বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ , ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার
  >
ফেসবুক কর্ণার

‘ক্রাউড দেখলেই মনে হয় আমি বেঁচে আছি’

নিউজজি ডেস্ক ১৬ আগস্ট , ২০২১, ১৩:৪৯:৫১

3K
  • আইয়ুব বাচ্চু ও মঞ্জু আহমেদ। ছবি: নিউজজি

আইয়ুব বাচ্চু দেশীয় ব্যান্ড সংগীতের অগ্রপথিক। ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর বাংলা রক মিউজিকের আঙিনা ছেড়ে চিরতরে চলে যান না ফেরার দেশ। বেঁচে থাকলে সোমবার তিনি পা দিতেন ৬০ বছরে। বিশেষ এই দিনে ভক্ত-অনুরাগীরা তাকে স্মরণ করছেন শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়। ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। 

এই কিংবদন্তিকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাংবাদিক ও উপস্থাপক মনজু আহমেদ। তার স্ট্যাটাসটি নিউজজি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

আইয়ুব বাচ্চু বস আমার দিকে মুচকি হেসে তাকান হঠাৎ। এরপর বলেন, ‘তোর কী মনে হয়? আমি কি শুধু টাকার জন্য শো করি?’ তিনি গাড়ি চালাচ্ছেন। দুপুরের রোদ বাইরে। যাচ্ছি আমরা মগবাজারে তার স্টুডিও-অফিস এবি কিচেনে। একটু আগেই রাপা প্লাজার সামনে থেকে পিক করেছেন আমাকে। গাড়ির মিউজিক প্লেয়ারে বাজছে ‘উইঙ্গার’-এর ‘এভার ওয়ান্ডার’ গানটি। গতকালই পেন ড্রাইভে অনেকগুলো গান দিয়েছি। সেগুলোই বাজছে একের পর এক। এই গানটি আমি বারবার শুনতে বলেছিলাম। কাল থেকেই নাকি শুনছেন গানটি। বললেন, ‘আসলেই গানটা অসাধারণ! হোয়াট আ মেলোডি!’

সকালের শাওয়ার নেওয়া লুকে বসের চোখে কালো সানগ্লাস। চোখ দেখতে পাই না। তাই বুঝতে পারি না কোন আবেগ খেলা করছে তার চোখে। প্রতিদিনই নতুন নতুন প্ল্যান ঘুরছে তার মাথায়। আমাকে পেয়েই সেই আইডিয়াগুলো শেয়ার করতে থাকেন। ‘নীরবে’ মিউজিক ভিডিও হয়ে গেছে। এখন ব্যান্ডের আরো ৫টি গানের মিউজিক ভিডিও প্ল্যান চলছে। 

‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘হকার’, ‘সুখী ছেলে’, ‘সেই তুমি’, চাঁদ মামা’। প্রতিটি গানের গল্প শেয়ার করছেন আমার সঙ্গে। একটা ডকুমেন্টারির কাজ শুরু হলো। বাকিটা শুটিং করার জন্য আজ নেপাল, কাল প্যালেস, পরশু সাইরু-বিভিন্ন লোকেশনের কথা ভাবছেন। কিন্তু যখনই কোনো শো চলে আসে, তখনই সব ক্যান্সেল! এ রকম এতবার হয়েছে যে, আমি ঠোঁটে হাসি রেখে কিন্তু বেশ শক্ত কণ্ঠেই জিজ্ঞেস করি, ‘বস এত টাকা দিয়ে কী করবেন?’

এরপরই আমার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে বলেন, ‘বিয়ে কর, বুঝবি!’ তারপর একটু কণ্ঠটা ভারি করেই বলেন প্রথম লেখা লাইনটা-‘তোর কী মনে হয়? আমি কি শুধু টাকার জন্য শো করি?’ উত্তরে কিছু না বলে শুধু গানের ভলিউমটা একটু কমিয়ে দিই আমি। এরপর বস বলেন, ‘কনসার্টগুলো করি আসলে টাকা না, আমার জন্য। আমাকে একটু স্বার্থপর মনে হতে পারে তোর। বাট দ্যাটস মাই অক্সিজেন। 

গিটার নিয়ে স্টেজে উঠে সামনে দাঁড়ানো হাজারো ক্রাউড দেখলেই মনে হয় আমি বেঁচে আছি। গিটার বাজানোর মতো এত আনন্দ আমি আর কিছুতেই পাই না। এই কথাটা তোকে আমি এর আগেও বহুবার, বহু ইন্টারভিউতে বা এমনিতেই বলেছি, বলিনি? সবাইকেই বলেছি। আমার ফেসবুক লাইভে গিটার বাজানো ভিডিওগুলোতেও এ কথা বলেছি, লিখেছি!’

আমি বলি, ‘সেটাতো জানি। কিন্তু আপনার এখন মিউজিক ভিডিওগুলোও করা দরকার। এখন তো নিজের জন্য কিছু করা খুবই জরুরি! ‘নীরবে’-এর পর বললেন প্রতিমাসে একটা করে মিউজিক ভিডিও উপহার দেবেন। সবাই তো সেই আশায় বসে আছে! তিনি বলেন, ‘মিউজিক ভিডিও করতে টাকা লাগে। সেই টাকাটাও তো শো থেকেই আসবে নাকি? স্পন্সর তো দেবে না কেউ। দিলেও কপিরাইট দিতে হবে ওদের। সো সব নিজেরাই করবো।’

কিছুদিন আগেই আমরা কলকাতা ঘুরে এলাম। এ বছরের (২০১৮) জানুয়ারির ৭ থেকে ১১। তার আগে ডিসেম্বরের ২৬/২৭ আমি ছিলাম কলকাতায় তাঁর সঙ্গে। এলআরবি’র আরেকটি কনসার্টে। সেই কনসার্ট ট্যুর নিয়ে ‘আইয়ুব বাচ্চু অ্যান্ড এলআরবি কনসার্ট ট্যুর ডকুমেন্টারি’ বানিয়েছি। সেটা দেখেই বস আরো মুগ্ধ। 

তারপরই বলেছিলেন, ‘ওয়েল ডান মাই বয়!’ ‘গ্রেট জব ডান’ লিখে শেয়ারও দিলেন তার ফেসবুক ওয়ালে। তারপর বললেন, ‘আই হ্যাভ আ ডিফরেন্ট প্ল্যান অন মাই ওন বায়ো। উই ডোন্ট নিড এনিওয়ান উইথ আস। আই মাইট টেক ইউ আউট অব দ্য কান্ট্রি। আই ওয়ান্ট টু ডু ইট ইন নেপাল। আই উইল গেট ইউ মাই ফ্রেশ মিউজিক!’

আর আজ যেতে যেতে বললেন অন্য আরেকটি প্ল্যানের কথা। শুনে, ‘আমিতো জানিই বস আপনি একের পর এক প্ল্যান করবেন’-ভাব নিয়ে তার দিকে হালকা হেসে তাকাই। আমাদের গাড়ি তখন ফার্মগেট। সিগন্যাল ছাড়তেই বস বললেন, ‘শোন কলকাতার ডকুমেন্টারিটা ভালো বানিয়েছিস। ও রকম তো করবোই বাকিটা। আর কিছু করবো ধর তোর ক্যামেরা আমাকে ফলো করবে আর আমি বলতে থাকবো। চিটাগাংয়ে আমার যেখানে বেড়ে ওঠা, গান গাওয়া, ঘুরাঘুরি, সেসব জায়গাগুলোতে আমি তোকে নিয়ে যাবো। এনায়েত বাজারের যেখানে তোকে নিয়ে গেলাম, সেখানকার আরো নতুন কিছু ফুটেজ নিবি। অটোবায়োগ্রাফি লেখার পয়েন্টগুলাও ফাইনাল করে ফেলতে হবে। কিন্তু পরশু আমার শো আছে চিটাগাংয়ে। পরদিন এবি লাউঞ্জ যেটা হয়েছে ওখানে, সেখানে যেতে হবে। এরপর সোমবার তুই কিচেনে চলে আয় আমরা বসবো।’ সেই বসাটা আর হয়নি আমাদের।

সোনারগাঁ হোটেল পেরিয়ে আমাদের গাড়ি তখন শেরাটনের রাস্তায়। পথে যেতে যেতে প্রায় সব ফকিরকেই বস ১০০ টাকার নতুন নোটগুলো দিতেন। তার ড্যাশবোর্ডে অনেকগুলো ১০০ টাকার নোট রাখা থাকতো প্রতিদিন। কিচেনে ঢুকতে ঢুকতে ১টা বেজে গেল। রুমে ঢুকেই বললেন, ‘আরো নতুন কিছু মেটাল ব্যান্ডের গান দে আমার পেন ড্রাইভে।’ আমি পিসি খুলে বসে পড়ি। বস বসেন গিটার নিয়ে। আড্ডা চলতে থাকে। গান নামাতে থাকি আমি। গিটারে বসের আঙুল সুর তুলতে থাকে...শুভ জন্মদিন আইয়ুব বাচ্চু বস।

নিউজজি/রুআ

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন