বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ , ২১ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

আজাদ রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নিউজজি ডেস্ক মে ১৬, ২০২৫, ১৬:১৯:০৫

144
  • সংগৃহীত

ঢাকা: ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত’, ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনই’, ‘মনেরও রঙে রাঙাব’, ‘ডোরা কাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়’, ‘এক বুক জ্বালা নিয়ে বন্ধু তুমি’সহ বহু গানের সুরকার ও সঙ্গীতপরিচালক আজাদ রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। আজাদ রহমান ২০২০ সালের ১৬ মে হৃদরোগে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সঙ্গীতপরিচালক আজাদ রহমান ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খেয়ালে স্নাতক সম্পন্ন করেন। চলচ্চিত্রের গানে তার পথচলা শুরু কলকাতার জনপ্রিয় বাংলা সিনেমা ‘মিস প্রিয়ংবদা’র সঙ্গীত পরিচালনা দিয়ে। এই সিনেমায় তার পরিচালনায় গান গেয়েছিলেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আরতি মুখোপাধ্যায়।

বাংলাদেশে তিনি প্রথম সঙ্গীত পরিচালনা করেন বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘আগন্তুক’ সিনেমায়। এরপর ‘বাদী থেকে বেগম’, ‘এপার ওপার’, ‘পাগলা রাজা’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘আমার সংসার’, ‘মায়ার সংসার’, ‘দস্যু বনহুর’, ‘ডুমুরের ফুল’, ‘মাসুদ রানা’সহ বহু সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন তিনি। তাকে বাংলা খেয়ালের প্রবর্তক বলা হয়। বাংলা একাডেমি থেকে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা সঙ্গীত বিষয়ক বই ‘বাংলা খেয়াল’।

আজাদ রহমানের সুরারোপিত ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ গানটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণাদায়ী অন্যতম ছিল। ১৯৭০ সালে গানটি রেকর্ড হয় করাচি ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসে। নয়ীম গহরের লেখা এই গানে ওই সময় কণ্ঠ দেন নজরুল সঙ্গীতের প্রখ্যাত শিল্পী ফিরোজা বেগম ও সাবিনা ইয়াসমীন।

তাদের সঙ্গে নেপথ্যে সমবেত কণ্ঠ দেন জিনাত রেহানা, নাসির হায়দার, আহমেদুল্লাহ সিদ্দিকী, আসাদুল হক ও লায়লা মোজাম্মেল। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর এই গান সাবিনা ইয়াসমীনের একক কণ্ঠে আবার ধারণ করা হয়।

বাংলা চলচ্চিত্রে তিনি রেখে গেছেন কালজয়ী কিছু গান। তেমনি কিছু গানের কথা উল্লেখ করা যায়। যাদুর বাঁশি চলচ্চিত্রের ‘আকাশ বিনা চাঁদ থাকিতে পারে না, জাদু বিনা বাঁশি বাজিতে পারে না’। আহমেদ জামান চৌধুরীর লেখা এই গানটি গেয়েছিলেন রুনা লায়লা।

চলচ্চিত্রে তার সুরারোপিত বেশ কিছু গানে তিনি নিজেই কণ্ঠ দিয়েছিলেন, এর মধ্যে দুটি গান এখনো সব ধরনের শ্রোতার প্রিয় গান। একটি ‘এপার ওপার’ চলচ্চিত্রের ‘ভালোবাসার মূল্য কত আমি কিছু জানি না, এ জীবন তুল্য কি তা আমি সে তো বুঝি না’। ফজল–এ–খোদার লেখা এই গান কানে বাজলেই চোখে ভেসে ওঠে অভিনেতা সোহেল রানার মুখটি।

অন্য আরেকটি গান ‘ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়, বাতাসের বেগ দেখে মেঘ চেনা যায়’। ‘দস্যু বনহুর’ চলচ্চিত্রের এই গান লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার।

সুরকার, কণ্ঠশিল্পীর পাশাপাশি তিনি গীত রচনাও করেছেন। তার লেখা ও সুর করা একটি গান ‘মনেরও রঙে রাঙাব, ফুলেরও ঘুম ভাঙাব’। ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রের এই গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন সেলিনা আজাদ (তার সহধর্মিণী)। গানটি কানে বাজলেই ভেসে ওঠে কবরীর মুখ।

এ ছাড়া যে গানগুলো সুরস্রষ্টা হিসেবে তাকে অমর করে রাখবে তেমন কয়েকটি গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘অনন্ত প্রেম’ চলচ্চিত্রের ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনি’, গেয়েছেন মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ও সাবিনা ইয়াসমীন। মোহাম্মদ আব্দুল জব্বারের গাওয়া ‘মাস্তান’ চলচ্চিত্রের গান ‘এক বুক জ্বালা নিয়ে বন্ধু তুমি কেন একা বয়ে বেড়াও’।

‘আগন্তুক’ চলচ্চিত্রের দুটি গান শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া আজিজুর রহমানের লেখা ‘অলিরা গুনগুন গুনগুন গুনগুনিয়ে’ এবং আবু হায়দার সাজদুর রহমানের লেখা ও মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের গাওয়া ‘বন্দী পাখির মতো মনটা কেঁদে মরে’। এ রকম আরও অসংখ্য কালজয়ী গান সৃষ্টি করে গেছেন তিনি।

আজাদ রহমানের শীর্ষ ১০ গান

১. জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো

২. ভালোবাসার মূল্য কত

৩. ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়

৪. মনেরও রঙে রাঙাব

৫. ও চোখে চোখ পড়েছে যখনি

৬. আকাশ বিনা চাঁদ

৭. এক বুক জ্বালা নিয়ে বন্ধু তুমি

৮. বন্দী পাখির মতো

৯. অলিরা গুনগুন গুনগুন গুনগুনিয়ে

১০. ওই মধু চাঁদ আর এই জোসনা

নিউজজি/পিএম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন