শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ , ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার
  >
বিশেষ কলাম

হলুদ সাংবাদিকতার আন্তর্জাতিক বাতিঘর আল জাজিরা!

নিউজজি ডেস্ক ২ ফেব্রুয়ারি , ২০২১, ২৩:৪৬:২০

3K
  • হলুদ সাংবাদিকতার আন্তর্জাতিক বাতিঘর আল জাজিরা!

বাংলাদেশ সম্পর্কে কাতারভিত্তিক মিডিয়া আল জাজিরা নিউজ চ্যানেলে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ ঘটনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আজ মঙ্গলবার বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আল জাজিরা নিউজ চ্যানেলের প্রচারিত প্রতিবেদনটি মিথ্যা ও মানহানিকর। এটি বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভ্রান্তিকর সিরিজ, যা উগ্রবাদী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কুখ্যাত ব্যক্তিদের যোগসাজশে রাজনৈতিক মদতপুষ্ট অপপ্রচার বলে স্পষ্ট। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রগতিশীল এবং ধর্মনিরপেক্ষ নীতির বিরোধিতা করছে চ্যানেলটি।’

উদ্দেশ্যমূলক, ভুয়া, মিথ্যা, সন্ত্রাসী সংগঠনের মদদ ও উস্কানিমূলক নানা ধরনের হলুদ সাংবাদিকতার চর্চার অভিযোগ আল জাজিরার বিরুদ্ধে বহু আগে থেকেই রয়েছে। সারাবিশ্বে সমালোচিতও বটে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন দেশে এই চ্যানেলটি বন্ধের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

এটি সর্বপ্রথম আলোচনায় আসে ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার ও আল কায়েদা সম্পর্কিত খবর প্রচারের মাধ্যমে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশ আল জাজিরার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগও তুলেছে। 

২০০৭ সালের ৭ জুলাই লন্ডনে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা একমাত্র আল-জাজিরায় প্রচারিত হয়েছিল। এই চ্যানেলটি উগ্রবাদী মতাদর্শে পরিচালিত ও সেই রাজনৈতিক মতাদর্শের মুখপত্র। যুক্তরাষ্ট্র আল-জাজিরার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে এভাবে, এই মিডিয়া নারীর ক্ষমতায়নের বিরোধী, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক, ধর্মীয় উস্কানি ও হলুদ সাংবাদিকতার চর্চা করে।

ঘটনা পর্যালোচনা করলে আরো মনে পড়ে- ভারত-বিরোধী সংবাদ ও তথ্য উপস্থাপনের অভিযোগে ২০১৫ সালে দেশটিতে বন্ধ করে দেওয়া হয় আল জাজিরার সম্প্রচার। 

১৯৯৬ সালে সম্প্রচার শুরুর পর থেকেই নানা সময় বিতর্কিত ও ভিত্তিহীন খবর প্রকাশের অভিযোগ ওঠে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আল জাজিরার বিরুদ্ধে। তখনো আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার ও আরব দেশগুলোতে সরকার পরিবর্তনের জন্য চ্যানেলটিকে ব্যবহার করতো কাতার সরকার।

বিশেষ করে আরব বসন্তের সময় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে বিক্ষোভকারীদের উস্কে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আল জাজিরার বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে মিশরের উগ্র রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার খবরও প্রকাশ হয়েছে বিভিন্ন সময়।

এর আগে, ভুয়া সংবাদ প্রচারের অভিযোগে মিশরে আটক হন টেলিভিশন নেটওয়ার্কটির বেশ কয়েকজন সংবাদিক। 

ইরাক যুদ্ধের সময় বিতর্কিত সংবাদ প্রচারের অভিযোগে দেশটি থেকে চ্যানেলটির সাংবাদিকদের বহিষ্কার ও সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়। জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়দাকে সমর্থনের অভিযোগে ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে স্পেনে আটক হন চ্যানেলটির এক সাংবাদিক।

প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সাংবাদিকদের হলুদ সাংবাদিকতায় বাধ্য করা, জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ এবং অনৈতিকভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা ইত্যাদি অভিযোগ এনে আল জাজিরার ব্যুরো প্রধান মোহাম্মদ ফাহমিসহ মিশরে ২২ জন সাংবাদিক পদত্যাগ করেন। একই অভিযোগ এনে এবং জাজিরাকে অপপ্রচারের মেশিন হিসেবে অভিহিত করে পদত্যাগ করেন লিবিয়া প্রতিনিধি আলী হাশেম, বার্লিন প্রতিনিধি আখতাম সুলেমান।

তেমনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ এবারই প্রথম নয়। ২০০৯ সালের পর শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশের নানা ঘটনা নিয়ে অপপ্রচার করে চলেছে আল জাজিরা। যেমন, ২০১০ সালের দিকে ঢাকার উপকণ্ঠের এক ইটভাটা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বন্দি শ্রমিকদের উদ্ধারের একটি ঘটনার ভিডিও সংবাদ ঘটনা ঘটে যাওয়ার ২ মাস পরও হট আইটেম হিসেবে প্রচার করছিল চ্যানেলটি। পরে বাংলাদেশি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের কান্ট্রি এডিটর আল জাজিরার তৎকালীন রিপোর্টার নিকোলাস হকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং এত পুরনো নিউজ লেটেস্ট এবং তাজা খবর হিসেবে কেন প্রচার করা হচ্ছে তা জানতে চান। এর জবাবে ওই রিপোর্টার অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন। এ থেকে বোঝা যায় যে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে হেয় করতে-ই স্বার্থান্বেষী মহলের তপ্লিবাহক হয়ে তারা সংবাদ নিয়ে এমন অসৎ তৎপরতা চালাচ্ছিল। এরপর বিষয়টির সবিস্তার বর্ণনা করে পোর্টালটি সংবাদ প্রকাশের কিছুক্ষণের মধ্যে আল জাজিরা বিতর্কিত ওই প্রতিবেদনটি নামিয়ে ফেলে তাদের সাইট থেকে।   

তাদের সংবাদ পরিবেশনায় বর্তমান সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক খবর সবসময় বিশেষ স্থান জুড়ে বসেছে। একই বছর তিনজন ব্যক্তির গুম হওয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের একজন উর্দ্ধতন নিরাপত্তা ও সামরিক কর্মকর্তার যোগসাজশ নিয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এই ওয়েবসাইটটি। আসলে এই মিডিয়ার বিরুদ্ধে ক্রমাগত সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষকতা ও মদদ দানের অভিযোগ রয়েছে আলজাজিরার বিরুদ্ধে।

আল জাজিরাকে জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র হিসেবে কাজ করতে দেখা গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিল। এমনকি যুদ্ধাপরাধী মো. কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায়ের পর ‘বাংলাদেশ পার্টি চিফ টু হ্যাং ফর ওয়ার ক্রাইমস’ শিরোনামে এক সম্প্রচারে ৩০ লাখ মানুষের শহীদ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যঙ্গ করে বলা হয় ইতিহাসবিদদের হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে ৩ থেকে ৫ লাখ মানুষ মারা গেছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম হিসেবে এমন হলুদ সাংবাদিকতা চর্চার প্রতিষ্ঠানকে ঐক্যভাবে বয়কট করা দরকার। সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মাধ্যমে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পদক্ষেপ জরুরি।

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন