বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ , ২১ জুমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ফিচার
  >
বিশেষ কলাম

অশনি সংকেত, রাজনৈতিক সহিংসতা!

মাঈনুদ্দীন দুলাল ৪ আগস্ট , ২০২৫, ১১:৪৭:৩৩

345
  • অশনি সংকেত, রাজনৈতিক সহিংসতা!

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে ( এপ্রিল -জুন) জানানো হয়েছে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৭২ জন,আহত ১৬৭৭ জন।এতে গণপিটুনিতে মারা গেছেন ১৯ জন।

মানবাধিকার সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এক জরিপে জানাচ্ছে, জুলাই মাসে রাজনৈতিক সহিংসতা ও গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ২৫ জন ও আহত ৫৯৩ জন। তাদের পরিসংখ্যানে জুন মাসের তুলনায় ঘটনা,নিহত ও আহতের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি। অর্থাৎ সহিংসতার পারদ ঊর্ধমুখী।

এই সহিংসতাগুলো ঘটছে রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তদ্বন্দ্বে ও প্রতিপক্ষের হামলায়। অতিসম্প্রতি গোপালগঞ্জের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। এনসিপি'র সমাবেশ ঘিরে প্রতিপক্ষের হামলায় ও পরবর্তীতে আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনীর হস্তক্ষেপে ৫ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।

গত ২৯ জুলাই চট্টগ্রামে ঘটে গেল বড় সহিংসতা ও হামলার ঘটনা। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সভাপতি গোলাম আকবর খোন্দকারের উপর হামলা হয়েছে।

এতে তিনিসহ প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা কর্মী আহত হয়েছেন। গোলাম আকবর প্রয়াত একজন বিএনপি নেতার মাজার জিয়ারতে রাউজান উপজেলায় যাচ্ছিলেন। তার রক্তাক্ত শরীর ও অগ্নিদগ্ধ গাড়ির ছবির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায় একদল লোক তাকে আঘাত করছেন।  তার কর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে তাকে রক্ষা করেন। গোলাম আকবর খোন্দকার সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন, একই এলাকার আর এক প্রভাবশালী বিএনপি নেতা গিয়াস কাদের চৌধুরীর নির্দেশে তার লোকজন এই হামলা চালিয়েছে। উল্লেখ্য গিয়াস কাদের সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছোট ভাই এবং তৎকালীন মুসলিমলীগের প্রভাবশালী নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে।

স্থানীয় লোকজনের মতামতে যা বোঝা গেল, দুই নেতা একই এলাকার হওয়ায় নির্বাচনে নমিনেশন ও প্রভাব বিস্তার নিয়ে এই দ্বন্দ্ব। এই ঘটনার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটি বাতিল ও ৪ নেতাকে বহিষ্কার করেছে।

সহসা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে এমন সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে। তারিখ এলে সহিংসতার মাত্রা বাড়তে থাকবে। এমন আশংকা জনমনে।

আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে রাজপথে সোচ্চার হন খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবী সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

প্রথম আলো পত্রিকা আয়োজিত " জুলাই গণ-অভ্যুত্থানঃ এক বছরের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যত" শীর্ষক আলোচনায় মি.দেবপ্রিয় খেদ এবং ক্ষোভ  প্রকাশ করে বলেন,

"জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর এক বছরে ভালো অভিজ্ঞতা কম, খারাপ অভিজ্ঞতাই বেশি। অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সরকারের মধ্যে সক্ষমতার অভাব প্রকট। সরকারের ভেতর আরেকটা সরকার আছে।

"অন্তর্বর্তী সরকার চাইলেও এখন একটা ভালো নির্বাচন করতে পারবে কি না, বৈঠকে সেই প্রশ্ন রেখে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আপস, আঁতাত বা সিট ভাগাভাগির নির্বাচন নয়, একটা প্রকৃত নির্বাচন দরকার, যেখানে মানুষ ভোট দেওয়ার পর শান্তিতে থাকবে।"

ভালো নির্বাচন করতে হলে শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা খুব ভালো বুঝেছি যে প্রশাসনিক ক্ষমতা ও প্রচলিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে এটা করা সম্ভব নয়। সেনাবাহিনীর বৃহত্তর অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে এটা করা সম্ভব হবে না।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য  আরো বলেন, ‘গত বছরের মূল্যায়নের চেয়ে আমি আগামী এক বছরের এই নিষ্ক্রমণ পদ্ধতিটা কী হবে বা এক্সিট পলিসিটা কী হবে, সেটার জন্য কী কী প্রয়োজন পড়বে, সেগুলোর ওপর গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেছি।’

বোঝা যায় এই সহিংসতা ও হানাহানি আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বড় প্রতিবন্ধকতা হবে।

উত্তম নির্বাচন ছাড়া মুক্তির কোন বিকল্প নেই।

নিউজজি/এস দত্ত

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন