শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ , ৫ জুমাদাউস সানি ১৪৪৬

ফিচার
  >
মানচিত্র

আলেকজান্ডারের দেশ মেসিডোনিয়া

নিউজজি ডেস্ক ১৪ জুন , ২০২৪, ০০:৫৬:২৯

242
  • আলেকজান্ডারের দেশ মেসিডোনিয়া

ঢাকা: মেসিডোনিয়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বলকান উপদ্বীপের একটি ছোট্ট দেশ। এটি সাবেক যুগোস্লাভিয়ার অন্যতম উত্তরসূরি রাষ্ট্র। মেসিডোনিয়া ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সদস্য হয়। কিন্তু ‘মেসিডোনিয়া’ নাম ব্যবহার নিয়ে গ্রিসের সাথে চলমান বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রচলিত বিবরণ অনুযায়ী ‘সাবেক যুগোস্লাভ প্রজাতন্ত্র মেসিডোনিয়া (এফওয়াইআরওএম বা এফওয়াইআর মেসিডোনিয়া)’ নামে মেসিডোনিয়াকে জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউরোপীয় কাউন্সিল ও ন্যাটোর মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোতেও এই নামই ব্যবহার করা হয়। ২০১৮ সালের ১৭ জুন মেসিডোনিয়া ও গ্রিস প্রেসপা চুক্তি সই করে। এই চুক্তি মোতাবেক দেশটির নামকরণ করা হয় ‘উত্তর মেসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্র’। ইতিহাসের বিখ্যাত ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট কিং’-এর জন্ম এই মেসিডোনিয়ায়।

ভূমি-পরিবেষ্টিত মেসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্রের সীমান্তে রয়েছে উত্তর-পশ্চিমে কসোভো, উত্তরে সার্বিয়া, পূর্বে বুলগেরিয়া, দক্ষিণে গ্রিস এবং পশ্চিমে আলবেনিয়া। মেসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্র মেসিডোনিয়া নামক বিশাল ভৌগোলিক অঞ্চলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ উত্তর-পশ্চিম এলাকা নিয়ে গঠিত। উল্লেখ্য, বিশালাকার ভৌগোলিক অঞ্চল মেসিডোনিয়া পার্শ্ববর্তী উত্তর গ্রিসের কিছু অংশ, দক্ষিণ-পশ্চিম বুলগেরিয়ার একটি ছোট অংশ এবং আলবেনিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অংশ নিয়ে গঠিত। দেশটির ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যে পর্বত, উপত্যকা ও নদীর প্রাধান্য রয়েছে। রাজধানী ও বৃহত্তম শহর স্কোপজে।

স্কোপজেতে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ অর্থাৎ ৫ লাখ ৮৪ হাজার লোক বাস করে। মেসিডোনিয়ার আয়তন ২৫ হাজার ৭১৩ বর্গ কিলোমিটার (৯ হাজার ৯২৮ বর্গমাইল)। জনসংখ্যা ২১ লাখ ৩ হাজার ৭২১ জন। অধিবাসীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ জাতিগত মেসিডোনিয়ান ও দক্ষিণ স্লাভিক জনগোষ্ঠী (৬৪.২%)। আলবেনীয়রা মেসিডোনিয়ার জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২৫.২%)। এর পরেই রয়েছে তুর্কি, রোমানি, সার্ব, বুলগেরীয় ও অন্যান্যদের অবস্থান। প্রধান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে রয়েছে অর্থোডক্স খ্রিষ্টান (৬৪.৮%) ও মুসলিম (৩৩.৩%)। প্রধান ভাষা মেসিডেনিয়ান ও আলবেনিয়ান। এদেশের মুদ্রার নাম দিনার।

আলেকজন্ডার৩দেশটির ভূমি এবড়োখেবড়ো ও শিলা কঙ্করময়। বেশির ভাগ ভূমি গড়ে উঠেছে ভারদার নদী উপত্যকায়। সীমান্তে সারি সারি পাহাড়। দেশের দক্ষিণে রয়েছে তিনটি বড় হ্রদ। ধারণা করা হয়, ওহরিড নামের হ্রদটি বিশ্বের প্রাচীনতম হ্রদগুলোর মধ্যে অন্যতম। মেসিডোনিয়া উচ্চ ভূমিকম্পপ্রবণ একটি দেশ। বর্তমান রাজধানী স্কোপজে ১৯৬৩ সালে উচ্চমাত্রার একটি ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়। দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম। সারি সারি পর্বতমালাকে কেন্দ্র করে গাছগাছালিতে তৈরি হয়েছে এক মায়াময় পরিবেশ। গ্রীষ্মকাল বেশ উষ্ণ এবং শুকনো আবহাওয়া। শীতের তীব্রতা খুব বেশি না হলেও তুষারপাত হয় ব্যাপক। ছোট হলেও দেশটি তিনটি জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত। ভূমধ্যসাগরীয়, পাহাড়ি এবং মৃদু মহাদেশীয়।

সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ মেসিডোনিয়া। এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার আসনসংখ্যা ১২০। প্রতি চার বছর পর সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসিডেন্টের ভূমিকা অলঙ্কারিক। তিনি নির্বাচিত হন পাঁচ বছরের জন্য। দুইবারের বেশি কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না। মেসিডোনিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জর্জ ইভানভ এবং প্রধানমন্ত্রী জোরান জায়েভ। ৭৮টি মিউনিসিপ্যালিটির মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যক্রম চলে। রাজধানী স্কোপজের শাসনের জন্য রয়েছে আলাদা দশটি মিউনিসিপ্যালিটি।

মেসিডোনিয়ার প্রাচীন সভ্যতার কিছু নিদর্শন দেশটিতে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। রয়েছে প্রাচীন অসংখ্য ধর্মীয় নিদর্শন। এগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে গুরুত্বসহকারে। তার ওপর দেশটির প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সংস্কৃতিও সমৃদ্ধ। তাই পর্যটন শিল্প গড়ে না উঠলেও পর্যটন থেকে আয় কম নয়। বছরে গড়ে সাত লাখেরও বেশি পর্যটক ভ্রমণ করে দেশটিতে। কলা, স্থাপত্য, কাব্য ও সঙ্গীত শিল্পে ঐতিহ্যগতভাবে সমৃদ্ধ মেসিডোনিয়া।

এই অঞ্চলের ইতিহাস প্রাচীন কাল পর্যন্ত বিস্তৃত। সম্ভবত মিশ্র থ্রেকো-ইলিরিয়ান রাষ্ট্র পাইয়োনিয়া রাজ্য দিয়ে এর সূচনা। খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষের দিকে এলাকাটি পারসিয়ান আচিমেনিদ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, এরপর খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে মেসিডোনিয়া রাজ্যে কুক্ষিগত করা হয়। রোমানরা খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে এই অঞ্চল দখল করে এবং এটাকে বৃহত্তর মেসিডোনিয়া প্রদেশের অংশে পরিণত করে। খ্রিষ্টান যুগের ষষ্ঠ শতাব্দীর শুরুতে এই এলাকা বাইজান্টাইন (পূর্বাঞ্চলীয় রোমান) সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে যায় এবং স্লাভিক জনগোষ্ঠী প্রায়ই সেখানে হামলা চালিয়ে বসতি স্থাপন করতে থাকে।

পরবর্তীতে বহু শতাব্দী ধরে বুলগেরিয়া, বাইজান্টাইন ও সার্বিয়ার সাম্রাজ্যের মধ্যে বিবাদ চলার পরিপ্রেক্ষিতে চতুর্দশ শতাব্দী থেকে এলাকাটি ক্রমান্বয়ে উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিক এবং বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের মধ্যবর্তী সময়ে একটি স্বতন্ত্র মেসিডোনিয়ান জাতীয়তাবাদের আবির্ভাব ঘটে, যদিও ১৯১২ ও ১৯১৩ সালের বলকান যুদ্ধের পর আধুনিক মেসিডোনিয়া অঞ্চল সার্বিয়ান শাসনাধীনে চলে যায়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মেসিডোনিয়া সার্ব-নিয়ন্ত্রিত যুগোস্লাভিয়া রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুগোস্লাভিয়া একটি প্রজাতন্ত্র (১৯৪৫) হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৬৩ সালে যুগোস্লাভিয়া সোস্যালিস্ট ফেডারেল রিপাবলিকে পরিণত হয়। মেসিডোনিয়া ১৯৯১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত যুগোস্লাভিয়ার মধ্যে একটি সংবিধিবদ্ধ সোস্যালিস্ট রিপাবলিক ছিল।

মেসিডোনিয়া জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় পরিষদের সদস্য। ২০০৫ সাল থেকে মেসিডোনিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের জন্য প্রার্থী হয়ে আছে এবং ন্যাটো সদস্যপদের জন্যও আবেদন করে রেখেছে। ইউরোপের অন্যতম গরিব দেশ হলেও মেসিডোনিয়া একটি উন্মুক্ত, বাজারভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলায় তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেছে।

১৯৯১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মেসিডোনিয়ার সঙ্গে গ্রিসের ‘মেসিডোনিয়া’ নাম নিয়ে বিবাদ চলছিল। অবশেষে দীর্ঘ ২৭ বছর পর বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে ঐতিহাসিক সমঝোতায় পৌঁছেছে দুটি দেশ। সাবেক যুগোস্লাভিয়ার এ দেশটি মেসিডোনিয়া নাম বদলে হয়েছে রিপাবলিক অব নর্থ মেসিডোনিয়া বা উত্তর মেসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্র।

এই নাম নিয়ে বিবাদের জেরেই মেসিডোনিয়ার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে ভেটো দিয়ে আসছিল গ্রিস। ফলে এ চুক্তির কারণেই পশ্চিম বলকান এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা তৈরি হবে এবং ন্যাটো জোটে মেসিডোনিয়ার যুক্ত হওয়ার পথ সুগম হবে।

মেসিডোনিয়া ইউরোপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। ইউরোপের অনন্য এক ঋতুর দেশ বলা হয় মেসিডোনিয়াকে। ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে এদেশের ঋতু এবং রূপবৈচিত্র্য ভিন্ন হওয়ায় ইউরোপের পর্যটকদের কাছে মেসিডোনিয়া প্রিয় একটি স্থান। মেসিডোনিয়ায় বেশ কয়েকটি সৌন্দর্যময় দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

মেসিডোনিয়ার জাতীয় উদ্যানগুলোর মধ্যে মভরোভো ন্যাশনাল পার্ক সবচেয়ে বৃহৎ এবং মেসিডোনিয়ার সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে অন্যতম। মেসিডোনিয়ার মানুষ এবং বিদেশী পর্যটকদের পছন্দের একটি স্থান এই মভরোভো জাতীয় উদ্যান। এই স্থানে অবস্থিত মভরোভো পর্বত, এ অঞ্চলের সর্বোচ্চ পর্বত। এমনকি পর্বতারোহীদের কাছেও পছন্দের পাহাড় এটি। শীতকালে পর্বতারোহীদের জন্য অন্যতম পছন্দের রিসোর্ট মভরোভো ন্যাশনাল পার্ক।

শীতকালে মভরোভো পর্বতে আরোহণ করা এবং পর্বতের চারদিকের তুষারপাত পর্বতারোহীদের মনে দারুণ এক শিহরণ জাগায়। মভরোভো হ্রদটি ১০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত । মেসিডোনিয়ার বিখ্যাত ট্রাউট মাছ এই হ্রদে পাওয়া যায়। হ্রদটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মন জুড়িয়ে দেয়। এই হ্রদটিতে ছোট ছোট নৌকা চলাচল করে, যেন পর্যটকরা নৌকায় চড়ে হ্রদটি ঘুরে দেখতে পারেন। এ ছাড়াও বেড়াতে আসা লোকজন এখানে সাঁতার কাটতে পারে এবং হ্রদের চারিদিকে পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়াতে পারে। পর্যটকগণ এখানে বেড়াতে এসে তাঁবু খাটিয়ে রাত কাটায়, এছাড়াও পাশের গ্রামগুলোতে রাত কাটানোর জন্য ছোট-বড় সুসজ্জিত হোটেল রয়েছে। প্রতিদিন প্রচুর লোকসমাগম ঘটে এই স্থানে, মভরোভো ন্যাশনাল পার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।

আকর্ষণীয় শহর ওহ্রিদ : এই শহরের প্রধান আকর্ষণ ওহ্রিদ লেক। এই হ্রদটিকে ইতোমধ্যে ইউনেস্কো তাদের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই ঐতিহাসিক শহরটি দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয়, সেইসাথে দৃশ্যত চিত্তাকর্ষক, ভ্রমণ গন্তব্য স্থলগুলোর মধ্যে একটি।

বিটলা সিটি : মেসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্রের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে অবস্থিত একটি শহর বিটলা। মেসিডোনিয়ার অন্যতম সুন্দর এবং প্রাচীন শহর এটি। শহরটি এগেইন সাগর এবং মধ্য ইউরোপের সাথে অ্যাড্রিটিক সাগর অঞ্চলের দক্ষিণে সংযুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ জংশনে অবস্থিত এবং একটি প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক, শিল্প, বাণিজ্যিক এবং শিক্ষাকেন্দ্র। উসমানীয় যুগের ‘কনসালস অফ দ্য সিটি’ হিসেবে এই শহরের পরিচিতি রয়েছে। এ ছাড়াও শহরের বিটলা জাদুঘর, বিভিন্ন সুন্দর গির্জা, কারুকার্যমণ্ডিত মসজিদগুলো, বিশেষ করে ইয়েনি মসজিদ পর্যটকদের নজর কেড়ে থাকে। প্রচুর ইউরোপীয় পর্যটক প্রতিদিন এই শহরে ঘুরতে আসেন।

স্কোপজে : স্কোপজে মেসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্রের রাজধানী এবং দেশের সবচেয়ে বড় শহর। এটি দেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও অ্যাকাডেমিক কেন্দ্র। রোমান সাম্রাজ্যের সময়কালে শহরটির নাম ছিল স্কুপি। স্কোপজে শহরটি প্রায় ৪ হাজার বছর পুরনো। ভারদার নদীর তীরে অবস্থিত। শহরটির বিন্যাস, স্থাপত্য, সৃজনশীলতা এখনো এর রঙিন অতীতকে প্রতিফলিত করে। উসমানীয় যুগের মসজিদগুলো এবং সাম্যবাদী যুগের অবকাঠামোগুলো এখনও শহরের ঐতিহ্য এবং সৌন্দর্য বর্ধন করে।

ক্রেটোভো : মেসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্রের ছোট্ট একটি শহর ক্রেটোভো। যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছোট্ট এই শহর। মেসিডোনিয়ার জীবন্ত জাদুঘর বলা হয় এই শহরটিকে। শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দুই হাজার ফুট উপরে, ওসোগভো পর্বতের পশ্চিম ঢালে অবস্থিত। মধ্যযুগে নির্মিত সেতু এবং টাওয়ারগুলোর জন্য শহরটি বিখ্যাত। টাওয়ারগুলো মূলত শহরের খনি, রাষ্ট্র ও সেনাবাহিনীর নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করা হতো। সেতুগুলো প্রাচীন স্থাপত্যবিদদের এক শৈল্পিক নিদর্শন।

আলেকজন্ডারের প্রাচীন সব নিদর্শনসমূহের পাশাপাশি মেসিডোনিয়ার ঋতু এবং রূপবৈচিত্র্য ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে ভিন্ন। তাইতো বলা হয়, ইউরোপের অনন্য এক ঋতুর দেশ মেসিডোনিয়া। যেসব দেশ ভ্রমণে ভিসা লাগে না মেসিডোনিয়া সেগুলোর মধ্যে অন্যতম।

প্রাচীনকালে মেসিডোনিয়া নামে এই ছোট রাজ্যটিই গ্রাস করে নিয়েছিল পৃথিবীর প্রায় পুরো ভূভাগ। সেই ইতিহাস গড়েছিলেন আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। ৩৫৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মেসিডোনে জন্ম নেন তিনি। ইতিহাসের সবচেয়ে সফল এই সমরনায়কের কোনো যুদ্ধে হেরে যাওয়ার নজির নেই। মৃত্যু অবধি একে একে রাজ্য জয় করে চলেছিলেন তিনি। বাবা সম্রাট দ্বিতীয় ফিলিপের মৃত্যুর পর তিনি ক্ষুদ্র দেশ মেসিডোনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ফিলিপ বেশ কয়েকটি গ্রিক নগররাষ্ট্র মেসিডোনের অন্তর্ভুক্ত করেন। সেই জয়ের ধারা আলেকজান্ডার নিয়ে থামান ভারতীয় উপমহাদেশে।

ইউরোপ-এশিয়ার সংযোগস্থল আনাতোলিয়া দখল করার মাধ্যমে তার বিজয় অভিযান শুরু হয়। এর পর একে একে জয় করেন সিরিয়া, ফোনেসিয়া, গাজা, মিসর, মেসোপটেমিয়া এমনকি বিস্তৃত ভারতীয় উপমহাদেশ। দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডারের শিক্ষক ছিলেন দার্শনিক অ্যারিস্টোটল। ছোটবেলায় পৃথিবীর মানচিত্র নিয়ে জ্ঞান দেন আলেকজান্ডারকে। সে সময় ছোট আলেকজান্ডারের মনে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন জাগে। তরুণ বয়সে বাবা মারা গেলে শক্ত হাতে রাজদণ্ড ধরেন।

মাত্র বিশ বছরের ব্যবধানে প্রায় পুরো বিশ্ব দখলে এসে যায়। রাজ্য বিস্তার আর শাসনভার পরিচালনায় তিনি অত্যন্ত কৌশলী ছিলেন। সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করেন। আবার বিয়ের মাধ্যমে অনেককে আপন করে নেন। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজবংশে নিজে বিয়ে করেন। অন্যদেরও এ ধরনের বিয়ে-শাদিতে উৎসাহিত করেন। অবশেষে ঘাতক ম্যালেরিয়া তার জীবন কেড়ে নেয়।

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন