বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ , ২১ জুমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ফিচার
  >
বিশেষ কলাম

ধর্মীয় উৎসবে নিরাপত্তা সাংবিধানিক নাগরিক অধিকার

মাঈনুদ্দীন দুলাল ১৫ সেপ্টেম্বর , ২০২৫, ১৮:১৮:৪৪

396
  • ধর্মীয় উৎসবে নিরাপত্তা সাংবিধানিক নাগরিক অধিকার

আসছে দেশের সানাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে এই উৎসবের সূচনা। তবে মূল উৎসব শুরু হবে ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী'র মাধ্যমে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এবং প্রতিমা ভাঙ্গার প্রবনতাও দেখা যাচ্ছে!

গত শনিবার রাতে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার স্বরুপদহ পাল পাড়ায় প্রতিমা ভাংচুর করেছে দূর্বৃত্তরা। তারা নজরদারি ক্যামেরাটিও নিয়ে গেছে। প্রতিবছরই দেশের নানা প্রান্তে প্রতিমা ভাংচুর বা মন্ডপে হামলার ঘটনা ঘটে। বিগত সরকারের আমলেও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়েছে।

আমরা বিভিন্ন সভা সমাবেশে বা সংবাদ মাধ্যমে সোচ্চার সংখ্যালঘুর নিরাপত্তার নামে। কিন্তু প্রশ্ন আমাদের সংবিধানে সংখ্যালঘু বলে কোন শব্দ আছে?  বা কোন জনগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ রাষ্ট্রে বসবাসকারীদের বলা হয়েছে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাগরিক। বলা হয়েছে নাগরিকদের নিরাপত্তা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ বিষয়ে একজন আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞে ড. জাহেদ ইকবালের মতামত এ রকম,

"দীর্ঘদিন ধরে সংবিধানের নানা বিষয় নিয়ে পড়ি-লিখি; একটা উচ্চতর ডিগ্রিও হয়েছে! কিন্তু কখনো সংখ্যালঘু শব্দের সঙ্গে পরিচয় হয়নি; উল্টো সংবিধানে সকল নাগরিক সমান বলা হয়েছে। পৃথিবীর অনেক সংবিধানেও এমন শব্দ দেখিনি। এর অর্থ হলো শব্দটা অসাংবিধানিক। তেমনটিই হওয়ার কথা। বাংলাদেশের সংবিধান রাষ্ট্রকে ধর্মনিরপেক্ষ ঘোষণা করেছে; যদিও ২-ক অনুচ্ছেদে একটা রাষ্ট্রধর্মের কথা আছে! রাষ্ট্রের ধর্ম বিষয়টিই গোলমেলে, সে তো ব্যক্তি নয়। একটা অসাংবিধানিক শব্দ কি করে নানাভাবে ব্যবহার হয় তা ভাবা উচিত। বাংলাদেশের সংবিধান সকল নাগরিকদের সমান মর্যাদা দিয়েছে; সুতরাং এখানে সকল নাগরিক সমান কেউ সংখ্যালঘু নন। এ সকল অসাংবিধানিক শব্দ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে সাংবিধানিক অধিকার হিসাবে সকল ধর্ম পালনের পরিবেশ নির্বিঘ্ন করতে হবে।"

১৯৮৮ সালে এরশাদ জামানায় সংবিধানের ৮ম সংশোধনীতে ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম ঘোষণা করা হয়। তবে এটি অন্য ধর্মকে নিরুৎসাহিত করে নয়। সেখানেও সকল ধর্মাবলম্বীর নাগরিক সাম্যের কথা বলা হয়েছে।

সংবিধানের সংশোধিত অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "অনুচ্ছেদ ২(ক)… প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন। কিংবা অনুচ্ছেদ ১২ …ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা (এটি আবার রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশের অন্তর্ভূক্ত)। অনুচ্ছেদ ৪১(১) আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা-সাপেক্ষে–

(ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে;

(খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে।

(২) কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোন ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম-সংক্রান্ত না হইলে তাঁহাকে কোন ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ কিংবা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপাসনালয়ে অংশগ্রহণ বা যোগদান করিতে হইবে না।"

তাহলে সংবিধান বলছে সংখ্যায় কম বলে কেউ সংখ্যালঘু নয়। তাদের ধর্ম পালনের বা ধর্মীয় উৎসব পালনে রাষ্ট্র কোন বাধা নয়। সংবিধান কারো ধর্মীয় পরিচয় নির্ধারণ করেনি। সমঅধিকার পাবেন বাংলাদেশে বসবাসরত সকল নাগরিক।

আমরা তাই প্রত্যাশা করব সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী নাগরিকরা নির্বিঘ্নে, নিরাপদে ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব পালন করবেন। রাষ্ট্র সেই ব্যবস্থা নেবে। যা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

লেখক: সাংবাদিক
 
বি.দ্র.- (এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। নিউজজি২৪ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন