বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ , ২১ জুমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ফিচার
  >
বিশেষ কলাম

নারী, বিনিয়োগ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক যোগাযোগ

মো. ইসহাক ফারুকী ৮ মার্চ , ২০২৪, ০১:৩২:০২

861
  • নারী, বিনিয়োগ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক যোগাযোগ

৮ মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস। পূর্বে এই দিবসের নাম ছিলো ‘আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস’। প্রতি বছর মার্চ মাসে পালিত হয় দিবসটি। এই বছরের প্রতিপাদ্য ‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ; এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’। কিভাবে নারী দিবস এসেছে; তা অনেকেই জানেন। 

১৮৫৭ সালে মজুরি বৈষম্য, কাজের সময়, কর্মক্ষেত্রের অমানবিক পরিবেশের বিরূদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের পথে শান্তিপূর্ণ মিছিলে নামে সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে তৎকালীন সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী হামলা চালায়। তার পর থেকেই বিশ্বের নানা প্রান্তে শুরু হয় অধিকারের দাবিতে নারীদের সংগ্রাম। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন আয়োজিত হয়।

১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। এখানেই প্রতি বছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ১৯১৩ থেকেই বেশ কয়েকটি দেশে নারী দিবস পালন করা শুরু হয় । ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে নারী দিবসকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

নারী কোনো পণ্য নয়; নয় কোনো চাপিয়ে দেওয়ার বস্তু। একটি বাস্তবতা তুলে ধরা যাক। দূর দুরান্ত থেকে পানি আনা; গেরস্থালির কাজে ব্যবহার করাসহ নানাবিধ পানি বিষয়ক ব্যবস্থাপনা নারীরা করলেও টিউবওয়েল নির্মাণ ও অন্যান্য সিদ্ধান্ত নেয় পুরুষরা। সেখানে নারীদের কি জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তাদের কি প্রয়োজন? কোথায় কোন ব্যবস্থা নিতে হবে; তার সকল হিসাব-নিকাশ করে পুরুষেরা। সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীরা থাকে পিছিয়ে।

নারীদের নেতৃত্ব প্রদানেও দেওয়া হয় বাঁধা । আবার কোনো নারী যদি সবকিছু উপেক্ষা করে নেতৃত্ব প্রদান করেন; তাকে নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন অনেক পুরুষ। সর্বোপরি নারীদের জন্য বিনিয়োগ বা কোনো ব্যবসায়ে নারীদের বিনিয়োগ এ সমাজে এখনও অনেকাংশেই অগ্রগণ্য হিসেবে ধরা হয় না। 

নারী বৈষম্য দূরীকরণ, বিনিয়োগে নারী, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধসহ সমাজের সকল ক্ষেত্রে নারীদের অন্তর্ভূক্তিকরণে প্রয়োজন অন্তর্ভূক্তিমূলক যোগাযোগ বৃদ্ধি। 

যোগাযোগ

ল্যাটিন ভাষায় `যোগাযোগ’ বা কমিউনিকেশন শব্দের মূল হল কমিউনিকেয়ার, যার অর্থ ভাগ করা বা একই মতে আসা। পিয়ারসন এন্ড নেলসনের সংজ্ঞামতে, যোগাযোগ অর্থ বোঝার এবং ভাগ করে নেওয়ার প্রক্রিয়া। উৎস, তথ্য/বার্তা, চ্যানেল, রিসিভার, প্রতিক্রিয়া, পরিবেশ, প্রসঙ্গ, হস্তক্ষেপ- এই কয়েকটি বিষয় যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মোদ্দা কথা, যোগাযোগ একটি প্রক্রিয়া যা মৌখিক এবং অ-মৌখিক পদ্ধতির মাধ্যমে বার্তা প্রেরণ এবং গ্রহণের সাথে জড়িত। যোগাযোগ হলো একটি বোঝাপড়া তৈরির উদ্দেশ্যে নিজের বা দুই বা তার অধিক ব্যক্তির মধ্যে চিন্তা, মতামত এবং ধারণার আকারে তথ্য আদান-প্রদানের একটি দ্বিমুখী মাধ্যম। শুধু মৌখিক বা অ-মৌখিক নয়; যোগাযোগ হতে পারে লিখিত বা দৃশ্যসম্বলিত। 

ইন্টার-পারসোনাল কমিউনিকেশন বা আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক লোকের মধ্যে মৌখিক বা অ-মৌখিকভাবে আদান-প্রদান করা তথ্য, ধারণা এবং অনুভূতি জড়িত। মুখোমুখি যোগাযোগ প্রায়ই শোনা, দেখা এবং অনুভব করার নিমিত্ত শারীরিক ভাষা, মুখের অভিব্যক্তি এবং অঙ্গভঙ্গি জড়িত। এ ধরণের যোগাযোগের ব্যবহার সবসময়ই বেশি। তবে আরো একটি যোগাযোগ রয়েছে, যা অনেক শক্তিশালী। তা হচ্ছে ইন্ট্রা-পারসোনাল কমিউনিকেশন বা নিজের সাথে যোগাযোগ বা স্ব-যোগাযোগ। নিজের সাথে কথা বলা, মনে মনে কথা বলা বা কল্পনা করা বা কোন দৃশ্য চিন্তা করা, নিজেকে নিজে পরামর্শ দেওয়া বা বোঝানো, স্মৃতিচারণ-এই বিষয়গুলো নিয়ে স্ব-যোগাযোগকে সংজ্ঞায়িত করা হয়ে থাকে।

অনেকেই কোন ভুল করার পর নিজেকে নিজে বলে ফেলেন, ‘পরের বার আরও ভালো করবো’ বা ‘আমি পারবো না’। ইতিবাচক বা নেতিবাচক-সকল ধরণের কথার মধ্য দিয়ে নিজেকে নিজে অনুপ্রাণিত বা নিরুৎসাহিত করেন। সফল স্ব-যোগাযোগের ভিত্তি হলো নিজেকে সচেতন করা, উপলব্ধি হওয়া এবং প্রত্যাশা তৈরি ও যাচাই।  পরিকল্পনা থেকে সমস্যা সমাধান, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সমাধান, নিজের ও অন্যদের মূল্যায়ন এবং বিচার- এ সকল কিছুই স্ব-যোগাযোগের মাধ্যমে চমৎকারভাবে করা সম্ভব। 

যোগাযোগে নারী

যোগাযোগ দক্ষতা যে কোনো পরিবেশে অপরিহার্য। কথা বলার ক্ষমতা থাকা, স্পষ্টভাবে ও জোরালোভাবে লিখতে পারা এবং সফলভাবে বার্তা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে অনেক নারীর সাফল্য ও ব্যর্থতার পার্থক্য বোঝা যায়। মার্কিন ব্যবসা যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং ডেকার কমিউনিকেশনের প্রেসিডেন্ট কেলি ডেকার নারীদের জন্য যোগাযোগ বিষয়ক বেশকিছু টিপস দিয়েছেন।

টিপসগুলো হলো- দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে জোরালোভাবে নিজের বক্তব্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরা, আমতা আমতা না করা, দাঁড়িয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করা যেন মনে হয় আপনি ঐ স্থানের মালিক, সরাসরি কথা বলা, মূল বা মোদ্দা কথা গুছিয়ে বলা, সমস্যা ও সমাধানের পথ খুঁজতে প্রশ্ন করা এবং নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্য আলোচনা, লজ্জিত না হয়ে চাহিদা অনুযায়ী প্রশ্ন করা, আবেগতাড়িত না হয়ে বা কাউকে দোষারোপ না করে কর্ম পদক্ষেপ জানতে চাওয়া, কেউ আগে বলবে বা কারো জন্য অপেক্ষা করতে হবে; এসব চিন্তা বাদ দিয়ে নিজে কথা শুরু করা বা নেতৃত্ব দেওয়া, কেউ সুযোগ দিবে এই আশায় বসে না থেকে নিজেকে উপস্থাপন করা। 

যোগাযোগ বিশ্বে অনেক নারী নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুগলের গ্লোবাল কমিউনিকেশন এন্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মিনু হান্ডা, অ্যাপলের কর্পোরেট কমিউনিকেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন হিউগে কোয়েল, মেটা প্লাটফর্মসের (ফেসবুক) কর্পোরেট কমিউনিকেশন ডিরেক্টর এলিজাবেথ গোটিয়ার, নভো নরডিস্কের মিডিয়া রিলেশনস এন্ড কমিউনিকেশনসের ইন্টারন্যাশনাল অপারেশনস ডিরেক্টর জুলিয়েট স্কট, ওয়ালমার্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এন্ড চিফ কমিউনিকেশনস অফিসার অ্যালিসন পার্ক, নেসলের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এন্ড চিফ কমিউনিকেশনস অফিসার লিসা গিবি, অ্যাডোবের ভাইস প্রেসিডেন্ট (মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি) এন্ড চিফ কমিউনিকেশনস অফিসার স্ট্যাসি মার্টিনেট, দ্য কোকা কোলা কোম্পানীর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এন্ড চিফ কমিউনিকেশনস, সাসটেইনএবিলিটি, স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশীপ অফিসার বিয়া পেরেজ, নেটফ্লিক্সের চিফ কমিউনিকেশন অফিসার র‌্যাচেল ওয়েটস্টন, শেলের কর্পোরেট কমিউনিকেশনসের প্রধান, ওয়াল্ট ডিসনির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এন্ড চিফ কমিউনিকেশনস অফিসার ক্রিস্টিনা শেক, জাতিসংঘের চিফ অব কমিউনিকেশনস ক্যাম্পেইনস ন্যানেট ব্রাউন, উইম্যান’স ওয়ার্ল্ড ব্যাংকিংয়ের গ্লোবাল ডিরেক্টর অব পলিসি এন্ড অ্যাডভোকেসি ফ্রান্সিস্কা ব্রাউন প্রভৃতি।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীদের ভূমিকা

ফ্রান্সের সাবেক অর্থমন্ত্রী, ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ইউরোপীয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ড বলেন, ‘নারীর অগ্রগতি হলে অর্থনীতিরও অগ্রগতি হয়’। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিতে সাংবাদিক ও লেখক সোফি হার্ডচের একটি লেখা থেকে জানা যায়,  ইতিহাসের প্রথম নারী ব্যবসায়ী ছিলেন ইরাকের উত্তরাঞ্চলের টাইগ্রিস নদীর তীরে অবস্থিত আসুর শহরের এক নারী, যার নাম ছিল আহাহা। সময়টা খ্রিষ্টপূর্ব ১৮৭০। আহাহা ইরাকের আসুর শহর থেকে তুরস্কের কানেশ শহরে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন। এই ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন আহাহাসহ আরও কয়েকজন। ব্যবসাটি ছিল কাপড় ও টিনের। তখন গাধার পিঠে চড়িয়ে মালামাল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেওয়া হতো। তখন ছিল বিনিময় প্রথার যুগ। মুদ্রার বদলে সে যুগে পণ্যের মূল্য হিসেবে অন্য একটি পণ্য বিনিময় করা হতো। আহাহার ব্যবসাটি ছিল বেশ লাভজনক। 

বর্তমান সময়ে চীনের আবাসন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সোহো চায়না’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ঝাং জিন। তাকে বলা হয়, একজন নারী যিনি বেইজিং তৈরি করেছেন। তিনি একসময় কারখানার কর্মী ছিলেন। পরবর্তীতে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ঝাং তার কোম্পানি চালু করার আগে গোল্ডম্যান শ্যাসের জন্য কাজ করেছিলেন; তিনি তখন ২.৮ বিলিয়ন ডলার সম্পদ অর্জন করেছেন। 

এদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর অবদান অনেক। বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের অন্যতম পথিকৃৎ সেলিনা কাদের। তিনি দেশের অন্যতম প্রধান শিল্প - কৃষিতে মনোনিবেশ করেছিলেন। আশির দশকে সেলিনা কাদের পর্যবেক্ষণ করেছিলেন যে বাংলাদেশ সরকার আলু রপ্তানির জন্য মাত্র ১০ শতাংশ ভর্তুকি প্রদান করে। আলু রপ্তানি বৃদ্ধির প্রাথমিক লক্ষ্য নিয়ে, তিনি ১৯৮৫ সালে এগ্রিকনসার্ন প্রতিষ্ঠা করেন। এগ্রিকনসার্ন প্রতি বছর ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদন ও রপ্তানি করতে কৃষকদের সহায়তা করে আসছে। 

বর্তমানের বিশ্বে ১৭৬ টি দেশে কর্মরত বাংলাদেশের নারী শ্রমিকের সংখ্যা ১০ লাখের অধিক। ২০২২ সালের বিশ্ব ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী প্রবাসী আয় প্রাপ্তির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম। আর এ অবস্থানে নিয়ে যেতে দেশের নারী শ্রমিকরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন। কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, দেশে মোট কর্মক্ষম নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় কৃষিকাজে নিয়োজিত। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সূত্রে, বর্তমানে দেশে ৩ লাখ মানুষ অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আর এদের অর্ধেকই নারী ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা। এই উদ্যোক্তারা নিজের পণ্য বিক্রির মাধ্যমে মাসে সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। দেশে গত এক দশকে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বাড়তি শ্রমশক্তির মধ্যে ৫০ লাখই নারী।

জিডিপি বৃদ্ধিতে জেন্ডার সমতা

ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউট (এমজিআই) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নারীর সমতাকে এগিয়ে নিয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী জিডিপিতে ১২ ট্রিলিয়ন ডলার যোগ করা যেতে পারে। আরো ভালোভাবে ব্যাখ্য করলে দেখা যায়, সকল দেশ তাদের অঞ্চলের দ্রুত-উন্নয়নশীল দেশের উন্নতির হারের সাথে মেলাতে ২০২৫ সালের মধ্যে বার্ষিক জিডিপিতে ১২ ট্রিলিয়ন ডলার বা ১১ শতাংশ যোগ করতে পারে। অন্যদিকে যেখানে নারীরা শ্রমবাজারে পুরুষদের সমান ভূমিকা পালন করে; সেখানে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বার্ষিক জিডিপিতে ২৮ ট্রিলিয়ন ডলার বা ২৬ শতাংশ যোগ করা যেতে পারে।

সমঅধিকার, সমসুযোগ বৃদ্ধিতে অন্তভূক্তিমূলক যোগাযোগ 

অন্তর্ভূক্তিকরণ। সমাজে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা; যেখানে প্রত্যেকে নিজেকে স্বাগত, সম্মানিত এবং প্রশংসিত বোধ করে। সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তি সমাজের মধ্যে অর্থপূর্ণ অবদান রাখতে সকল ব্যক্তির জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টিতে উৎসাহিত করে। ইনক্লুসিভ কমিউনিকেশন বা অন্তর্ভূক্তিমূলক যোগাযোগ মানে সকলের সাথে তাদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত মাধ্যম ব্যবহার করে যোগাযোগ করা। নেদারল্যান্ডসের একাডেমি টু ইনোভেটিভ এইচআর থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা নারীদের জন্য বিনিয়োগ বা বিনিয়োগে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে সমাজের সকলের জন্য অন্তর্ভূক্তিমূলক যোগাযোগের বেশকিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারি। 

১. মুক্তচিন্তা ও মুক্ত বুদ্ধির মাধ্যমে প্রথমে নিজেকে বুঝানো

২. সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক স্তর বিবেচনা করে ব্যক্তি, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা

৩. জনগণের ভাষা, সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, সম্পর্ক, চিন্তা-ভাবনা বিশ্লেষণ করে অন্তর্ভূক্তিমূলক পরিবেশ সৃষ্টি করা

৪. মৌখিক ও লিখিত যোগাযোগের ক্ষেত্রে সংবেদনশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ভাষা ব্যবহার করা

৫. সমাজের উচু স্তর থেকে নিচু স্তরের সকলের কথা বিবেচনায় এনে তথ্য প্রদান ও প্রতিশ্রুতি গ্রহণ

৬. অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি বাস্তবায়নে সরকারকে প্রভাবিত করা

৭. প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবামূলক বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি কমিটি তৈরি করা 

৮. জেন্ডার সমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে সমাজের সকল স্তরে অন্তর্ভুক্তিমূলক যোগাযোগ প্রশিক্ষণ প্রদান করা

৯. নারীর জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টিতে সমাজকে অন্তর্ভূক্তকরণ 

বাড়ি-ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, গণ-পরিবহন, পার্ক-মাঠ, রাস্তাঘাট, অফিস, থানা-আদালত, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসহ সকল ক্ষেত্রে নারীদের প্রতি অরুচিকর ও অসম্মানীয় প্রদান থেকে বিরত রাখতে এবং বিনিয়োগে নারীদের অবস্থান শক্ত করার জন্য অনুপ্রাণিত করতে এখনই প্রয়োজন অন্তর্ভূক্তিমূলক যোগাযোগ। কারণ,  সমাজের মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হলে পরিবর্তিত হবে নারীর অবস্থানও।  

লেখক পরিচিতি

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন কর্মী, সাংবাদিক,

লেখক, পরিবেশ ও জলবায়ু যোগাযোগ পরামর্শক

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন