শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ , ২৫ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার
  >
বিশেষ কলাম

মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ: অস্থির পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা রক্ষার লড়াই

মো. আবদুর রহিম ৯ মে , ২০২৫, ১৪:৩৭:৩২

471
  • মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ: অস্থির পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা রক্ষার লড়াই

মিয়ানমারের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, জাতিগত সহিংসতা ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সংঘর্ষের জেরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশটি এক অস্থিতিশীল অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা, বিশেষ করে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায়। সীমান্তের ওপার থেকে গোলাগুলি, শরণার্থী অনুপ্রবেশ এবং নিরাপত্তাহীনতা—বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত একাধিক দিক থেকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে।

শরণার্থী সংকট: চাপ অব্যাহত

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানের পর প্রায় ১১ লাখ শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছয় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এই শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া স্থবির। বরং সম্প্রতি আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর লড়াইয়ের ফলে নতুন করে রাখাইন রাজ্য থেকে সাধারণ মানুষ বাংলাদেশ সীমান্তে এসে আশ্রয় চাইছে।

গত কয়েক মাসে নাইক্ষ্যংছড়ি ও গুনধুম সীমান্তে সংঘর্ষের শব্দ স্পষ্ট শোনা গেছে। বুলেট ও মর্টারশেল বাংলাদেশের ভেতরেও পড়েছে, যা জনগণের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

নিরাপত্তা ঝুঁকি: সীমান্তে অস্থিরতা বাড়ছে

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মিয়ানমার সীমান্তে বাড়তি নজরদারি চালাচ্ছে। তবে সমস্যার গভীরতা ক্রমেই বাড়ছে। সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও মানবপাচারের আশঙ্কা বাড়ছে। মাদক কারবারিরা অস্থির পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে বলে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশকে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করতে হবে, কিন্তু একইসঙ্গে মানবিক দৃষ্টিকোণও রাখতে হবে কারণ এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ছে।

কূটনৈতিক জটিলতা: সমস্যা সমাধানে প্রতিবেশী নির্ভরতা

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক বরাবরই সংবেদনশীল। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সেই সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠেছে। মিয়ানমারের জান্তা সরকার কার্যত ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে এগোচ্ছে, এবং তাদের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ কার্যকর হচ্ছে না। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে চীনের মতো প্রভাবশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও আঞ্চলিক ফোরামগুলোর মাধ্যমে সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে চেষ্টা চালাতে হচ্ছে।

সামগ্রিক চ্যালেঞ্জ: মানবিকতা বনাম নিরাপত্তা

বাংলাদেশ সরকার একদিকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে শরণার্থীদের সহায়তা করছে, অন্যদিকে নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। এই দুইয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। স্থানীয় জনগণ উদ্বিগ্ন—তারা নিজেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, আবার রোহিঙ্গা ও অন্যান্য অনুপ্রবেশকারীদের কারণে সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপে পড়ছেন।

মিয়ানমার সীমান্ত এখন শুধু একটি ভৌগোলিক রেখা নয়, বরং তা বাংলাদেশের নিরাপত্তা, কূটনীতি, মানবাধিকার এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার একটি পরীক্ষাক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শুধু সামরিক প্রস্তুতি নয়, প্রয়োজন বহুপাক্ষিক কূটনীতি, আঞ্চলিক সমন্বয় এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশল।

লেখক: সমাজকর্মী ও সাংবাদিক

বি.দ্র.- (এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। নিউজজি২৪ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন