মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ , ১ জুমাদাউস সানি ১৪৪৬

ফিচার
  >
বিশেষ কলাম

গণমানুষের সংগঠন আওয়ামী লীগ

শেখ হাসিনা ২৩ জুন , ২০২৪, ১২:৫৬:৫৩

60
  • গণমানুষের সংগঠন আওয়ামী লীগ

জাতির পিতার আদর্শ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে আমাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা লড়াই-সংগ্রাম ও মানুষের আস্থা অর্জন করে আওয়ামী লীগকে জনমানুষের সংগঠনে পরিণত করেছে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের নেতাকর্মীদের মেধা, পরিশ্রম, ত্যাগ ও দক্ষতায় আওয়ামী লীগ আরো গতিশীল ও শক্তিশালী হবে এবং জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী চক্র আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই হত্যার মধ্য দিয়ে তারা বাঙালি জাতির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস চালায়। ঘাতকদের উদ্দেশ্যই ছিল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করা।

এ জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত স্বাধীনতাবিরোধী চক্র হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। তারা ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি করে জাতির পিতার হত্যার বিচারের পথকে বন্ধ করে দেয়। বিদেশে থাকায় আমি এবং আমার বোন শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যাই। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে মার্শাল ল জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে; সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে।  

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করে। বিদেশে দূতাবাসে চাকরি দেয় তাদের। স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের নাগরিকত্ব দেয়; রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার করে। ব্যবসা করার সুযোগ দিয়ে তাদের বিপুল অর্থের মালিক করে দিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে পুনর্বাসিত করে।

বিদেশে থাকা অবস্থায় ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। নানা বাধা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে আমি দেশে ফিরে এসে দলের দায়িত্বভার গ্রহণ করি এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু করি। 

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এবং স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও অবৈধ সেনাশাসকদের নির্যাতন আর নিপীড়নের মাধ্যমে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয় জনগণের সংগঠন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে। কিন্তু আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মী, সমর্থকরা জীবন দিয়ে সব প্রতিকূলতা, ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দলকে টিকিয়ে রেখেছে, শক্তিশালী করেছে। গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

আমরা শুরু করি অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন ও দেশ গড়ার নবতর সংগ্রাম। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা খাদ্য ঘাটতির দেশকে খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত করি। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিই। আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করি। আমরা ‘দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিল আইন, ১৯৯৬’ সংসদে পাস করে জাতির পিতার হত্যার বিচার শুরু করি। আওয়ামী লীগ সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পায়। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কারো মধ্যস্থতা ছাড়াই স্বাক্ষরিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি। আওয়ামী লীগ সরকারের এই পাঁচ বছরে দেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এক নবদিগন্তের সূচনা হয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসন, অত্যাচার, নির্যাতন ও দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ২০০৭ থেকে ২০০৮ অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ‘দিনবদলের সনদ’ ঘোষণা দিয়ে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে পুনরায় নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে এবং ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে।  

২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ধারাবাহিক সরকারে গত সাড়ে ১৫ বছর আমরা দেশের প্রতিটি সেক্টরে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করেছি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ বছর এবং আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫ বছরের শেষ বছর—২০২৩ সালের তুলনা করলে সাফল্যের তথ্যচিত্র আমাদের সামনে ভেসে উঠবে। এ সময়ে প্রবৃদ্ধি ৭.২৫ শতাংশ, মাথাপিছু আয় পাঁচ গুণ, বাজেটের আকার ১২ গুণ, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ১৩ গুণ, জিডিপির আকার ১২ গুণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬ গুণ, রপ্তানি আয় পাঁচ গুণ, রেমিট্যান্স ছয় গুণ, এফডিআই পাঁচ গুণ, কৃষি-শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা তিন গুণ, শ্রমিকদের মজুরি ৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দারিদ্র্যের হার ৪১.৫১ শতাংশ থেকে ১৮.৭ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। অতিদারিদ্র্য কমেছে পাঁচ গুণ। মানুষের গড় আয়ু হয়েছে ৭২.৮ বছর। এ সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আট গুণ এবং বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগের হার ২৮ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাক্ষরতার হার বেড়েছে ৭৬.৮ শতাংশ। ২০০৯ সালে জিডিপির পরিমাণ ছিল মাত্র ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালে জিডিপির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেল যোগাযোগ শুরু হয়েছে। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশিতে আমাদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা, মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-সহ দেশব্যাপী অগণন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বাস্তবায়ন করেছি। আমরা দেশের সব ভূমিহীন-গৃহহীনকে বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছি। আশ্রয়ণ প্রকল্প ও অন্যান্য কার্যক্রম দ্বারা এ পর্যন্ত আট লাখ ৬৭ হাজার ৯০৪টি পরিবারের ৪৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আমরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করে যাচ্ছি। সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে আমাদের সরকার জাতির পিতার হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করেছে। এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে এবং রায়ও কার্যকর করা হচ্ছে। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে, ফলে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’ অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে ‘ডেল্টা পরিকল্পনা’ বিনির্মাণে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।

জাতির পিতার আদর্শ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে আমাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা লড়াই-সংগ্রাম ও মানুষের আস্থা অর্জন করে আওয়ামী লীগকে জনমানুষের সংগঠনে পরিণত করেছে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের নেতাকর্মীদের মেধা, পরিশ্রম, ত্যাগ ও দক্ষতায় আওয়ামী লীগ আরো গতিশীল ও শক্তিশালী হবে এবং জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্রবিরোধী দেশি-বিদেশি অপশক্তি এখনো নানাভাবে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এই অপশক্তির যেকোনো অপতৎপরতা-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে আমি দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করছি।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু

বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ; প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন