বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ , ২১ জুমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ফিচার
  >
বিশেষ কলাম

নোবেল পেতে মরিয়া ট্রাম্প

মাঈনুদ্দীন দুলাল ৫ অক্টোবর , ২০২৫, ১৭:৫৫:২৭

367
  • নোবেল পেতে মরিয়া ট্রাম্প

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সবদিক মিলিয়ে একজন সফল মানুষ। তিনি ধনী রাষ্ট্র আমেরিকার একজন ধনকুবের, দু'দুবার সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রটির সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি।তার জীবনে বৈষয়িক অপ্রাপ্তি বলে কিছু নেই। বিল গেইটস,বেজার্স,ইলন মাস্কসহ আরো অনেক শীর্ষ ধনাঢ্য ব্যক্তি আমেরিকায় আছেন। কিন্তু তারা ট্রাম্পের মত ক্ষমতা উপভোগ করেছেননা।এত কিছুর পরও ট্রাম্পের অতৃপ্তি আছে। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানিত পুরষ্কার "নোবেল" পেতে আগ্রহী এবং মরিয়া।

আমেরিকার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ তাদের অতি সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সরাসরি বলছে, ট্রাম্প নোবেল পেতে মরিয়া। ব্লুমবার্গ বলছে - "মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেতে চান– এ বিষয়টি তাঁর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে প্রমাণিত হয়েছে। সর্বশেষ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে দাবি করেন, ‘তিনি ছয়টি যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ জন্য তাঁকে সবাই নোবেল পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করে।’ এমনকি নোবেল দিতে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে নানা চাপও রয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। নোবেল পুরস্কার পেতে ট্রাম্পের এই আগ্রাসী আচরণ এখন সবার জানা।"

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, "আবারও নোবেল কমিটির এই স্বাধীন মনোভাবকে চ্যালেঞ্জ জানানো হচ্ছে। এবার ট্রাম্প কখনও প্রকাশ্যে, কখনও অপ্রকাশ্যে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে লবিং করেছেন। এই মাসে নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণার আগ দিয়ে তিনি আরও আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।"

সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ দাবি তোলেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, কঙ্গো-রুয়ান্ডা সশস্ত্র সংঘাত, থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর প্রচেষ্টার জন্য ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া উচিত। নোবেল কমিটিকে বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে।

অনেকেই সমালোচনা করছেন এবং এই পুরষ্কারকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে বলছেন, নোবেল শান্তি পুরস্কার একটা রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। আমেরিকা তথা পশ্চিমা বিশ্বের আনুগত্য রক্ষা করে চলে শুধু এমন বিখ্যাত মানুষরাই এখন নোবেল শান্তি পুরস্কার পায়। একথা অনেকেই বলে থাকেন যে, নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্ব বিভিন্ন দেশে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে থাকে। কথা পুরোপুরি হয়ত সত্য না, কিন্তু অনেকাংশে যে সত্য তার প্রমাণ আমরা বিজয়ীদের কর্ম এবং ব্যক্তিজীবন পর্যালোচনা করলে বুঝতে পারি।

এইসব সমালোচকরা কিছু উদাহরণ দিয়ে বলছেন,

সেসকল মানবাধিকারকর্মীই বিগত কয়েক বছর ধরে নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন যাদের সংগ্রাম এবং কর্ম পশ্চিমা নীতি-আদর্শ বিরোধিতাকারী সরকারের বিরুদ্ধে যায়। মিয়ানমারের অং সান সুকি, ইরানের শিরিন এবাদি, চীনের লিউ জিয়াওবের নোবেল বিজয় সেই সাক্ষই দেয়। যে সকল রাষ্ট্র প্রধান নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন তারাও পুরোপুরি পশ্চিমাদের অনুগত থেকে কাজ করেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট কিম দায়ে জং এবং ফিনল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মারটি আহতিসাআরির নাম এক্ষেত্রে উল্লেখ্য।

রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে নোবেল পাওয়া উল্লেখযোগ্য কয়েকজন আছেন যাদের নিয়ে খুব বেশি প্রশ্ন ওঠেনি। যেমন- আনোয়ার সাদত,নেলসন ম্যান্ডেলা,ইয়াসির আরাফাত, জিমি কর্টার প্রমুখ। এরা সকলেই বড় সংঘাত থামাতে বা এড়াতে অথবা সংহতি রক্ষায় নুন্যতম ভুমিকা রেখেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ সমালোচনা করছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নোবেল পেতে আকুন্ঠ সমর্থন না দেয়ায় ভারতের ওপর রুষ্ট হয়ে শুল্ক বোঝা চাপিয়েছেন ট্রাম্প। পুতিনের ক্ষেত্রেও নাকি তাই। ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তি আলোচনা নিয়ে লুকোচুরি খেলছেন। চীনতো সমর্থন করবেইনা।

কেউ কেউ বলেন,নোবেল শান্তি পুরষ্কার রাজনীতি ও নানান কৌশলে প্রভাবিত। পুরষ্কারের শিকে ট্রাম্পের ভাগ্যে ছিঁড়তেও পারে। কারণ কোন কিছু পেতে তিনি খুব মারকুটে ও মরিয়া স্বভাবের।

লেখক: সাংবাদিক

বি.দ্র.- (এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। নিউজজি২৪ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন