বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ , ২১ জুমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ফিচার
  >
বিশেষ কলাম

শারদীয় শুভেচ্ছা : পুজো এসে গেল

মাঈনুদ্দীন দুলাল ২৮ সেপ্টেম্বর , ২০২৫, ১৭:০৬:৫১

474
  • শারদীয় শুভেচ্ছা : পুজো এসে গেল

বাঙালি সনাতনী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। এটা শুধু একটি ধর্মাবলম্বীদের নয় সারাদেশের সকল ধর্মের মানুষ এই উৎসব উপভোগ করেন। অন্য ধর্মের মানুষ পুজোর আচার পালন না করলেও পাড়া-মহল্লায় প্রতিবেশী, বন্ধু বান্ধবদের সাথে মন্ডপে মন্ডপে ঘোরা,আপ্যায়ন নিয়ে থাকেন। সেই অর্থে এই উৎসবের সার্বজনীনতা আছে। যেমন আছে ঈদ,বড়দিন,বৌদ্ধ পূর্ণিমা এবং পহেলা বৈশাখের।

পুজার সময় কোথাও কোথাও প্রতিমা ভাংচুর, হামলার মত কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাও ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এবারও অল্প কিছু অঘটন হয়েছে। তবে এখনো তা নিয়ন্ত্রনে আছে।  স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেছেন, "পূজা নিয়ে শংকা নেই।"  দুর্গাপূজা ভালোভাবে সম্পন্ন হবে। এ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই।

তিনি জানান, সারাদেশে দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় সশস্ত্র বাহিনীর ১ লাখ সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া, পুলিশের ৭০ হাজার সদস্য ও ৪৩০ প্লাটুন মাঠে থাকবে। এর সাথে বিজিবি ও অন্যান্য বাহিনীও থাকবে। পাশাপাশি মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় থেকে অনেক স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ সময় পূজাকে ঘিরে গুজব ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্টের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা তার বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে চাই। নির্বিঘ্ন হোক উৎসব।

এই লেখার সাথে সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহের একটি লেখা সংযুক্ত করার লোভ সামলানো গেল না। পূজার উচ্ছ্বাস খুঁজে পাওয়া যায় তার এই লেখাটিতে।

"পুজো পুজো পুজো। এসে গেল পুজো ।"

জানি, লাউড-স্পীকারের শব্দে প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে, লোকের ভিড়ে মাথা ধরবে। তবু, কেন জানি পুজো এলে ভাল লাগে। বাঙালি বলে বোধহয় । মনে-প্রাণে পুরোপুরি বাঙালি বলে বোধ হয়।

শম্পু সরকার কি রুশি বিয়ান্দকারের তো এমন মনে হয় না। ওরা সাহেব। পুজোর ছুটিকেও ওরা অন্য যে কোনও ছুটি বলে মনে করে। সকালে উঠে ওরা যথারীতি চান করবে, ব্রেকফাস্ট করবে, তারপর ড্রেইনপাইপ গলিয়ে কারও বাড়ি গিয়ে তাসের আড্ডায় বসবে, নয়তো ক্লাবে গিয়ে বীয়ার খাবে। চঞ্চল চন্দ হয়তো বারান্দায় পাজামা পরে বসে, নিউ স্টেটসম্যানের ফিনফিনে পাতা খুলে নিজেকে যথার্থ কালচারড্ মনে করবে। যেন পুজো তো কী? যেন পুজো কিছুই নয় ।

আমি তা ভাবতে পারিনা। মহালয়ার ভোরে, আধো-ঘুমে-আধো-জাগরণে বালিশটা আঁকড়ে ধরে শুয়ে শুয়ে যখন মহিষাসুর বধের বর্ণনা শুনব রেডিওতে, যখন সেই শেষরাতে, সমস্ত পাড়া সমস্ত কলকাতা শহর, সমস্ত বাংলাদেশ গমগম্ করবে এক শুদ্ধ বিমুগ্ধ প্রভাতী বন্দনায়, তখন যে কী ভাল লাগবে সে কী বলব । শুধু আমার কেন? খাঁটি বাঙালি মাত্রেরই লাগবে । পুজো আসছে । ভাল লাগবে না?

তারপর মহালয়ার ভোর হবে । শরতের নীল আকাশে রোদ্দুর ঝিলিক দেবে । সকালে হয়তো রেডিওতে কণিকা ব্যানার্জির গান থাকবে— শরৎ আলোর কমল বনে, বাহির হয়ে বিহার করে, যে ছিল মোর মনে মনে ...। শুনব, আর চুপ করে বসে কান পেতে শুনব; চোখ চেয়ে শরতের রোদ দেখব, নাক ভরে শিউলি ফুলের গন্ধ নেব ; আর ভাল-লাগায় মরে যাব ।

সেই পুজো এসে গেল । "

লেখক: সাংবাদিক
 
বি.দ্র.- (এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। নিউজজি২৪ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন