বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ , ২১ জুমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ফিচার
  >
বিশেষ কলাম

ডিপ্লোমা ও বিএসসি প্রকৌশলী দ্বন্দ্ব কেন

শাকিল আহমেদ শুভ ২৮ আগস্ট , ২০২৫, ১২:০৭:৩৩

923
  • ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা: বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এসেছে ডিপ্লোমা ডিগ্রির মাধ্যমে। আজকের বুয়েট যাত্রা শুরু করে আহসানউল্লাহ কলেজ নামে, তখন ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স পড়ানো হতো। সুতরাং ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিকে ছোট করে দেখার কোনো অবকাশ নাই।

ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি (বুয়েট, রুয়েট, চুয়েট, কুয়েট) ও কিছু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটদের যেখানে গবেষণা ও উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করার কথা সেখানে তারা ছুটে চলছে সরকারি চাকরির দিকে। রাষ্ট্র এদের পিছনে ইনভেস্ট করে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে অবদান রাখার জন্য। অথচ দেশের বড় বড় অবকাঠামো, সেতু, মেগা প্রকল্প করতে নির্ভর করতে হয় বিদেশি প্রকৌশলী ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের দিকে। অথচ এই বিশেষায়িত ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েটদের স্বপ্ন অনেকটা সরকারি চাকরির গন্ডির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিসিএস থেকে শুরু করে বিভিন্ন গ্রেডের চাকরি। সম্প্রতি লক্ষ্য করা গিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (১২ গ্রেড) পদে জয়েন করেছে বুয়েট গ্রাজুয়েটরা। এমনকি রুয়েট গ্রাজুয়েট মেকানিক (১৫ তম গ্রেড) পদে চাকুরিতে যোগদান করেছে। দেশসেরা ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েটদের এমন হতাশা হীনমন্যতা হঠাৎই শুরু হয়নি। সকল পেশায় সমান সুযোগ সুবিধা, পদমর্যাদা, সামাজিক অবস্থান ঠিক করতে না পারার ব্যর্থতা এক্ষেত্রে অনেকাংশে দ্বায়ী।

উদাহরণস্বরুপ বলা যেতে পারে একজন ইঞ্জিনিয়ারের যেমন দেশের প্রকৌশল কাজে অবদান রাখার কথা! তেমনি একজন মেডিক্যাল শিক্ষার্থীর দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে মনোনিবেশ করার কথা? কিন্তু উভয়েই কেনো বিসিএস ক্যাডার হওয়ার দৌড়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যায়? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এবার রাষ্ট্রযন্ত্রের ভাববার সময় এসেছে। সরকারের সঠিক কর্মসংস্থানের অভাব এবং সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতায় এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে!

এবার আসি ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নিয়ে। এই কোর্সে তাত্ত্বিক এর পাশাপাশি ব্যবহারিকেও সমান গুরুত্ব দেয়া হয়। যেন একজন শিক্ষার্থী থিওরিক্যাল পড়াশুনা করে প্যাকটিক্যালি বাস্তবায়ন করতে পারে। দেশের ৬০০+ পলিটেকনিক, মনোটেকনিক, টিএসসি তে লাখ লাখ শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে জব মার্কেটে প্রবেশ করে অথচ সরকারি বেসরকারি মিলেও এত কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে খুবই কম সংখ্যক ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সরকারি চাকুরির সুযোগ পায়। উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদ ছাড়া ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের সরকারি চাকরির সুযোগই নেই। বাকীরা নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে বেসরকারি জব মার্কেটে কাজ করে। দীর্ঘসময় ধরে বৈষম্যের স্বীকার! স্বল্প বেতন, চাকুরির নিরাপত্তা নেই অনেকাংশে বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানে মানা হয় না শ্রম আইন।

আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি বিদেশি রেমিট্যান্স। দেশের বাইরে প্রচুর অদক্ষ লোক পাড়ি জমায়, বিভিন্ন পেশায় কাজ করে রেমিট্যান্স পাঠায়, অথচ স্কিলড ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ সেভাবে নেয়া হয়নি! ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা বিদেশে উল্লেখযোগ্য ভাবে কর্মসংস্থান গড়তে পারলে আমাদের অর্থনীতিতে বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সঠিক ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্য আরো চরম! ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে আবার বিএসসি ৪ বছর, সেটাও পাবলিক ভার্সিটি মাত্র একটি, চাহিদার তুলনায় অতি নগন্য। শুধুমাত্র ৫০টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে যে পরিমান ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার বের হয় তাদেরই গ্রাজুয়েশন করার সুযোগ নেই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাবলিক ভার্সিটি না হলে অন্তত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আছে উচ্চ শিক্ষার জন্য সেখানে ডিপ্লোমাদের একমাত্র উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান ডুয়েট (কোর্স ভেদে ৬০-১২০ টি আসন)। সকল নাগরিককে মৌলিক চাহিদা হিসেবেও উচ্চ শিক্ষা দেবার ও দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মতো বৃহৎ কর্মক্ষম শ্রেণীকে গ্রাজুয়েশনের জন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে তুলে দেয়া হয়! এইখানে রয়েছে এক বিশাল বাণিজ্য, যখন একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের ফ্যামিলিকে সাপোর্ট দেয়ার কথা সেখানে বিপুল অর্থ লগ্নি করতে হয় গ্রাজুয়েশনের জন্য! রাষ্ট্রের উচিত ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার দ্বন্দ্বে বহুল আলোচিত প্রশ্নে আসা যাক,

০১. ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কাউকে পদোন্নতি দিয়ে নবম গ্রেডে উন্নীত না করা।

উত্তর: কেন ভাই ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মেধা থাকলে, যোগ্যতা থাকলে, পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা থাকলে আপনারা তাদেরকে ঠেকিয়ে রাখতে চান কেন? এটা কি তাদের যোগ্যতার সাথে বৈষম্য করা হয় না?

০২. দশম গ্রেডের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে স্নাতক প্রকৌশলীদের সুযোগ দেয়া।

উত্তর: দশম গ্রেডের চাকরির পদটির নামই হলো উপ-সহকারী প্রকৌশলী যা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্যই আর সহকারী প্রকৌশলী পদটি করা হয়েছে স্নাতক প্রকৌশলদের জন্য। স্নাতক প্রকৌশলী হয়ে নীচের পদে আবেদন করতে আপনাদের লজ্জা হবে না? ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরাও যদি সহকারী প্রকৌশলী পদের জন্য আবেদন করার অধিকার চায় আপনারা মেনে নিবেন?

চাকরীর ক্ষেত্রে ১ জন সহকারী প্রকৌশলীর (স্নাতক প্রকৌশলী) আন্ডারে ৪ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ডিপ্লোমা প্রকৌশলী) থাকার নিয়ম। স্নাতক প্রকৌশলীরা তাত্ত্বিক জ্ঞানে যেমন অভিজ্ঞ তেমনি ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা ব্যবহারিক জ্ঞানে অভিজ্ঞ এটা মানতেই হবে। স্নাতক প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলী একে অপরের পরিপূরক। এটাকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নাই।

 

নিউজজি/এসএম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন