রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ , ১৩ জুমাদাউস সানি ১৪৪৬

ফিচার
  >
বিশেষ কলাম

জেনারেশন জি (Gen Z): পরিবর্তনের প্রতিনিধি

মো. আবদুর রহিম ১৪ নভেম্বর , ২০২৪, ১৩:৪৬:৪২

416
  • জেনারেশন জি (Gen Z): পরিবর্তনের প্রতিনিধি

গত এক দশকে আমাদের সমাজে পরিবর্তনের ঢেউ এসেছে, যার মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে জেনারেশন জি বা জেন জি। এই প্রজন্ম, সাধারণত ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে, যাদের প্রযুক্তি এবং গ্লোবালাইজেশনের যুগে বেড়ে ওঠার কারণে তাদের জীবনদর্শন, চাহিদা এবং কৃষ্টি আগের প্রজন্ম থেকে আলাদা। তাদের অনন্য বৈশিষ্ট্য এবং ক্ষমতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে এখন ব্যাপক গবেষণা চলছে এবং এর উপর ভিত্তি করে অনেক বড় বড় পরিবর্তন লক্ষণীয়।

প্রযুক্তির সাথে গভীর সম্পর্ক

জেনারেশন জি প্রথম প্রজন্ম যারা ডিজিটাল যুগে বড় হয়েছে। স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেট তাদের শৈশব থেকে অংশ। তারা প্রতিনিয়ত তথ্যের প্রবাহে থাকে এবং এই তথ্য তাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে। এই প্রজন্মের কাছে যোগাযোগ এবং ব্যক্তিগত মেলামেশার সংজ্ঞা আগের প্রজন্মের তুলনায় ভিন্ন। সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে তারা বিশ্বজুড়ে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম এবং এজন্যই তাদের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটা উদার।

সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি প্রতিশ্রুতি

জেনারেশন জি একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। জলবায়ু পরিবর্তন, বর্ণবৈষম্য, লিঙ্গসমতা, মানসিক স্বাস্থ্য, এবং মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে তাদের সচেতনতা এবং উচ্চস্বরে আওয়াজ তোলা প্রমাণ করে যে তারা একটি সচেতন সমাজ গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জেন জি নতুন রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা এবং সামাজিক চেতনা নিয়ে এগিয়ে আসছে, এবং বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাছেও এই পরিবর্তনের প্রতিফলন ঘটানোর জন্য চাপ দিচ্ছে।

ক্যারিয়ার ও শিক্ষা

জেনারেশন জি অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হওয়ার দিকে বেশি মনোযোগী। এই প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা অনেকেই উদ্যোক্তা হতে চায় এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজেদের ক্যারিয়ার তৈরি করছে। করোনা মহামারি তাদের জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন এনেছে, এবং এর ফলে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট কাজের দিকে ঝুঁকছে। এই প্রজন্ম কর্মক্ষেত্রে উন্নত কর্মপরিবেশ, স্থিতিশীলতা এবং কাজ ও জীবনের মধ্যে সমতা বজায় রাখতে চায়।

নতুন প্রজন্মের ভোক্তা চাহিদা

জেনারেশন জি ভোক্তা হিসাবে খুব সচেতন এবং তাদের চাহিদা আগের প্রজন্মের তুলনায় আলাদা। পরিবেশবান্ধব পণ্য, সামাজিক দায়িত্বশীলতা এবং স্বচ্ছতার প্রতি তাদের আকর্ষণ বেশি। এই প্রজন্মে বড় বড় ব্র্যান্ড এবং কোম্পানিগুলো পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে, কারণ এই প্রজন্ম শুধু পণ্য কিনে না, বরং পণ্যের মূল্যবোধ বিচার করে।

চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ

জেনারেশন জি-এর জন্য যেহেতু প্রযুক্তি এবং সামাজিক সমস্যা খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাই এই প্রজন্মের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ভারসাম্য রক্ষা করা। মানসিক স্বাস্থ্য-সমস্যা, অসন্তোষ এবং চাপ মোকাবিলায় অনেকেই সংগ্রাম করছে। তবুও তারা একটি পরিবর্তনশীল সমাজ গড়তে অনুপ্রাণিত এবং বিশ্বের উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট।

জেনারেশন জি আজকের সমাজের ভবিষ্যৎ নির্মাতা। এই প্রজন্মের উচ্চাকাঙ্ক্ষা, ক্ষমতা এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে সমাজের প্রচলিত ধারা পরিবর্তন হতে যাচ্ছে, যা আমাদের সকলের জন্য এক নতুন দিনের বার্তা।

লেখক: সমাজকর্মী ও সাংবাদিক

বি.দ্র.- (এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। নিউজজি২৪ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন