বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ , ২১ জুমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ফিচার
  >
বিশেষ কলাম

সড়কে মৃত্যুর দীর্ঘ মিছিল, কে থামাবে?

মাঈনুদ্দীন দুলাল ৪ অক্টোবর , ২০২৫, ১৮:২৬:৩৮

441
  • সড়কে মৃত্যুর দীর্ঘ মিছিল, কে থামাবে?

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় তার এক উপন্যাসে একটি মৃত্যুর প্রতিক্রিয়া ও বেদনা প্রকাশ করতে গিয়ে লিখেছেন, " মানুষ একা মরেনা, সে তার স্বজন ও আশপাশের আরো কাউকে কাউকে মেরে যায়।"

কথাটি এজন্যে ভাবনায় আসল যে, আজ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিবেদন পড়ে।  তারা বলছে, গেল সেপ্টেম্বর মাসেই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৪১৭ জন এবং আহত হয়েছেন ৬৮২ জন। প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে ১৫১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৩ জন নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ৩৪.২৯ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ছিল ৩৩.৮৫ শতাংশ। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় ১১২ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২৬.৮৫ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫৬ জন ১৩.৪২ শতাংশ।

দেশে এখন পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে সদ্যসমাপ্ত ২০২৪ সালে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দুর্ঘটনা প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় ২০২৪ সালে দেশে প্রাণহানি হয়েছে ৫ হাজার ৩৮০ জনের। এর আগে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল ২০২১ সালে। সেবার সড়কে মৃত্যু হয়েছিল ৫ হাজার ৮৪ জনের।

দেশে গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের বিষয়ে দুটি বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকেও ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ২৯৪ জনের। এর আগে যাত্রী কল্যাণ সমিতি নামের আরেকটি সংগঠন বলছে ৮ হাজার ৫৪৩ জন মারা গেছেন।

যাত্রী কল্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক নিউজ জি কে জানিয়েছেন তারা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, তাদের সদস্যদের পাঠানো প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে তথ্য নিশ্চিত করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালে রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে সংঘটিত হয়েছিল তুমুল ছাত্র আন্দোলন। এর পরই দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও সড়ক নিরাপদ করার লক্ষ্যে তৎকালীন সরকার আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা করে। যদিও পরবর্তী সময়ে আইন প্রয়োগে দুর্বলতা আর গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পারায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি।

সড়ক দুর্ঘটনা বাড়লেও দায়িত্ব গ্রহণের পর বিগত পাঁচ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার সন্তোষজনক কোনো কাজ বাস্তবায়ন করতে পারেনি বলে স্বীকার করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এ প্রসঙ্গে তিনি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘সড়ক নিরাপত্তা ইস্যুটিকে আমরা খুব সিরিয়াসলি নিয়েছি। দুর্ঘটনাকে আমাদের ফেইলিউর হিসেবে মনে করি। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক কোনো উদ্যোগ নিতে পারিনি। বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি। দুর্ঘটনা কমিয়ে এনে সড়ক নিরাপদ করার কাজগুলো আমরা বেগবান করব।’

নিজেদের পরিকল্পনা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘‌সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কিছুদিন আগে আমরা একটা মিটিং করেছি। সেখানে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিআরটিএকে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডশন এক প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ১১টি প্রধান কারণ চিহ্নিত করেছে

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন এবং খারাপ সড়ক। বেপরোয়া গতি এবং চালকদের অদক্ষতা। চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা অনির্দিষ্ট থাকা। মহাসড়কে স্বল্পগতির যান চলাচল। ট্রাফিক আইন অমান্য ও দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। 

দুর্ঘটনা রোধে ফাউন্ডেশন বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। সেগুলো হলো— দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ, চালকদের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা ও বেতন নিশ্চিত করা, মহাসড়কে সার্ভিস রোড তৈরি, রোড ডিভাইডার নির্মাণ ও গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা।

সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে যাচ্ছে স্বজন। প্রিয়জন হারানো বেদনার ভার বহনের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে পরিবারগুলোর অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাও। ভাবা যায় কি দুঃসহ অবস্থায় জীবন কাটায় এইসব মানুষেরা!

লেখক: সাংবাদিক

বি.দ্র.- (এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। নিউজজি২৪ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন