পালপা নগরীর মাঝে অবস্থিত এই ৪০০ বর্গমাইল মরু এলাকা জুড়ে রয়েছে তিন শতাধিক রেখাচিত্র যাতে ব্যবহৃত হয়েছে সরলরেখা এবং বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতি যা মাটি থেকে বোঝা না গেলেও আকাশ থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। ১৯২০ সালে পেরুর মরুভূমির ওপর দিয়ে বিমান চলাচল করতে শুরু করে। তখন থেকেই এসব রেখাচিত্র মানুষের চোখে পড়া শুরু করে। বিমানের যাত্রীরা বলেন তারা এই মরুভূমির ভেতরে নাকি ল্যান্ডিং স্ট্রিপ এর মতো আকৃতি আঁকা দেখতে পান। আশ্চর্য ভাবেই বর্তমানে বন্যা, বিদ্যুতের পাওয়ার লাইন ইত্যাদির কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই এলাকা।তবুও ঠিক একই রূপ আছে পেরুর এই নাজকা লাইন।

মাউন্ট ভিনিচুনকা 

মেরুন, ফিরোজা, হলুদ, ল্যাভেন্ডার রঙ ছড়িয়ে রয়েছে পুরো পাহাড় জুড়ে। পেরুভিয়ান আন্দেজের অসাঙ্গাতে পর্বতাঞ্চলে এমন অনেক পাহাড় রয়েছে, যেগুলোর রঙ একটি অপরটি থেকে ভিন্ন। কোনোটি গাঢ় মেরুন, কোনোটা উজ্জ্বল ফিরোজা। তবে এসব পাহাড়ের মধ্যে সবচেয়ে অনন্য মাউন্ট ভিনিচুনকা। মাউন্ট ভিনিচুনকাকে রেইনবো মাউন্টেন বা রংধনু পর্বতও বলা হয়ে থাকে। মাত্র দুই বছর আগে এই পাহাড়টির অস্তিত্ব আবিষ্কার হয়। স্থানীয়রা একে মোনটানা দে কালারস নামে ডাকেন। আর পর্যটকদের কাছে এর নাম রংধনু পাহাড়। ৬ হাজার মিটার উচ্চতার এ পাহাড়টির স্তরে স্তরে বিভিন্ন রঙ। দীর্ঘকালের জলবায়ু ও খনিজের উপস্থিতির কারণে এমন রঙ ধারণ করেছে এই পাহাড়। মাটিতে আয়রন অক্সাইডের আধিক্যের কারণে মাটির রং লাল আর আয়রন সালফাইডের আধিক্যের কারণে মাটির রং হলুদ হয়ে গেছে।

এক নজরে 

পুরো নাম : পেরু প্রজাতন্ত্র 

রাজধানী ও সবচেয়ে বড় শহর : লিমা 

দাপ্তরিক ভাষা : স্প্যানিশ 

অন্যান্য ভাষা : কুয়েচুয়া, আয়মারা 

জাতিগোষ্ঠী : ৪৫ শতাংশ আমেরিনডিয়ান, ৩৭ শতাংশ মেসটিজো, ১৫ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ ও অন্যান্য ৩ শতাংশ 

সরকার পদ্ধতি : ইউনিটারি সেমি-প্রেসিডেনশিয়াল রিপাবলিক 

আইনসভা : কংগ্রেস অব দ্য রিপাবলিক 

স্বাধীনতা : স্পেন থেকে ১৪ আগস্ট ১৮২৪ 

আয়তন : ১২ লাখ ৮৫ হাজার ২১৬ বর্গকিলোমিটার 

জনসংখ্যা : তিন কোটি ১৮ লাখ ২৬ হাজার 

১৮ ঘনত্ব : প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৩ জন 

জিডিপি : মোট ৪২৯.৭১১ বিলিয়ন ডলার 

মাথাপিছু : ১৩ হাজার ৫০১ ডলার 

মুদ্রা : সোল (পেন) 

জাতিসংঘে যোগদান : ৩১ অক্টোবর ১৯৪৫।

ছবি ও তথ্য – ইন্টারনেট 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন