রবিবার, ২ এপ্রিল ২০২৩, ১৮ চৈত্র ১৪২৯ , ১১ রমজান ১৪৪৪

ফিচার
  >
বিশেষ কলাম

প্রসঙ্গ অমর একুশে বইমেলা ২০২৩!

রেজা ঘটক ২৪ জানুয়ারি , ২০২৩, ১২:৪৮:৩৪

391
  • রেজা ঘটক

করোনা মহামারির পর অমর একুশে বইমেলা এবার স্বাভাবিক নিয়মেই ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখে শুরু হচ্ছে। চলবে গোটা ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে। গতকাল লটারির পর প্রকাশকদের মধ্যে ইতোমধ্যেই স্টল বরাদ্দ দিয়েছে বাংলা একাডেমি। এখন চলছে বইমেলার মাঠে প্রকাশকদের বরাদ্দপ্রাপ্ত নিজ নিজ স্টলের সজ্জার কাজ। বইমেলার মাঠে তাই এখন হাতুড়ির মধুর শব্দে চলছে এক নয়নাভিরাম মহাযজ্ঞ।

বইমেলার মাঠের এই হাতুড়ির শব্দ শুনতে আমার বরাবরাই খুব ভালো লাগে। ভালো লাগে স্টল সজ্জার কাজ দেখে দেখে সময় কাটাতে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাঠমিস্ত্রী, রাজমিস্ত্রী আসেন। আসেন স্টল সজ্জার সামগ্রী নিয়ে কিছু অস্থায়ী দোকানি। এসব সামগ্রী নিয়ে বইমেলার মাঠেই এখন বসেছে ভিন্নরকম বৈচিত্র্যময় এক হাট। এই হাটের সদাই করেন প্রকাশকরা। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অস্থায়ী এই হাটের কারবারি দেখার আনন্দও তাই অনেক।

প্রতিবছরই এই হাট দেখার জন্য এবং বইমেলার স্টল সজ্জার কাজ দেখার জন্য আমি বইমেলা শুরুর আগের দিনগুলোতেও বইমেলার মাঠে যাই। আমার এই মাঠে এই সময়টা ঘুরতে ফিরতে খুব ভালো লাগে। যে কোনো নির্মাণ কাজ দেখার মজাই আলাদা। আর তা যদি হয় আমাদের প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা নিয়ে, তাহলে তো সেই খুশি আরও মহানন্দে রূপ নেয়। আমরা লেখক, প্রকাশক, পাঠক ও বইপ্রেমীরা মুখিয়ে আছি মাসব্যাপী অমর একুশে বইমলার অপেক্ষায়।

এবছর বইমেলার মাঠের যে ডিজাইন দেখলাম, দেখে মনে হয়েছে উদ্যানে বইমেলা আসার পর এবারই সবচেয়ে গোছানো একটি ডিজাইন করতে পেরেছে বাংলা একাডেমি। শিশু চত্বরকে দেয়া হয়েছে কালীমন্দিরের গেটের ডানপাশে। শিশুদের জন্য খেলাধুলা করার যথেষ্ট স্পেস রাখা হয়েছে সেখানে।

বইমেলার সীমানা দেয়াল গতবছরের মতো হলেও বইমেলার স্টলগুলো রাখা হয়েছে স্বাধীনতা টাওয়ারের দক্ষিণপাশ পর্যন্ত। এবার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের দিকে কথিত ভাসানচরে কোনো স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এটি দেখে ভালো লাগছে। স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি মুখ বরাবর লম্বা রো করে দুপাশে স্টল ও মাঝখানে প্যাভেলিয়ন রাখা হয়েছে। খুবই গোছানো ডিজাইন মনে হলো। এবার রমনা কালীমন্দিরকে বইমেলা চত্বরের অংশ করা হয়েছে, যা খুবই ভালো লেগেছে। মন্দিরের পাশেই পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও ফায়ার সার্ভিস।

বইমেলার মাঠের পূর্বপাশে পাম গাছের কাছে টয়লেট ও মসজিদ। কিন্তু লিটলম্যাগের তুর্কি কর্মীদের জন্য ঠিক কোথায় স্থান বরাদ্দ করা হয়েছে আমি বুঝতে পারিনি। কেউ কেউ বলেছেন টিএসসি গেট দিয়ে বইমেলায় ঢুকলে একেবারে উত্তর সীমান্তে লেকপারের পাম গাছ তলায় নাকি লিটলম্যাগ কর্নার! যেটা বইমেলা থেকে কিছুটা যেনবা বিচ্ছিন্ন! কিন্তু মুক্তমঞ্চের পাশেই লিটলম্যাগ চত্বর করলে মূল মেলারই অংশ হবে।

খাবারের দোকান কোথায় হবে এখনো ঠিক বুঝতে পারলাম না। তবে মুক্তমঞ্চের পাশে লিটলম্যাগ চত্বরের আগের জায়গায় যদি খাবারের দোকান দেয়া হয়, তাহলে তা নিয়ে অবশ্যই আমাদের আপত্তি থাকবে। আর লিটলম্যাগের তুর্কি কর্মীরা হয়ত এটা কিছুতেই মানবেও না। বাংলা একাডেমিকে লিটলম্যাগ চত্বরের বিষয়টি দৃঢ়ভাবে ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করছি। কারণ অমর একুশে বইমেলায় আমাদের প্রধান আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু কিন্তু লিটলম্যাগ চত্বর।

লিটলম্যাগকে কেন বাংলা একাডেমি সবসময় অবহেলা ও তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখবে, এটা নিয়ে এখনই একটা সুরাহা হওয়া জরুরি। কারণ বইমেলায় লিটলম্যাগকে অস্বীকার করার সুযোগ বাংলা একাডেমির যেমন নাই। তেমনি শিল্পচর্চায় তা মোটেও শোভন নয়!

এবারের অমর একুশে বইমেলার এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান ডিজাইনকে আমার পছন্দ হয়েছে। লিটলম্যাগের বিষয়টি ক্লিয়ার হলে বিষয়টি আরও মনঃপূত হবে। বইমেলায় এবারও বাংলা একাডেমির ভেতরে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও দপ্তরগুলো রাখা হয়েছে। এবারের বইমেলার ডিজাইন ও কাঠামো বেশ দৃষ্টিনন্দন ও শক্তিশালী মনে হয়েছে। বাঁশ ও টিনের আকৃতি ও সাইজ স্ট্রং। বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক গোছানো মনে হয়েছে। অনেক যত্নের ছাপও সুস্পষ্ট!

আশা করব, বাংলা একাডেমি লিটলম্যাগ চত্বরের ব্যাপারে আরও সচেতন ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে। প্রথমত কোনোভাবেই লিটলম্যাগ চত্বরকে মসজিদের পাশে দেয়া চলবে না। কারণ লিটলম্যাগ চত্বরে আমরা গানবাজনা করব। দ্বিতীয়ত মুক্তমঞ্চের পাশেই লিটলম্যাগ চত্বর হলে মূল মেলার সাথে বিচ্ছিন্নও মনে হবে না বরং সংযুক্ত মনে হবে। আশা করি বাংলা একাডেমি আমাদের পর্যবেক্ষণকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে।

মাত্র এক সপ্তাহ পরেই শুরু হচ্ছে প্রাণের অমর একুশে বইমেলা। সবাইকে অমর একুশে বইমেলার অগ্রিম শুভেচ্ছা। বই কিনুন। বইয়ের সঙ্গে থাকুন। একটি ভালো বই আপনার সারা জীবনের পরম বন্ধু।

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা

 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন