বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ , ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার
  >
ফেসবুক কর্ণার

‘বাংলাদেশে সিনেমা বানাতে চাইলে সিন্ডিকেট ভাঙুন’

রেজা ঘটক ১১ ডিসেম্বর , ২০২১, ১৬:৪৮:৫৪

871
  • ‘বাংলাদেশে সিনেমা বানাতে চাইলে সিন্ডিকেট ভাঙুন’

কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা রেজা ঘটকের প্রথম সিনেমা ‘হরিবোল’। দীর্ঘ সময় নিয়ে তিনি সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন। এবার মুক্তির পালা। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর চলচ্চিত্রটি সেন্সর বোর্ডে জমা দেওয়া হলেও এখনও সিনোটি ছাড়পত্র মেলেনি। সিনেমাটি সেন্সরে বোর্ডে আটকে থাকার দুই বছর উপলক্ষে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন নির্মাতা। 

নিউজজি পাঠকদের জন্য তার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো।

ঠিক দুই বছর আগে ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর আমি ‘হরিবোল’ সিনেমা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে জমা দিয়েছিলাম। আজ (১০ ডিসেম্বর) দুই বছর পূর্ণ হলো অথচ সেন্সর বোর্ডের এখনো ঘুম ভাঙেনি! 

চলচ্চিত্র সেন্সর আইনের কোথাও সিনেমার সাথে এফডিসির এনওসি জমা দেওয়ার কোনো আইন নাই। নাই মানে একদম নাই। কিন্তু ‘সেন্সর বোর্ড, এফডিসি, প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি ও পরিচালক সমিতি’ এই চার সিন্ডিকেট মিলে একটা অলিখিত আইন বানিয়েছে যে সিনেমার সাথে এফডিসির এনওসি লাগবে। এই সিন্ডিকেটের ‘এনওসি লাগবে’ এমন দাবির পক্ষে কোনো সরকারি গেজেট নাই। কিন্তু এই চক্র এই অযুহাত দিয়ে আমার সিনেমা আটকে রেখেছে! তারা বলতে চাইছে এটাই প্রথা!

সবচেয়ে দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের গণমাধ্যম এই সিন্ডিকেটের এই ‘কথিত এনওসি লাগবে’ বিষয়ে কখনোই কোনো অনুসন্ধানী রিপোর্ট করে না। কারণ সিনে জার্নালিস্টদের এফডিসির বাৎসরিক পিকনিক তারা মিস করতে চায় না।

একজন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতার এই ‘কথিত এনওসি’র জন্য প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ কেন করতে হবে’ এটা নিয়েও কেউ প্রশ্ন তোলে না! প্রশ্ন হলো- তাহলে কী বাংলাদেশে স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা টার্মটি একটি লোক দেখানো বিষয়? আর তাদের কথিত প্রথা কেন তিন লাখ টাকা খরচ করে একজন স্বাধীন নির্মাতাকে মানতে হবে?

এর মধ্যে যতবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব পরিবর্তন হয়েছে ততবার এই ইস্যুকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু আমি আমার ‘হরিবোল’ চলচ্চিত্রের সেন্সর পাই নাই। তথ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব বসলেই আমাকে নতুন সচিব বরাবর চিঠি লেখার অনুরোধ করা হয়। প্রশ্ন হলো- আমার আগের চিঠিগুলো তাহলে মন্ত্রণালয়ে তথ্য সচিবের কাছে কী বার্তা পৌঁছালো? এই তামাশা কবে বন্ধ হবে?

আপনারা জানেন তথ্য সচিব যিনি থাকেন তিনিই সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান। বারবার সচিব বদল হবে আর বারবার নতুন সচিবকে চিঠি লিখতে হবে কেন? বাংলাদেশের সচিবালয়ে তাহলে একজন সাধারণ নাগরিকের পক্ষে কত বার চিঠি লেখা সম্ভব?

আমি সেন্সর বোর্ডকে আবারো স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- তথ্য সচিব বরাবর আর কোনো চিঠি আমি লিখব না। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি লিখব এবং আমার সিনেমার কপি পাঠাব এবং জানতে চাইব কোন আইনের বলে সেন্সর বোর্ড আমার সিনেমা আটকে রেখেছে? 

বাংলাদেশে সিনেমা বানানোর চেয়ে সিনেমার সেন্সর পেতে এই ‘চার সিন্ডিকেট যে কত বড় বাধা’ তা নিয়ে সবাই প্রশ্ন তুলুন। আজ পর্যন্ত আমার বন্ধু নির্মাতারা পর্যন্ত এটা নিয়ে কখনো প্রশ্ন তোলেননি! মনে রাখবেন আপনি যখন সিনেমা বানিয়ে সেন্সর বোর্ডে যাবেন, এই সিন্ডিকেট কিন্তু একই অযুহাতে আপনাকেও আটকাবে!

আবারো স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- এফডিসির সাথে ‘হরিবোল’ সিনেমার কোনোভাবেই কোনো যোগসূত্র নাই। অতএব এফডিসি থেকে এনওসি নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আর সেন্সর আইনেও এটি নাই। এটাকে এই চার সিন্ডিকেট একটি প্রথা হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। যা বাস্তবতা বিবর্জিত! 

এটা নিয়ে আপনিও কথা বলুন। আপনি কী বাংলাদেশে সিনেমা বানাতে চান? তাহলে এই সিন্ডিকেট ভাঙুন। এই সিন্ডিকেট নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলুন। নইলে বাংলাদেশের সিনেমা সেই তিমিরেই রয়ে যাবে!

আনিসুজ্জামান নিবেদিত ‘হরিবোল’ সিনেমা প্রযোজনা করেছে বলেশ্বর ফিল্মস। পুরো চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন অংশুমান। এই চলচ্চিত্রের গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত বাউলশিল্পী শফি মন্ডল ও বাউল নলীনি মণ্ডল এবং ভারতের সাত্যকি ব্যানার্জি, অংশুমান, অর্পিতা, অনিমেষ, অরুন্ধতি ও সিনজিনী। গানগুলোর গীতিকার ও সুরকার হলেন লালন শাহ, ভবা পাগলা ও অংশুমান। 

সিনেমাটিতে একটি সংখ্যালঘু মতুয়া পরিবারের চিত্র দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি সিনেমায় মুক্তিযুদ্ধের সময়কার একজন বীরাঙ্গনার গল্পও প্যারালালি বলা হয় বলে জানান নির্মাতা রেজা ঘটক।

লেখক: চলচ্চিত্র নির্মাতা

নিউজজি/রুআ

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন