বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ , ২১ জুমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ফিচার
  >
বিশেষ কলাম

ইসরায়েলকে বর্বরতার মূল্য দিতে হবে

মাঈনুদ্দীন দুলাল ২ আগস্ট , ২০২৫, ১৬:৫৬:০৩

470
  • ইসরায়েলকে বর্বরতার মূল্য দিতে হবে

ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি মাহমুদ দারবিশ তার একটি কবিতায় অসহায় অন্তর্দাহ এভাবে বলছেন,‘তাই জীবনকে ভালোবাসি আমি, কারণ আমি মরে গেলে মায়ের কান্না আমার সহ্য হবে না।’

ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলায় গাজায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ মারা গেছেন। এরমধ্যে অর্ধেকের চেয়ে বেশি শিশু। এই সব মৃত শিশুদের মায়ের বেদনা দারবিশ বলেছেন। এক একটা পরিবার একটা পৃথিবী। হামলায় ২৬৩১টি পরিবার সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়েছে।

প্রায় ১০ হাজার মানুষ ধ্বংসস্তুপের নীচে আটকে আছে। এরা কেউ জীবিত নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন নিষ্ঠুরতা ও ধ্বংসযজ্ঞ পৃথিবী আর দেখেনি।

ইসরায়েলের এই নিষ্ঠুরতা বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সাধারণ মানুষকে মর্মাহত করছে। এর প্রতিক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।

আমেরিকার পরে ইউরোপে ইসরায়লের ঘনিষ্ট মিত্র বৃটেন ও জার্মানি। সম্প্রতি জার্মানরা তাদের সুর বদলাচ্ছে। গাজায় মানবিক সংকট এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইউরোপীয় দেশগুলোর পদক্ষেপ নিয়ে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ভাডেফুল বলেছেন, এসব ইস্যুতে ইসরায়েল ক্রমেই কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। ইসরায়েল সফরের আগে গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জোহান ভাডেফুল বলেন, ইসরায়েল নিজেকে ক্রমেই 'সংখ্যালঘু অবস্থানে' খুঁজে পাচ্ছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল জাতিসংঘের 'দ্বি-রাষ্ট্র' সমাধান সংক্রান্ত সম্মেলন বয়কট করেছে। এ ঘটনার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে জোহান এসব কথা বলেন।

ভাডেফুল আরও বলেন, ইসরায়েলি সরকারের কিছু সদস্য যেভাবে প্রকাশ্যে দখলদার ভূখণ্ড সংযুক্ত করার হুমকি দিচ্ছেন, তা বিবেচনায় রেখে এখন ইউরোপের অনেক দেশ আলোচনার আগেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির আহ্বানে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে বিশ্বের ১৫টি দেশ। তারা হামাসের হাতে থাকা সব জিম্মির মুক্তি ও গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিরও আহ্বান জানিয়েছে। 

বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। এই যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে অ্যান্ডোরা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পর্তুগাল, সান মারিনো, স্লোভেনিয়া ও স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিন—দুইটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও নিরাপদ সীমানার মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে জাতিসংঘের প্রস্তাব ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।

ইরান আগাগোড়া ফিলিস্তিনের সাথে আছে। এখন মধ্যপ্রাচ্যের মোড়ল সৌদি আরব ও আরো কিছু দেশ ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ব্যাপারে সোচ্চার।

আশা করছি বিশ্ব বিবেক এই নিপীড়নের অবসানে দৃঢ় ভাবে দাঁড়াবে। সমাধানের পথ খুঁজে নেবে।

কিন্তু এত বছরের ধারাবাহিক নির্যাতন ফিলিস্তিনের মনোবল ভাঙতে পারেনি। বরং তারা আরো নিষ্ঠুর বাস্তবতার জন্য প্রতিদিন অপেক্ষা করে। প্রতি ভোরে দরজা খুলে সূর্যোদয় নয়, মৃত্যু দানবের মুখ দেখে।

ফিলিস্তিনের হৃদয়ের ভাষায় কথা বলা কবি মাহমুদ দারবিশ তাই বলেন- ‘‘আমি মানুষকে ঘৃনা করিনা ক্ষুধার্ত হলেও। আমি কারো জমিনে অনধিকার প্রবেশ করি না।’’

সাবধান!

সাবধান!

আমার ক্ষুধা ও ক্রোধ থেকে সাবধান।

দখলদারের মাংস হবে

আমার খাবার।"

 

লেখক : সাংবাদিক
 
বি.দ্র.- (এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। নিউজজি২৪ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন