বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ , ২১ জুমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ফিচার
  >
বিশেষ কলাম

ভাষা, সংস্কৃতি ও পরিবেশের অধিকার: আদিবাসীদের মুক্তির পথ

শরীফ চৌহান ১৯ সেপ্টেম্বর , ২০২৫, ১৩:৪১:৫০

317
  • ভাষা, সংস্কৃতি ও পরিবেশের অধিকার: আদিবাসীদের মুক্তির পথ

বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠী শুধু একটি সাংস্কৃতিক বা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী নয়; তারা দেশের ইতিহাস, পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক বহুমুখিতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাহাড়, বন, সমতল ও নদীর অববাহিকায় তারা গড়ে তুলেছে এক অনন্য জীবনযাপন পদ্ধতি, যা কেবল নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করে না বরং তা দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ।

তবে আধুনিকতার ঢেউ, একভাষিক শিক্ষা, নগরায়ণ এবং বিশ্বায়নের প্রভাবে তাদের ঐতিহ্য ও প্রতিবেশ এখন  ঝুঁকির মুখে। এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন ওঠে—কীভাবে এই জনগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি ও পরিবেশকে টেকসইভাবে রক্ষা ও বিকাশ করা যায়? এই আলোচনায় প্রশ্ন আসে এটা কি শুধুমাত্র সংরক্ষণ, নাকি তাদের মৌলিক অধিকার ও জীবিকার সঙ্গে যুক্ত এক সামগ্রিক প্রক্রিয়া?

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তারা নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি, ভূমি ও জীবনধারা রক্ষায় সংগ্রাম করে যাচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় অবহেলা, নয়া উদারতাবাদী উন্নয়ন মডেল ও রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষণের কারণে তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে । বর্তমানেও তারা নিজেদের ঐতিহ্য ও পরিবেশ রক্ষা করার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। কারণ অধিকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া প্রকৃত সাম্য ও ন্যায়বিচার অসম্ভব।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় আটত্রিশটি স্বকীয় ভাষা বিদ্যমান, যার অধিকাংশই লিখিত রূপহীন এবং মৌখিকভাবে প্রজন্মান্তরে সংরক্ষিত। এই ভাষাগুলো স্ব স্ব জনগোষ্ঠীর  চিন্তা-চেতনা,  ও জীবনদর্শনের ভিত্তি। তবে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা, বাংলা ভাষার আধিপত্য এবং শহরকেন্দ্রিক কর্মসংস্থান তরুণ প্রজন্মকে রাষ্ট্রীয় ভাষা  ব্যবহারে আগ্রহী করে তুলেছে । তাতে তাদের নিজস্ব মাতৃভাষা চর্চায় অনাগ্রহী করে তুলছে। এতে করে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চায় অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে।এটা শুধু নিছক ভাষা বা শব্দের ক্ষয় নয়; এটি চিন্তার স্বাধীনতা, ইতিহাস ও সামাজিক বোধেরও সংকোচন।

তাই, ভাষাকে রক্ষার জন্য এটিকে শুধু ঐতিহ্যের অতীত হিসেবে না দেখে, স্বশাসন ও শিক্ষার মাধ্যমে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটাতে হবে। এতে মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করাই একমাত্র যথার্থ সমাধান। এতে ভাষার সুরক্ষা যেমন হবে, তেমনি সাংস্কৃতিক আত্মবিশ্বাস ও মুক্ত চিন্তার বিকাশও সম্ভব হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তি, অনলাইন অভিধান, ভয়েস রেকর্ডিং ও সাহিত্যচর্চা গুরুত্বপূর্ণ, তবে সবকিছুর মূল চালিকাশক্তি হলো স্থানীয় নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ।

সংস্কৃতি তাদের জীবনের পরিচয় এবং জীবিকার উৎস। নৃত্য, গান, উৎসব, হস্তশিল্প ও কৃষ্টি-কালচার শুধু ঐতিহ্যের নিদর্শন নয়, এগুলো অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দারও। আশার বিষয় হলো, চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্টসের তরুণ সমাজ ছবি, গান ও গল্পসংগ্রহের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ধারাকে নবজীবন দিচ্ছে।

তবে সংস্কৃতির সার্থকতা তখনই সম্ভব, যখন তা সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার—বিশেষ করে ভূমি, শিক্ষা ও ভাষার অধিকারের সঙ্গে একাত্ম হয়। সংস্কৃতিকে পর্যটনের চশমায় বা বাইরের দৃষ্টিতে গড়ে তোলা হলে মুক্ত চিন্তার বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। সংস্কৃতিকে ‘বাজারিকরণ’ নয়, মুক্ত ও বহুমাত্রিক বিকাশের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

এই জনগোষ্ঠীর জীবন বন, পাহাড় ও জলাশয়ের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। বন ও কৃষির মাধ্যমে তারা শত শত বছর ধরে টেকসই প্রক্রিয়ায় জীবনধারা রক্ষা করেছে। তারা বনায়ন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও ঔষধি গাছ চাষের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখেছে। তবে আধুনিক বননীতি ও ভূমি দখলের ফলে ঐতিহ্যগত অধিকার সংকুচিত হচ্ছে, বনাঞ্চল হ্রাস পাচ্ছে এবং পরিবেশগত জ্ঞান ও জীবনযাত্রাকে অবহেলা করা হচ্ছে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও অধিকার আলাদা করে দেখা যায় না; পরিবেশ রক্ষার মধ্যেই জীবন-যাত্রার স্বীকৃতি নিহিত।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও তারা বহু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তাদের শিক্ষার হার, স্বাস্থ্যসেবা ও আয়-রোজগারের সুযোগ দেশের গড়ের থেকে অনেক পিছিয়ে। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই অবস্থা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত উন্নয়ন আটকে রাখে না, সামগ্রিকভাবে সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্যের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

বিশ্বজুড়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ব্যাপক। জাতিসংঘের “আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার সম্পর্কিত ঘোষণা” ও ইউনেস্কোর “আদিবাসী ভাষার দশক (২০২২–২০৩২)” এদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ভূমি অধিকারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ উদ্যোগ থেকে শিক্ষা নিয়ে সুসংহত নীতিমালা তৈরি জরুরি।

যে রাষ্ট্র নিজ দেশের জাতিগত, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করে না, সে প্রকৃত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। বৈষম্য, অধিকার ও সংস্কৃতির অবজ্ঞা রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য গভীর আত্মঘাতি। সাম্যের অর্থ শুধু সমান সুযোগ দেওয়া নয়; এটি নিজস্ব পরিচয়, ভাষা, জীবনধারা ও পরিবেশ রক্ষার অধিকারকে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা দেওয়া।

সুতরাং, মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা, ভূমি ও বনভূমি অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উদ্যোগে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং পরিবেশ রক্ষায় অংশগ্রহণ জোরদার করাই সত্যিকার ন্যায়বিচার ও সাম্যের পথ।

আহ্বান

ভাষা, সংস্কৃতি ও পরিবেশের অধিকার নিশ্চিত করা এখনই অত্যাবশ্যক। রাষ্ট্র ও সমাজকে ন্যায়সঙ্গত মনোভাব ও সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে, ভূমি ও বনভূমি অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে, এবং পরিবেশ রক্ষায় অংশগ্রহণ জোরদার করতে হবে।

বিভিন্ন জাতিসত্তা একসাথে চললে এমন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে, যেখানে সব জাতি ও জনগোষ্ঠী সমান মর্যাদা ও অধিকার পাবে; ভাষা, সংস্কৃতি ও পরিবেশের সম্মান ও সুরক্ষা নিশ্চিত হবে; এবং প্রকৃত ন্যায়বিচার ও সাম্যের ভিত্তিতে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

প্রত্যেকের দায়বদ্ধতা এই পথকে শক্তিশালী করা এবং ঐক্যবদ্ধ মুক্তির জন্য ভাষা, সংস্কৃতি ও পরিবেশের অধিকার: আদিবাসীদের মুক্তির পথ

বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠী শুধু একটি সাংস্কৃতিক বা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী নয়; তারা দেশের ইতিহাস, পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক বহুমুখিতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাহাড়, বন ও নদীর মাঝেই তারা গড়ে তুলেছে এক অনন্য জীবনযাপন পদ্ধতি, যা কেবল নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করে না, দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। তবে আধুনিকতার ঢেউ, একভাষিক শিক্ষা, নগরায়ণ এবং বিশ্বায়নের প্রভাবে তাদের ঐতিহ্য ও পরিবেশ ঝুঁকির মুখে। এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন ওঠে—কীভাবে এই জনগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি ও পরিবেশকে টেকসইভাবে রক্ষা ও বিকাশ করা যায়? এটি কি শুধুমাত্র সংরক্ষণ, নাকি তাদের মৌলিক অধিকার ও জীবিকার সঙ্গে যুক্ত এক সামগ্রিক প্রক্রিয়া?

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংগ্রাম চালিয়ে এসেছে—নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি, ভূমি ও জীবনধারা রক্ষায়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় অবহেলা, রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষণ ও বর্ণবাদী মনোভাব তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করেছে। বর্তমানেও তারা নিজেদের ঐতিহ্য ও পরিবেশ রক্ষায় অংশগ্রহণের দাবিতে লড়াই করে যাচ্ছে। কারণ অধিকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া প্রকৃত সাম্য ও ন্যায়বিচার অসম্ভব।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় আটত্রিশটি স্বকীয় ভাষা বিদ্যমান, যার অধিকাংশই লিখিত রূপহীন এবং মৌখিকভাবে প্রজন্মান্তরে সংরক্ষিত। এই ভাষাগুলো চিন্তা-চেতনা, সমাজবদ্ধতা ও জীবনদর্শনের ভিত্তি। তবে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা, বাংলা ভাষার আধিপত্য এবং শহরকেন্দ্রিক কর্মসংস্থান তরুণ প্রজন্মকে মাতৃভাষা ব্যবহারে অনীহা দেখাচ্ছে। ভাষার এ অবক্ষয় নিছক শব্দের ক্ষয় নয়; এটি চিন্তার স্বাধীনতা, ইতিহাস ও সামাজিক বোধের সংকোচন।

ভাষাকে রক্ষার জন্য এটিকে শুধু ঐতিহ্যের অতীত হিসেবে না দেখে, স্বশাসন ও শিক্ষার মাধ্যমে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটাতে হবে। মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করাই একমাত্র যথার্থ সমাধান। এতে ভাষার সুরক্ষা যেমন হবে, তেমনি সাংস্কৃতিক আত্মবিশ্বাস ও মুক্ত চিন্তার বিকাশও সম্ভব হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তি, অনলাইন অভিধান, ভয়েস রেকর্ডিং ও সাহিত্যচর্চা গুরুত্বপূর্ণ, তবে সবকিছুর মূল চালিকাশক্তি হলো স্থানীয় নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ।

সংস্কৃতি তাদের অতীতের পরিচয় এবং জীবিকার উৎস। নৃত্য, গান, উৎসব, হস্তশিল্প ও কৃষ্টি-কালচার শুধু ঐতিহ্যের নিদর্শন নয়, এগুলো অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বারও। চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্টসের তরুণ সমাজ ছবি, গান ও গল্পসংগ্রহের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ধারাকে নবজীবন দিচ্ছে।

তবে সংস্কৃতির সার্থকতা তখনই সম্ভব, যখন তা সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার—বিশেষ করে ভূমি, শিক্ষা ও ভাষার অধিকার—সঙ্গে একাত্ম হয়। সংস্কৃতিকে পর্যটনের চশমায় বা বাইরের দৃষ্টিতে গড়ে তোলা হলে মুক্ত চিন্তার বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। সংস্কৃতিকে ‘বাজারিকরণ’ নয়, মুক্ত ও বহুমাত্রিক বিকাশের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

এই জনগোষ্ঠীর জীবন বন, পাহাড় ও জলাশয়ের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। বন ও কৃষির মাধ্যমে তারা শত শত বছর ধরে টেকসই প্রক্রিয়ায় জীবনধারা রক্ষা করেছে। তারা বনায়ন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও ঔষধি গাছ চাষের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখেছে। তবে আধুনিক বননীতি ও ভূমি দখলের ফলে ঐতিহ্যগত অধিকার সংকুচিত হচ্ছে, বনাঞ্চল হ্রাস পাচ্ছে এবং পরিবেশগত জ্ঞান ও জীবনযাত্রাকে অবহেলা করা হচ্ছে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও অধিকার আলাদা করে দেখা যায় না; পরিবেশ রক্ষার মধ্যেই জীবন-যাত্রার স্বীকৃতি নিহিত।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও তারা বহু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। শিক্ষার হার, স্বাস্থ্যসেবা ও আয়-রোজগারের সুযোগ দেশের গড়ের থেকে অনেক পিছিয়ে। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই অবস্থা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত উন্নয়ন আটকে রাখে না, সামগ্রিকভাবে সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্যের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

বিশ্বজুড়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ব্যাপক। জাতিসংঘের “আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার সম্পর্কিত ঘোষণা” ও ইউনেস্কোর “আদিবাসী ভাষার দশক (২০২২–২০৩২)” এদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ভূমি অধিকারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ উদ্যোগ থেকে শিক্ষা নিয়ে সুসংহত নীতিমালা তৈরি জরুরি।

যে রাষ্ট্র নিজ দেশের জাতিগত, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করে না, সে প্রকৃত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। বৈষম্য, অধিকার ও সংস্কৃতির অবজ্ঞা রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য গভীর আত্মহানি। সাম্যের অর্থ শুধু সমান সুযোগ দেওয়া নয়; এটি নিজস্ব পরিচয়, ভাষা, জীবনধারা ও পরিবেশ রক্ষার অধিকারকে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা দেওয়া।

সুতরাং, মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা, ভূমি ও বনভূমি অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উদ্যোগে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং পরিবেশ রক্ষায় অংশগ্রহণ জোরদার করাই সত্যিকার ন্যায়বিচার ও সাম্যের পথ।

আহ্বান

ভাষা, সংস্কৃতি ও পরিবেশের অধিকার নিশ্চিত করা এখনই অত্যাবশ্যক। রাষ্ট্র ও সমাজকে ন্যায়সঙ্গত মনোভাব ও সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। নিজস্ব ভাষায় শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে, ভূমি ও বনভূমি অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে, এবং পরিবেশ রক্ষায় অংশগ্রহণ জোরদার করতে হবে।

একসঙ্গে চললে এমন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে, যেখানে সব জাতি ও জনগোষ্ঠী সমান মর্যাদা ও অধিকার পাবে; ভাষা, সংস্কৃতি ও পরিবেশের সম্মান ও সুরক্ষা নিশ্চিত হবে; এবং প্রকৃত ন্যায়বিচার ও সাম্যের ভিত্তিতে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

তাই প্রত্যেকের দায় আছে এই পথকে শক্তিশালী করা এবং ঐক্যবদ্ধ মুক্তির জন্য কাজ করা।

লেখক: উন্নয়নকর্মী ও সমাজ পর্যবেক্ষক

বি.দ্র.- (এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। নিউজজি২৪ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন